দুষ্কৃতীদের বোমার ভয়েই উঠে গেল অবরোধ

কাটোয়ায় বালককে মোটরবাইকের ধাক্কা, প্রতিবাদীদের বন্দুক ঠেকিয়ে শাসানি

এক বালককে ধাক্কা মেরে চম্পট দিচ্ছিল তিন মোটরবাইক আরোহী। কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবক তার প্রতিবাদ করেন। প্রথমে যুবককে হুমকি দিয়ে মোটরবাইক আরোহীরা এলাকা ছাড়ে। কিছু ক্ষণ পরে ফিরে এসে তারা ওই যুবকটির বুকে ও তার ভাইয়ের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে দেয়, চড়-থাপ্পড়ও মারে বলে অভিযোগ। এর প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে কাটোয়া শহরের বাগানেপাড়ার মোড় ঘন্টাখানেক অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:১১
Share:

বাগানেপাড়ায় তখন চলছে অবরোধ। (ইনসেটে) প্রতিবাদী দুই ভাই। নিজস্ব চিত্র।

এক বালককে ধাক্কা মেরে চম্পট দিচ্ছিল তিন মোটরবাইক আরোহী। কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবক তার প্রতিবাদ করেন। প্রথমে যুবককে হুমকি দিয়ে মোটরবাইক আরোহীরা এলাকা ছাড়ে। কিছু ক্ষণ পরে ফিরে এসে তারা ওই যুবকটির বুকে ও তার ভাইয়ের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে দেয়, চড়-থাপ্পড়ও মারে বলে অভিযোগ। এর প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে কাটোয়া শহরের বাগানেপাড়ার মোড় ঘন্টাখানেক অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দরা।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ দিন বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ একটি বালক সাইকেলে বাগানেপাড়া মোড় থেকে টিএসি ফুটবল ময়দানের দিকে যাচ্ছিল। সেই সময়ে একটি মোটরবাইকে তিন জন জামাইপাড়ার দিকে আসে। মোটরবাইকের ধাক্কায় সাইকেল নিয়ে ছেলেটি ছিটকে পড়ে। কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় যুবক, পেশায় গৃহ শিক্ষক তরুণ শেখ ও তাঁর সম্পর্কিত ভাই, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সাহারিয়া হোসেন। তাঁরা এগিয়ে গিয়ে ছেলেটিকে রাস্তা থেকে তোলেন। মোটরবাইক আরোহীদের সতর্ক করে তাঁরা বলেন, “রাস্তার মোড়ে এ ভাবে ব্যাপক গতিতে কেউ বাইক চালায়? আস্তে চালাও।” তাঁদের অভিযোগ, এই কথা শুনে ওই যুবকেরা পাল্টা শাসিয়ে বলে, তারা কেশিয়ার এক দুষ্কৃতীর ছেলে। তখনকার মতো চলে গেলেও কিছু ক্ষণের মধ্যেই লাল-কালো রঙের মোটরবাইক নিয়ে ফিরে এসে তারা তরুণ ও তাঁর ভাইয়ের বুকে-মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দেয়, মারধরও করে বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে এলাকার লোক জড়ো হয়ে গেলে তারা চম্পট দেয়।

এর পরেই বাগানেপাড়া মোড়ে সাইকেল-ভ্যান-বাঁশ লাগিয়ে অবরোধ শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিক্ষোভ চলাকালীন সামসুদ্দিন শেখ, শাহজাহান শেখরা বলেন, “দুষ্কৃতীদের ভয়ে গোটা শহর চুপ করে থাকে। ওই দুষ্কৃতীরা স্বামী-স্ত্রীর অশান্তিতেও ঢুকে পড়ে, হুমকি দেয়। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের ফলে ওরা অল্প হলেও ভয় পাবে।” অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, প্রবীণ বাসিন্দা শাহদাত হোসেন বলেন, “কী পরিস্থিতি! কাটোয়ায় কি পুলিশ নেই?”

Advertisement

পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ ফেটে পড়েন। পুলিশকর্মীদের উদ্দেশে তাঁরা বলতে থাকেন, “আপনাদের জন্যই দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত। একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দুষ্কৃতীদের ধরা দূরস্থান, পুলিশ প্রকাশ্যে তাদের সঙ্গে গল্প করে।” তাঁদের অভিযোগ, এ রকম ঘটনা আকছার ঘটছে। জোরে মোটরবাইক চালানোর অথবা অন্য কোনও দুষ্কর্মের প্রতিবাদ করলেই জুটছে মারধর। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ অভিযোগ নিতে চায় না। পুলিশকে লক্ষ করে অবরোধকারীরা অভিযোগ করেন, “কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, আপনারা ভাল করেই জানেন। তাদের নামে একাধিক অভিযোগ থাকলেও হাত-পা গুটিয়ে বসে রয়েছেন!”

কাটোয়ায় দুষ্কৃতীরাজ নিয়ে সরব হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলিও। স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “প্রশাসনের শিথিলতার জন্যই দুষ্কৃতীদের এই বাড়বাড়ন্ত।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অচিন্ত্য মল্লিক মনে করেন, “শহর জুড়ে দু্ষ্কৃতীরাজ বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাও বাড়ছে।” তৃণমূলের অন্যতম জেলা সাধারণ সম্পাদক মণ্ডল আজিজুলও বলেন, “শহরের ভিতর এই ধরনের ঘটনা যাতে ফের না হয়, তার জন্য পুলিশকে খেয়াল রাখতে হবে।”

পুলিশ অবশ্য নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। জেলার এক পুলিশকর্তার দাবি, “শহরের ভিতরে দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে আমাদের কাছে নির্দিষ্ট অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নিতে আমাদের সুবিধা হয়।” বাস্তব হল, এলাকার মানুষ এতটাই সন্ত্রস্ত হয়ে আছেন যে বহু ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীদের নাম করে নির্দিষ্ট অভিযোগ তাঁরা জানাতে পারছেন না। এ দিন পথ অবরোধ করা হলেও দুষ্কৃতীরা বোমা মারতে পারে আশঙ্কা করে পরে তা তুলে নেওয়া হয়। অবরোধকারীদের দাবি, কেশিয়ার দুষ্কৃতীরা বোমা মারলে পুলিশই আগে পালাবে। দুষ্কৃতীদের হাতে প্রাণ দেওয়ার চেয়ে অবরোধ তুলে নেওয়া ভাল। কাটোয়া থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, পুলিশি টহল বাড়ানো হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন