কিসান মান্ডির পাহারায় খাড়া পুলিশ, তোলাবাজরা অধরাই

তোলাবাজেরা যাতে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের কিসান মান্ডি গড়ায় বাধা দিতে না পারে তার জন্য সকাল থেকে সন্ধে পাহারা দিচ্ছে পুলিশ। অথচ নির্মাণকারীর তরফে নির্দিষ্ট অভিযোগ সত্ত্বেও তৃণমূল আশ্রিত দুই তোলাবাজ এখনও অধরাই। ডিসেম্বরের গোড়া থেকেই বর্ধমানের কাটোয়ায় শ্রীখণ্ড গ্রামে কৃষি খামারে মান্ডি গড়ার কাজ শুরু করেছে রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতর।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০৩
Share:

পুলিশের প্রহরায় চলছে কিসান মান্ডি তৈরির কাজ। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

তোলাবাজেরা যাতে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের কিসান মান্ডি গড়ায় বাধা দিতে না পারে তার জন্য সকাল থেকে সন্ধে পাহারা দিচ্ছে পুলিশ। অথচ নির্মাণকারীর তরফে নির্দিষ্ট অভিযোগ সত্ত্বেও তৃণমূল আশ্রিত দুই তোলাবাজ এখনও অধরাই।

Advertisement

ডিসেম্বরের গোড়া থেকেই বর্ধমানের কাটোয়ায় শ্রীখণ্ড গ্রামে কৃষি খামারে মান্ডি গড়ার কাজ শুরু করেছে রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতর। কাজের বরাত পেয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরের এক ঠিকাদার সংস্থা। তাদের অভিযোগ, দিন তিনেক কাজ হতে না হতেই সংস্থার কর্তা কমল দাসকে ফোন করে প্রকল্পের মোট খরচের ১০ শতাংশ টাকা দাবি করে স্থানীয় দুষ্কৃতীরা। দু’টি দুষ্কৃতী দল আলাদা ভাবে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে নির্মাণ কর্মীদের হুমকিও দেয়। তার জেরে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

গত ৯ ডিসেম্বর কাটোয়া থানায় দু’জনের নামে তোলাবাজি ও হুমকির নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করে ঠিকাদার সংস্থা। পরের দিন থেকে পুলিশ পাহারায় কাজ শুরু হয়। সপ্তাহ তিনেক ধরে তা-ই চলছে। বুধবার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কাটোয়া থানার এক সাব-ইন্সপেক্টর, দু’জন সশস্ত্র পুলিশকর্মী ও তিন হোমগার্ড পাহারায় রয়েছেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, রোজ সকাল ৬টা নাগাদ গাড়ি নিয়ে এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে পুলিশ। সেখানেই ত্রিপল টাঙিয়ে রান্নাবান্নার ব্যবস্থা হয়েছে। বাসনপত্র রাখা থাকে কৃষি খামারের ঘরে। রেঁধে-বেড়ে-খেয়ে সন্ধ্যা ৬টায় পুলিশ আবার ফেরার পথ ধরে। তার পরেও ঘণ্টা তিনেক এলাকায় পাহারায় থাকেন সিভিল ভলান্টিয়ার্সরা।

Advertisement

এ দিন এলাকায় এসে ঠিকাদার সংস্থার কর্তা কমলবাবু বলেন, “প্রয়োজন রয়েছে বুঝেই প্রশাসন পাহারার ব্যবস্থা করেছে।” প্রত্যাশিত ভাবেই, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এলাকার মানুষ তথা বিরোধী নেতারা। কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রীর দলের লোকের হাত থেকে তাঁর স্বপ্নের প্রকল্পকে বাঁচাতে পুলিশ মোতায়েন করতে হচ্ছে। রাজ্যের কী হাল!” কাটোয়ার সিপিএম নেতা তথা দলের রাজ্য কমিটির সদস্য অচিন্ত্য মল্লিকের দাবি, “তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অভিযোগ পেয়েও পুলিশ তাদের ধরছে না। তার বদলে প্রকল্প পাহারা দিচ্ছে।”

পুলিশের যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, তা অস্বীকার করতে পারছেন না রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়ও। তাঁর বক্তব্য, “ওই প্রকল্পের ক্ষেত্রে কিছু লোক টাকাপয়সা চেয়েছিল বলে আমাদের কাছে খবর আসে। মুখ্যমন্ত্রীও সেই খবর পান। কাজে যাতে বাধা না আসে তার জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার সংস্থা যদি কারও নামে নির্দিষ্ট অভিযোগ করে থাকে, পুলিশ ব্যবস্থা নিক।” তবে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার দাবি, “অভিযুক্ত জঙ্গল শেখ ও সানু শেখ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা তাদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছি।” এসডিপিও (কাটোয়া) এবং কাটোয়া থানার আইসি-র নেতৃত্বে বেশ কয়েক বার তাদের ধরতে অভিযান হয়েছে দাবি করে তাঁর বক্তব্য, “ওদের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখে হানা দিলেও পুলিশ পৌঁছনোর আগেই তারা সরে পড়ছে।”

বিরোধীদের অভিযোগ, শাসকদলের ছত্রচ্ছায়ায় রয়েছে বলেই পুলিশ দুই অভিযুক্তকে ধরছে না। এলাকার কিছু তৃণমূল নেতাও এর মধ্যে জড়িয়ে। এ দিনই তৃণমূলের দুই নেতা প্রকল্প এলাকায় গিয়ে স্থানীয় লোকেদের কাজে নেওয়া এবং ‘আলোচনা’য় বসার প্রস্তাব দেন বলেও স্থানীয় সূত্রের খবর। অচিন্ত্যবাবু বলেন, “পুলিশ তো তৃণমূলের হাতে। তারা অভিযুক্তদের ধরবে কেন?” রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ অবশ্য দাবি করেন, “পুলিশকে আমরা ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তারা সাধ্য মতো চেষ্টা করছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন