গ্যারাজে কীসের ব্যবসা, দাবি তদন্তের

জনবসতি পূর্ণ এলাকায় প্রশাসনিক নজরদারি এড়িয়ে কী ভাবে চলছিল বেআইনি গ্যারাজগ্যাস ছড়িয়ে দু’জনের মৃত্যুর পরে প্রশ্ন উঠল আসানসোলে। পুলিশ অবশ্য বুধবার ওই গ্যারাজের মালিককে গ্রেফতার করেছে। ওই গ্যারাজে কীসের ব্যবসা চলে, তা তদন্তের দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০১:৪৮
Share:

বাঁ দিকে, শুকিয়ে গিয়েছে পাতা। ডান দিকে, বুধবারও মুখে রুমাল চাপা দিচ্ছেন এলাকাবাসী। —নিজস্ব চিত্র।

জনবসতি পূর্ণ এলাকায় প্রশাসনিক নজরদারি এড়িয়ে কী ভাবে চলছিল বেআইনি গ্যারাজগ্যাস ছড়িয়ে দু’জনের মৃত্যুর পরে প্রশ্ন উঠল আসানসোলে। পুলিশ অবশ্য বুধবার ওই গ্যারাজের মালিককে গ্রেফতার করেছে। ওই গ্যারাজে কীসের ব্যবসা চলে, তা তদন্তের দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

মঙ্গলবার বিকেলে আসানসোলের কুমারপুর ও গোপালপুর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে ওই গ্যাস। চোখ জ্বালা, শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এলাকাবাসীর। মৃত্যু হয় দুই বৃদ্ধার। অসুস্থ হন আরও জনা চল্লিশ বাসিন্দা। খোঁজাখুঁজির পরে দেখা যায়, পাঁচিল ঘেরা গ্যারাজে ঝোপের মধ্যে পড়ে থাকা একটি বড় সিলিন্ডার থেকে কটূ গন্ধযুক্ত গ্যাস বেরোচ্ছে। সেটি উদ্ধার করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন জনা চারেক দমকলকর্মীও।

ঘটনার পরেই আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছেন অনেক বাসিন্দা। যাঁরা রয়েছেন, প্রশাসনের ভূমিকায় তাঁরা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, একে তো জনবহুল এলাকায় দিনের পর দিন ওই গ্যারাজ চলা সত্ত্বেও প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তার উপরে এই ঘটনার পরেও সতর্কতামূলক যা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল, তার ছিটেফোঁটা হয়নি। দুপুর পর্যন্ত কোনও মেডিক্যাল দল আসেনি বলে তাঁদের অভিযোগ। বিপর্যয় মোকাবিলা দলও ঘটনার পরপরই আসা উচিত ছিল বলে তাঁদের দাবি।

Advertisement

এ দিন সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গ্যারাজের গেটের সামনে অস্থায়ী শিবির করেছে পুলিশ। দুপুর ১২টা নাগাদ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে, প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়। তার আগে অবশ্য পৌঁছন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরাও। আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাসের নেতৃত্বে প্রশাসনের আধিকারিকেরা এলাকা পরিদর্শন করেন। আসানসোল জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্যাসে অসুস্থ হয়ে নতুন করে আর কেউ ভর্তি হননি। তবে হাসপাতাল ও নার্সিংহোম মিলিয়ে প্রায় চল্লিশ জন চিকিৎসাধীন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

আসানসোল বিবি কলেজের রসায়নের অধ্যাপক আশিসকুমার দত্ত জানান, মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাচক্রে তিনি ওই এলাকার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর কথায়, “আমার মনে হয়েছে, গ্যাসটি অ্যামোনিয়া হতে পারে।” তবে ওই গ্যাস এখনও শনাক্ত হয়নি বলে জানায় প্রশাসন। মহকুমাশাসক জানান, গ্যাসের নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “এলাকায় যথেষ্ট প্রতিষেধক ব্যবহার করা হয়েছে। আপাতত আতঙ্কের কিছু নেই। মহকুমাশাসককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।”

এ দিনই ওই গ্যারাজের মালিক নৌশাদ আলি খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত জানিয়েছে, সে ছাঁট লোহার ব্যবসা করে। সিলিন্ডারটি ছাঁট লোহা হিসেবে কিনেছিল। তাতে গ্যাস ছিল, তা জানত না বলে তার দাবি। আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “ধৃতের কাছ থেকে কিছু কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।” ওই গ্যারাজ মালিক ব্যবসা করার জন্য তাদের কাছে কোনও ছাড়পত্র নেয়নি বলে জানিয়েছেন আসানসোল পুরসভার সদ্য প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়। তা সত্ত্বেও এত দিন তার বিরুদ্ধে কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, পুরসভা ও প্রশাসনের কাছ থেকে তার কোনও সদুত্তর মেলেনি।

এ দিন সকালে দোষীর উপযুক্ত শাস্তি এবং মৃত ও অসুস্থদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে আসানসোল দক্ষিণ থানায় বিক্ষোভ দেখান বিজেপি নেতা-কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, ওই গ্যারাজ মালিক তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ। তাই পুলিশি তদন্তে গাফিলতি হতে পারে। দলের আসানসোল মণ্ডল কমিটি সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত চক্রবর্তীর অভিযোগ, “যে তৎপরতার সঙ্গে তদন্ত হওয়া উচিত ছিল, তা হচ্ছে না।” সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর বক্তব্য, “প্রশাসনের এই নিষ্ক্রিয়তা আমাদের ভাল ঠেকছে না।” কংগ্রেস নেত্রী ইন্দ্রাণী মিশ্রেরও দাবি, “মনে হচ্ছে, প্রশাসন দোষীকে আড়াল করতে চাইছে।”

গ্যারাজ মালিকের সঙ্গে দলের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, “ধৃতের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। ওই এলাকা থেকে তাঁর ব্যবসাও গুটিয়ে দেওয়া হোক।” তদন্তে কোনও গাফিলতির কথা মানতে চায়নি প্রশাসনও। আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক তথা পুরসভার প্রশাসক অমিত দত্ত বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন