উখড়া সারদা পল্লির মণ্ডপে ফুটে উঠেছে বিবর্তনের ছবি। নিজস্ব চিত্র।
এ বারের পুজোয় শিল্পাঞ্চলের দর্শনার্থীরা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, বিপর্যয় পরবর্তী কেদারনাথ দেখে হিমাচলপ্রদেশের গোবরার গণেশ মন্দির ঘুরে আসতে পারেন। নাগালের মধ্যেই রয়েছে আদিবাসী জীবনে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগও। শিল্পাঞ্চলে থিম পুজোর বৈচিত্রে অন্তত এমনটাই ভাবছেন উদ্যোক্তরা।
জামুড়িয়ার সাতগ্রাম সর্বজনীনের থিম নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯ বছরে পা দেওয়া বেলবাঁধ কোলিয়ারি সর্বজনীনের মণ্ডপে ঢুকলে দেখা মিলবে বন্যা বিধ্বস্ত কেদারনাথের। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা পতিত বাউড়ি বলেন, “থিমের সঙ্গে বিশেষ আকর্ষণ মণ্ডপের রাস্তায় ছ’টি তোরণ।” কয়েক কিলোমিটার দূরে কেন্দা ফুটবল মাঠ সর্বজনীনের মণ্ডপে রয়েছে হিমাচলপ্রদেশের গোবরাগ্রামের গণেশ মন্দির আদল। এই পুজোর সম্পাদক খোকন মণ্ডল জানান, এখানে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয় সাবেকিয়ানায়। কিছু দূরের পরাশিয়া কোলিয়ারি সর্বজনীনের মণ্ডপে ঢুকতেই দেখা মিলল সম্পাদক রামেশ্বর ভকতের। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, এ বারে তাঁদের থিম দক্ষিণ ভারতের মণ্ডপ। প্রতিমা নির্মাণ করেছেন কুমোরটুলির শিল্পীরা। ৫১ বছরের ইস্ট কেন্দা কোলিয়ারির পুজোয় এ বার উঠে এসেছে গ্রামীণ জীবন। সঙ্গে থাকছে বিভিন্ন সচেতনতা মূলক প্রচার। জামুড়িয়া বাজারের ৬৯ বছরের শ্রী দুর্গা সেবাসমিতির পুজো প্রাঙ্গনের নজর আবার রাজস্থানের দিকে।
থিম পুজোর দৌড়ে পিছিয়ে নেই পাণ্ডবেশ্বরও। পাণ্ডবেশ্বর বাজারের বিধান স্মৃতি পাঠাগার পরিচালিত পুজোয় এ বারের থিম বৌদ্ধ প্যাগোডা। জীবন ভাস্করের তৈরি প্রতিমা সবার নজর কাড়বে বলে দাবি পুজোর সঙ্গে যুক্ত নন্তু চট্টোপাধ্যায়দের। ইসকন যেতে চাইলে হাতের কাছেই রয়েছে পাণ্ডবেশ্বর কোলিয়ারির পুজো মণ্ডপ। তবে প্রাচীনত্বের দিক থেকে সর্বজনীন পুজোর মধ্যে ডালুরবাঁধ কোলিয়ারিই সব থেকে এগিয়ে বলে দাবি করলেন স্থানীয় বাসিন্দা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন “বেঙ্গল কোলের আমলে খনি কর্তারা মিলে এই পুজোটি শুরু করেন।” খোট্টাডিহি কোলিয়ারি, কলেজপাড়া সর্বজনীনের পুজোগুলিও দর্শনার্থীদের নজর কাড়বে বলে উদ্যোক্তাদের আশা।
দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে অন্ডালের পশ্চিমপল্লি সর্বজনীন। খাস কাজোড়া এবং অগ্রদূত আয়োজিত অন্ডাল মোড় সর্বজনীনের পুজোর থিম কাল্পনিক মন্দির। জামবাদ বেনিয়াডিহি কোলিয়ারি পুজো মণ্ডপ অনুসরণ করেছে উৎকল রীতিতে তৈরি একটি গম্বুজাকৃতি মন্দিরকে। প্রাচীন মন্দিরের আদলে মণ্ডপসজ্জা করেছে কাজোড়া মোড় লছিপুর কোলিয়ারির সর্বজনীন পুজো।
এক টুকরো আদিবাসী জীবনের খোঁজ মিলল উখড়া সারদাপল্লি মেইনরোডের পুজোয়। পুজো কমিটির সম্পাদক বাপি মুখোপাধ্যায় বলেন, “আদিবাসীদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসের দেখা মিলবে মণ্ডপে।” সিদুলি কোলিয়ারি সর্বজনীনের মণ্ডপ ভাবনায় উঠে এসেছে হরিদ্বারের মন্দির। জাতীয় সঙ্ঘ আয়োজিত অন্ডাল নিউ ট্রাফিক কলোনি সর্বজনীন দুর্গাপুজোর মণ্ডপে উঠে এসেছে দক্ষিণ বারতের মন্দির।
১৪ বছরের পুরনো রানিগঞ্জের রানিসায়র মোড়ের পুজো মণ্ডপ গ্রামীণ সমাজকে তুলে ধরতে হাটের মডেল প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছে। এই পুজোর সম্পাদক প্রকাশ মেহেতাবের কথায়, “ঐতিহ্যকে সম্মান জানাতেই এই থিম নির্বাচন করা হয়েছে।” শিশুবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজোয় অনুকরণ করা হয়েছে দক্ষিণ ভারতের একটি শিবালিক মন্দিরকে। সিহারশোল সর্বজনীন দুর্গাপুজো মণ্ডপে অনুকরণ করা হয়েছে একটি প্রাচীন মন্দিরকে। নজর কাড়ল ৭৬ বছরের পুরনো স্কুলপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপুজোটিও।