চুক্তিপত্র তৈরি, দ্রুত জমি কিনতে নামছে এনটিপিসি

কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার জন্য চাষিদের থেকে সরাসরি জমি কেনার পথে আরও এক ধাপ এগোল এনটিপিসি। বুধবার কেন্দ্রীয় সংস্থাটির তরফে চাষিদের কাছে চুক্তিপত্র পেশ করা হয়। সব ঠিকঠাক চললে আগামী সোমবার থেকে চাষিদের তা সই করে জমা দেওয়ার কথা। বর্ধমানের কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার জন্য বাম আমলেই প্রায় সাড়ে পাঁচশো একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৩
Share:

সেই চুক্তিপত্র। —নিজস্ব চিত্র

কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার জন্য চাষিদের থেকে সরাসরি জমি কেনার পথে আরও এক ধাপ এগোল এনটিপিসি। বুধবার কেন্দ্রীয় সংস্থাটির তরফে চাষিদের কাছে চুক্তিপত্র পেশ করা হয়। সব ঠিকঠাক চললে আগামী সোমবার থেকে চাষিদের তা সই করে জমা দেওয়ার কথা।

Advertisement

বর্ধমানের কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার জন্য বাম আমলেই প্রায় সাড়ে পাঁচশো একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল ক্ষমতায় এসেই জানিয়ে দেয়, এ রাজ্যে শিল্প করতে হলে শিল্প সংস্থাকেই সরাসরি জমি কিনতে হবে। রাজ্য সরকার আর অধিগ্রহণ করবে না। এখনও পর্যন্ত দেশের কোথাও এনটিপিসি নিজে জমি কিনে প্রকল্প করেনি। তা সত্ত্বেও কাটোয়ায় তারা প্রায় দু’শো একর জমি কেনার সিদ্ধান্ত নেয়।

কয়েক মাস আগেই প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত জমির মালিকদের সিংহভাগ এনটিপিসি-কে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা জমি দিতে সম্মত। এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ স্থানীয় চুড়পুনি গ্রামে একটি বাড়িতে ৫০ জন চাষিকে নিয়ে বৈঠক করে চুক্তিপত্র দেখান এনটিপিসি কর্তারা। সেখানেই ঠিক হয়, সোমবার থেকে চাষিদের চুক্তিপত্র দেওয়া হবে। তবে, ইংরেজির বদলে বাংলায় চুক্তিপত্র দিতে চাষিরা তাঁদের অনুরোধ করেন। এনটিপিসি-র আইনজীবী পরাগ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সোমবার বাংলাতেই চুক্তিপত্র দেওয়া হবে।”

Advertisement

রাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী, ২৪ একরের বেশি জমি কিনতে হলে ভূমি ও ভূমি সংস্কার আইনের ‘১৪ ওয়াই’ ধারায় সরকারের কাছ থেকে আগাম অনুমোদন নিতে হয়। সেই অনুমোদন দেওয়ার জন্য বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন গত ১৬ অক্টোবর নবান্নয় চিঠি (১৪ওয়াই - ১৫ (পার্ট)/ ৮৩৬/ এলএম/ ২০১৪) দিয়েছেন। এনটিপিসি কর্তাদের ধারণা, পুজোর ছুটি শেষের পরে নবান্ন থেকে অনুমোদন আসতে অন্তত মাসখানেক লাগবে। তত দিনে চাষিদের কাছ থেকে তাঁরা সই করা চুক্তিপত্র পেয়ে যাবেন। ফলে, অনুমোদন আসা মাত্র চেক বিলি শুরু করার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা থাকবে না।

এর আগে রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, এনটিপিসি-কে তারাও একশো একর জমি দিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে কতটা জমি কোন শর্তে এনটিপিসি-কে ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে, তা-ও জেলাশাসকের চিঠিতে পরিষ্কার। চিঠির সঙ্গে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী, ১৭.৭৬ একর খাসজমি এবং কৃষি দফতরের হাতে থাকা ২৭.৭৩ একর দুই মিলিয়ে মোট ৪৫.৪৯ একর জমি দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে এনটিপিসি-কে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ৩১.৩৮ একর সেচখাল, খালের দু’পাশের ১৯.০৬ একর জমি এবং স্থানীয় পঞ্চায়েতের ৪.৭৪ একর রাস্তা তিন মিলিয়ে ৫৫.১৮ একর জমির নীচ দিয়ে জল আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবে এনটিপিসি। কিন্তু কোনও ভাবেই জমির চরিত্র বদল করতে পারবে না।

আপাতত এনটিপিসি-র লক্ষ্য, যত দ্রুত সম্ভব চাষিদের থেকে জমি কিনে নির্মাণকাজ শুরু করানো। যে চুক্তিপত্র তৈরি হয়েছে তাতে কার কতটা জমি, মূল দর, তার সঙ্গে ১২ শতাংশ হারে সুদ ও ৩০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ এবং জমি সংক্রান্ত সমস্ত নথির প্রতিলিপি থাকছে। তাতে যাঁর সই থাকবে, তাঁর নামেই টাকা আসবে। কিন্তু চুক্তিপত্র সই হওয়ার এক বছরের মধ্যে চাষিরা জমি হস্তান্তর করতে বা বন্ধক রাখতে পারবেন না। অর্থাৎ, বছর ঘোরার আগেই দফায়-দফায় চেক দিয়ে প্রায় সব জমি কিনে নেওয়া যাবে বলে এনটিপিসি কর্তারা প্রায় নিশ্চিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন