ঘাসফুল গ্রামেই, শহরের দখল নিচ্ছে পদ্ম

ঘাসফুলের সাজানো বাগানে উঁকি দিল পদ্ম। সেই পদ্মের ঝাঁকুনিতে আবার কুপোকাত কাস্তে-হাতুড়ি। জাতীয় স্তরের কোনও নেতা-নেত্রী তো দূর, রাজ্য স্তরের কাউকেও দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারে দেখা যায়নি।

Advertisement

রানা সেনগুপ্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০২:০৮
Share:

জয়ের পরে। মিষ্টিমুখ করছেন তৃণমূলের মমতাজ সঙ্ঘমিতা। সবুজ আবিরে মেতেছেন সুনীল মণ্ডল।—নিজস্ব চিত্র।

ঘাসফুলের সাজানো বাগানে উঁকি দিল পদ্ম।

Advertisement

সেই পদ্মের ঝাঁকুনিতে আবার কুপোকাত কাস্তে-হাতুড়ি।

জাতীয় স্তরের কোনও নেতা-নেত্রী তো দূর, রাজ্য স্তরের কাউকেও দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারে দেখা যায়নি। তবু বর্ধমান পূর্ব ও বর্ধমান-দুর্গাপুরদুই কেন্দ্রে গত বারের থেকে যথাক্রমে প্রায় আড়াই গুণ ও প্রায় সাড়ে চার গুণ বেশি ভোট কুড়োল বিজেপি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী পুরসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে গোটা শহরাঞ্চল বিজেপির দখলে চলে যেতে পারে বলে সব শিবিরেরই আশঙ্কা। লোকসভা এলাকার কিছু শহরাঞ্চলে বামেদের থেকেও বেশি ভোট পেয়েছে তারা। বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী সাইদুল হককে ১ লক্ষ ৫ হাজার ৩৬৫ ভোটে হারিয়েছেন তৃণমূলের মমতাজ সঙ্ঘমিতা। আর বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী পেয়েছেন ২,৩৪,৪৫৮ ভোট। বিজেপি-র এই উত্থান যে তাঁদের পতনের বড় কারণ হয়েছে, মেনে নিচ্ছেন সিপিএম প্রার্থী সাইদুল হক।

Advertisement

বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের অন্তর্গত বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা এলাকাটি আদতে বর্ধমান পুর এলাকা। এই পুরসভায় মাসকয়েক আগেই ৩৫-০ ফলে জিতেছে তৃণমূল। সেই পরাজয়ের পরে এ বার সিপিএম নেতারা মরিয়া ছিলেন, অন্তত এক হাজার ভোটে এগিয়ে থাকতে। সেক্ষেত্রে তাঁরা প্রমাণ করতে পারতেন, পুরভোটের সকালে সন্ত্রাসের কারণ দেখিয়ে প্রার্থী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না। কিন্তু এগিয়ে থাকা তো দূর, এই এলাকায় দ্বিতীয় স্থানেও নেই বামেরা। সেখানে তৃণমূলের ৮৫২৩৫ ভোটের পরে রয়েছে বিজেপি-র ৪৭৭০৬ ভোট। বাম প্রার্থী সাইদুল পেয়েছেন ৪১৮৪৬ ভোট। একই পরিস্থিতি দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা এলাকাতেও। সেখানে মমতাজ সঙ্ঘমিতার (৬৩৮১৮ ভোট) ও দেবশ্রী চৌধুরীর (৫৫৫৩১) পরে রয়েছেন সাইদুল হক (৫৫৪৩৪)। সাইদুল বলছেন, “আসলে মোদী হাওয়া এখানেও ছিল। বিশেষত শহরাঞ্চলে। বর্ধমান দক্ষিণ ও দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রে এক সময়ে আমাদের যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদেরই একাংশ এ বার বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে এমনই তো মনে হচ্ছে।”

বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে গত বারও ‘ফ্যাক্টর’ হয়েছিল বিজেপি। সে বার বিজেপি প্রার্থী প্রায় ৭১ হাজার ভোট পাওয়ার পরে সিপিএম জিতেছিল প্রায় ৫৯ হাজার ভোটে। এ বার সেখানে বিজেপি প্রার্থী সন্তোষ রায় পেয়েছেন ১ লক্ষ ৭০ হাজার ৮২৮ ভোট। তৃণমূল প্রার্থী সুনীলকুমার মণ্ডল প্রায় ১ লক্ষ ১৪ হাজার ভোটে হারিয়েছেন সিপিএমের ঈশ্বরচন্দ্র দাসকে। এই কেন্দ্রে কংগ্রেস পেয়েছে ৬৮৮৮৪ ভোট। ঈশ্বরবাবুর দাবি, “শুধু বিজেপি নয়, কংগ্রেসও আমাদের কিছু ভোট কেটেছে। তা না হলে এখানে আমাদেরই জেতার কথা।”

এই দুই কেন্দ্রের মধ্যে বর্ধমান পূর্বে বিজেপি-র কিছুটা সংগঠন থাকলেও, বর্ধমান-দুর্গাপুরে তা বেশ দুর্বল। তা হলে এত ভোট তাঁরা পেলেন কী করে? জেলা বিজেপি নেতাদের দাবি, রাজ্য নেতারা ভাবতেও পারেননি এখানে মানুষ বিজেপি-র প্রতি এতটা আস্থা দেখাবেন। জাতীয় স্তরের হেভিওয়েট নেতাদের এনে এই দুই কেন্দ্রে প্রচার করা হলে মোদী হাওয়া আসানসোলের মতো এখানেও সুনামি হয়ে দেখা দিত বলে তাঁদের দাবি।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ স্বপন দেবনাথ অবশ্য মনে করেন, বিজেপি আসলে সিপিএমের ভোট কেটেছে। মানুষ সিপিএমের উপরে আস্থা হারিয়ে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। তবে তাতে তৃণমূলের ক্ষতি হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি। কংগ্রসের জেলা নেতা কাশীনাথ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “মোদী হাওয়ায় কংগ্রেস এই দুই কেন্দ্রেই বিপাকে পড়েছে। না হলে আমাদের ফল এত খারাপ হতো না।”

বিজেপি-র অভিযোগ, ভোটে বুথ দখল করে ছাপ্পা না হলে দু’টি কেন্দ্রে তাদের ভোট আরও বাড়ত। বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী বলেন, “এই রাজ্য তথা জেলায় নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হল। এত দিন বাম ও বামবিরোধী দলের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হতো। সেই মানচিত্রে বিজেপি থাবা বসিয়েছে। সব ঠিক থাকলে ২০১৬ সালে রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হতে পারে বিজেপি-ই।”

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের দাবি, “বর্ধমান পূর্বে ১৪১টি ও বর্ধমান-দুর্গাপুরে ১৫৬টি বুথ দখল করে ছাপ্পার ঘটনা সত্ত্বেও আশা করেছিলাম, তৃণমূলের একটি বড় অংশের ভোট বিজেপি-র দিকে যাবে। তা হয়নি। উল্টে, আমাদের একটা অংশের ভোট বিজেপিতে গিয়েছে। তাই জেলায় ফল এত খারাপ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন