চন্দ্রপুর সেন্ট্রাল স্কুল

খসছে চাঙড়, ক্লাস গাছতলায়

ঘরের দেওয়াল থেকে মাঝে মধ্যেই খসে পড়ে পলেস্তারা। এক পলক দেখে ধারণা হয়, এই বাড়িতে মানুষের পা পড়েনি অনেক দিন। কোনও পরিত্যক্ত বাড়ি নয়। এই পরিস্থিতি একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের। কাটোয়া চন্দ্রপুর সেন্ট্রাল স্কুলে ভবনের এই পরিস্থিতির জন্য লাটে উঠতে বসেছে পড়াশোনা। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বাড়ি সংস্কারের জন্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে আবেদন করা হলেও কোনও লাভ হয়নি।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৩৩
Share:

বাঁ দিকে, স্কুল ভবন। ডান দিকে, চলছে ক্লাস। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

ঘরের দেওয়াল থেকে মাঝে মধ্যেই খসে পড়ে পলেস্তারা। এক পলক দেখে ধারণা হয়, এই বাড়িতে মানুষের পা পড়েনি অনেক দিন।

Advertisement

কোনও পরিত্যক্ত বাড়ি নয়। এই পরিস্থিতি একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের। কাটোয়া চন্দ্রপুর সেন্ট্রাল স্কুলে ভবনের এই পরিস্থিতির জন্য লাটে উঠতে বসেছে পড়াশোনা।

স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বাড়ি সংস্কারের জন্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে আবেদন করা হলেও কোনও লাভ হয়নি। বর্তমানে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রতি দিন স্কুলে একটি করে ক্লাস বন্ধ রাখা হচ্ছে। পড়ুয়ার সংখ্যা যে দিন বেশি থাকছে, সে দিন ক্লাস হচ্ছে গাছের নীচে। স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক নীলরতন রায় বলেন, “স্কুলের ঘরগুলির অবস্থা খুবই খারাপ। যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।” তাঁর ক্ষোভ, “এই অবস্থায় অভিভাবকদের নিয়ে আলোচনা করে স্কুল তালাবন্ধ করে দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় দেখছি না।”

Advertisement

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে সর্বশিক্ষা মিশন দফতরের কর্তারা ঘরগুলির অবস্থা সরেজমিনে দেখে যান। ফিরে গিয়ে ঘরের অবস্থা ‘ভয়ঙ্কর’ বলে রিপোর্ট দেন তাঁরা। কিন্তু তার পরেও কাজ কিছু হয়নি। গত ২৭ অগস্ট স্কুল পরিচালন সমিতি বৈঠকে বসে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, স্কুলের ঘরগুলির যা অবস্থা, তাতে ক্লাস করানো প্রায় অসম্ভব। সিদ্ধান্ত হয়, এই অবস্থায় সপ্তাহে এক-একটি দিনে একটি করে ক্লাস ছুটি দিয়ে স্কুল চালাতে হবে। তবে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ছুটি দেওয়া যাবে না। প্রধান শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল বলেন, “ঘরগুলির অবস্থা খুব খারাপ। শিক্ষক-ছাত্র সকলেই ওই ঘরগুলিতে ক্লাস করতে ভয় পাচ্ছেন। তাই পরিচালন সমিতির সিদ্ধান্ত মেনে প্রতি দিন পর্যায়ক্রমে একটি করে ক্লাস বন্ধ রেখে স্কুল চালাতে হচ্ছে।” তিনি জানান, ঘরের অভাবে গাছতলায় যেমন ক্লাস হচ্ছে, তেমনি স্কুল লাগোয়া তফসিলি ছাত্রাবাসেও দিনের বেলায় ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা।

স্কুলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, বিপজ্জনক ঘরগুলির সামনে বাঁশের বেড়া আটকানো। ওই বাড়ির দোতলায় কোনও পড়ুয়া উঠতে না পারে তার জন্যই এই ব্যবস্থা নিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ঘরগুলির সিলিং থেকে প্রায় প্রতি দিনই খসে পড়ছে চাঙড়। বারান্দার অবস্থা বেহাল। স্কুলবাড়ির সামনে একটি গাছের নীচে ব্ল্যাক বোর্ড রেখে ক্লাস নিচ্ছেন এক শিক্ষক।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯১৭ সালে তৈরি এই স্কুলের বর্তমান পড়ূয়ার সংখ্যা ১৫২০ জন। বছর পাঁচেক আগে স্কুলের পুরনো বাড়িটির পাশেই তৈরি হয়েছে একটি নতুন বাড়ি। পুরনো ও নতুন বাড়ি মিলিয়ে রয়েছে মোট ২১টি ক্লাস ঘর। নতুন স্কুলবাড়ির ৫টি ঘরে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ক্লাসগুলি হয়। পুরনো স্কুলবাড়িতে রয়েছে ১৬টি ঘর। সবগুলিই বেহাল। তার মধ্যে ১২টি ঘরকে তালা বন্ধ থাকলেও বাকি ৪টি ঘরে ঝুঁকি নিয়েই চলছে ক্লাস। স্কুল শিক্ষক বিশ্বনাথ দাস বলেন, “অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়েও শান্তিতে থাকতে পারেন না।” নিমাই হাজরা কিংবা অনিমা পালদের মতো অভিভাবকদের আশঙ্কা, “স্কুলে পাঠানোর সময় ছেলেমেয়েদের বার বার বলে দিই, সাবধানে থাকিস। ভাঙা বাড়ির দিকে যাস না।”

ভাঙা স্কুল বাড়িতে ক্লাস করার সময় স্কুল পড়ুয়ারা প্রতি দিনই আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। স্কুল পড়ুয়া অরুণিমা পাল, সাধন মাঝিরা জানান, শিক্ষকদের পড়ানোর মাঝেই চাঙর খসে পড়ত। কয়েক মাস আগে ওই চাঙর পড়ে আমাদের এক জন সহপাঠী জখম হন। তার পরেই প্রধান শিক্ষককে চিঠি দিয়ে জানানো হয় ওই ঘরে ক্লাস করা যাবে না। স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্যদের দাবি, এর পর বাড়ি সংস্কারের জন্য সর্বশিক্ষা মিশন দফতরে এক কোটি টাকার প্রকল্প পাঠানো হয়। কিন্তু সর্বশিক্ষা মিশন কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, ওই পরিমাণ অর্থ অনুদান দেওয়া সম্ভব নয়।

সর্বশিক্ষা মিশনের বর্ধমান জেলার প্রকল্প আধিকারিক ভাস্কর পাল বলেন, “আমরা ওই স্কুলের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখছি। আমাদের পক্ষ থেকে যতটা করা সম্ভব, করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন