গ্রামে থাকব না, সূর্যকে বললেন নিহতের স্বামী

বাড়িতে দুষ্কৃতীদের হাতে মাকে খুন হতে দেখেছে সে। তার পরেও বন্ধ হয়নি সন্ত্রাস। হুমকি, ভয় দেখানো চলছেই। যার জেরে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেও স্কুলে মার্কশিট আনতে যাওয়ার সাহস হয়নি তার। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে সামনে পেয়ে এমন অভিযোগই জানাল কেতুগ্রামের মহুলা গ্রামের নিহত প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যা আসমিরা বেগমের মেয়ে নাহিদা সুলতানা।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

কেতুগ্রাম শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৪ ০০:৪৪
Share:

গ্রামের খন্দপথ পেরিয়ে ঢুকছে সূর্যকান্তের গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

বাড়িতে দুষ্কৃতীদের হাতে মাকে খুন হতে দেখেছে সে। তার পরেও বন্ধ হয়নি সন্ত্রাস। হুমকি, ভয় দেখানো চলছেই। যার জেরে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেও স্কুলে মার্কশিট আনতে যাওয়ার সাহস হয়নি তার। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে সামনে পেয়ে এমন অভিযোগই জানাল কেতুগ্রামের মহুলা গ্রামের নিহত প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যা আসমিরা বেগমের মেয়ে নাহিদা সুলতানা।

Advertisement

রবিবার মহুলা গ্রামে আসেন সিপিএম নেতারা। তাঁদের কাছে এ বার আনখোনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ নাহিদা বলে, “তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আমাদের ভয় দেখাচ্ছে। বাড়ির বাইরে বের হলে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। ওদের ভয়ে আমি স্কুল থেকে মার্কশিটটা পর্যন্ত আনতে যেতে পারছি না।”

২১ মে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ হামলা হয় সিপিএম নেত্রী আসমিরার বাড়িতে। গ্রামের ১৩ নম্বর বুথে সিপিএম বেশি ভোট পাওয়ায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের। এ দিন নাহিদা ঘটনার বিবরণ দেয় সূর্যকান্তবাবুর কাছে। তাঁর অভিযোগ, “তখন রাত ৯টা। আমি ভাইকে পড়াচ্ছিলাম। মা ভাত বাড়ছিল। সেই সময়ে ১০-১২ জন তৃণমূলের গুন্ডা আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। পাশের বাড়ির দু’জন রুখে দাঁড়াতে এসে আহত হয়। এর পরেই মায়ের বুকে ওরা ধারালো অস্ত্র বসিয়ে দেয়।”

Advertisement

দুপুর ১টা নাগাদ সূর্যকান্তবাবু মহুলা গ্রামে পৌঁছন। ছিলেন বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোম, দলের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদার, রাজ্য কমিটির সদস্য অচিন্ত্য মল্লিক প্রমুখ। তাঁরা নিহতের বাড়ির কাছে পৌঁছতেই গ্রামবাসীরা ঘিরে ধরে আসমিরা-খুনে অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানাতে থাকেন। কয়েক জন অভিযোগ করেন, এখনও বেশ কয়েক জন অভিযুক্ত প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের ভয়ে তাঁরা বাসস্টপে যেতে পারছেন না। পুলিশ চুপ করে রয়েছে। নজরুল শেখ নামে এক গ্রামবাসী সিপিএম নেতাদের কাছে অভিযোগ করেন, “আপনারা চলে গেলে আমাদের কে বাঁচাবে? আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।” নিহতের স্বামী এনায়েৎ করিম বলেন, “আমি আর এই গ্রামে থাকব না। মেয়েকে কাটোয়া কলেজে ভর্তি করে সেখানেই থাকব। ছেলেকে মুর্শিদাবাদে সালারের স্কুলের হস্টেলে রাখব।”

সূর্যকান্তবাবু গ্রামবাসীদের বলেন, “আক্রমণ করতে এলে এখানকার মানুষ আর চুপচাপ বসে থাকবেন না। আপনারা এক সঙ্গে থাকুন। কেউ আক্রমণ করতে পারবে না।” তিনি আরও বলেন, “আক্রমণ করতে এলে মানুষকে নিয়ে তার মোকাবিলা করব। আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষা করার অধিকার আমাদের রয়েছে।” প্রশাসনের কাছে গ্রামে পুলিশ ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা ও পুরো বিষয়টি নিয়ে রাজ্যপাল থেকে স্বরাস্ট্র সচিবকে চিঠি লেখার কথাও জানান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। গ্রাম ছাড়ার আগে মহুলার শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে পুলিশ ক্যাম্পে ইন-চার্জ প্রণব বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেন সূর্যকান্তবাবু। তিনি বলেন, “নাহিদা-সহ গ্রামের অন্য ছাত্রছাত্রীরা যাতে নিশ্চিন্তে স্কুলে গিয়ে মার্কশিট আনতে পারে তার ব্যবস্থা করা দরকার।” প্রণববাবু এ ব্যাপারে আশ্বাস দেন।

সিপিএম নেতাদের গ্রামে আসার সময়ে কোনও গোলমাল এড়াতে এ দিন যাত্রাপথ পুলিশ দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়। তৃণমূলের কোনও কর্মী-সমর্থককে রাস্তায় দেখলে পুলিশ চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এমনকী, কেতুগ্রামের বিরুরি গ্রামে রাস্তার উপরে তৃণমূলের অফিসও বন্ধ করে দেয় পুলিশ। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের ব্লক নেতৃত্বও শনিবার দুপুরে বৈঠক করে কর্মী-সমর্থকদের রাস্তায় না বেরোনোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও গ্রামবাসী বা নিহতের পরিবারকে কোনও হুমকির কথা তৃণমূল নেতারা মানেননি।

পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কথা অস্বীকার করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) প্রশান্ত চৌধুরী। তিনি বলেন, “এখনও পর্যন্ত পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করেছে। বাকিদের ধরতে নিয়মিত তল্লাশি চালাচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন