দু’দিন আগেই বাড়ি ভাঙচুর, নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করেছিলেন যে কাউন্সিলর, তার নামেই এ বার তোলাবাজি, গালিগালাজ ও খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ জমা পড়ল মেমারি থানায়। শহরের চেকপোস্ট এলাকার এক ব্যবসায়ী, শ্রীকান্ত মুর্মু মেমারির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বপন ঘোষালের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ দায়ের করেছেন। ওই ব্যবসায়ীর দাবি, নিজের ওয়ার্ডে একটি মেলা করার জন্য তাঁর কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা চাঁদা চেয়েছেন স্বপনবাবু। তিনি দেওয়া সম্ভব নয় জানালে তাঁকে অশ্লীল গালিগালাজ করা হয়, এমনকী খুনের হুমকি দেওয়া হয় বলেও তাঁর অভিযোগ।
গত কয়েকদিন ধরেই অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে সরগরম হয়ে রয়েছে মেমারি। পুরপ্রধান ও তাঁর বিরোধী কাউন্সিলরদের আকচা-আকচিতে চরমে উঠেছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও। সোমবার মেমারি পুরসভা ভবনের বোর্ড মিটিংয়ে কাউন্সিলর স্বপনবাবুর সঙ্গে পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ীর কথা কাটাকাটি হয়। কাউন্সিলর স্বপনবাবুর অভিযোগ ছিল, সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছ থেকে কোনও অনুমতি ছাড়াই ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বেআইনি নির্মাণকাজ চলছে। এমনকী পুরসভা যে অনুমতি দিয়েছে তারও বৈধতা নেই। পুরপ্রধান বোর্ড মিটিংয়ে ওই নির্মাণ নিয়ে কোনও কথাও বলেননি বলে কাউন্সিলরদের একাংশের দাবি।
পরে সেই রাতেই ওই কাউন্সিলরের বাড়িতে ১৫-২০ জন চড়াও হয় বলে অভিযোগ। তারা বাড়ির সমস্ত জানালার কাচ ভাঙচুর করে, গালিগালাজ করে, এমনকী যাওয়ার আগে খুনের হুমকি দেয় বলেও স্বপনবাবুর দাবি। পরে সকালে চারজনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন স্বপনবাবু। বুধবার সকালেও থানায় গিয়ে ওই ঘটনায় জড়িত পঞ্চম ব্যক্তির নাম জানান। তবে ওই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও অভিযুক্তদের কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। ভাঙচুরের বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি পুরপ্রধানও।
এরপরেই বুধবার সকালে ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ১ লক্ষ টাকার চাঁদা চাওয়ায় অভিযোগ দায়ের করেন ব্যবসায়ী শ্রীকান্ত মুর্মু। তাঁর অভিযোগ, মঙ্গলবার রাত সাড়ে নটা নাগাদ কাউন্সিলর স্বপনবাবু আরও দুই ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে আসেন। ওয়ার্ডে একটি মেলা করার জন্য এক লক্ষ টাকা দাবি করেন তিনি। কিন্তু তাঁর মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পক্ষে ওই টাকা দেওয়া সম্ভব হবে না জানানোয় স্বপনবাবু ও তাঁর সঙ্গীরা অশ্লীল গালিগালাজ করতে শুরু করেন। ওই ব্যবসায়ী একটি অস্থায়ী অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া বাড়ি তৈরি করছেন। চাঁদা না দিলে স্বপনবাবু সেই কাজ বন্ধ করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন বলে অভিযোগ। এমনকী প্রাণে মারার হুমকিও দেওয়া হয়। বর্ধমান গ্রামীন তৃণমূলের সভাপতি স্বপন দেবনাথের কাছেও জানিয়েছেন তাঁরা ওই অভিযোগ জানিয়েছেন বলে শ্রীকান্তবাবুর দাবি। তবে জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ বলেন, “এখনও আমি কোনও অভিযোগ পাাইনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখব।”
কাউন্সিলার স্বপনবাবুও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা তোলাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমার আট নম্বর ওয়ার্ডে একটি মেলা ৩০ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে। ১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। অত্যন্ত অনাড়ম্বর ভাবে ওই মেলা হচ্ছে। বাজেট মাত্র ২০ হাজার টাকা। স্থানীয় মানুষের চাঁদা নিয়ে সেটা করা হচ্ছে। তাহলে কেন আমি ওই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা চাঁদা চাইব?” তাঁর দাবি, “আসলে আমি পুরপ্রধানের বেশ কয়েকটি অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানিয়েছি। তাই আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ভয়ও দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে।” পুরপ্রধান অবশ্য কিছু বলতে চাননি।