দুর্গাপুরের এনার্জি পার্ক

চালুর প্রস্তাব নেই, অন্য প্রকল্পের ভাবনা পার্কে

দুর্গাপুরের এনার্জি পার্ক খোলার সম্ভাবনা আপাতত বিশ বাঁও জলে। আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) জমিতে তৈরি হওয়া পার্কটি পাঁচ বছর আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তথা শহরের তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এনার্জি পার্ক এক সময় শহরের গর্ব ছিল। নতুন করে পার্ক খোলার ব্যাপারে কোনও অগ্রগতি হয়নি। ওই জায়গা সদর্থক কী উপায়ে কাজে লাগানো যায়, সে ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩৩
Share:

ঝোপ-জঙ্গলে ভরেছে শহরের এক সময়ের দর্শনীয় স্থান। —নিজস্ব চিত্র।

দুর্গাপুরের এনার্জি পার্ক খোলার সম্ভাবনা আপাতত বিশ বাঁও জলে। আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) জমিতে তৈরি হওয়া পার্কটি পাঁচ বছর আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তথা শহরের তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এনার্জি পার্ক এক সময় শহরের গর্ব ছিল। নতুন করে পার্ক খোলার ব্যাপারে কোনও অগ্রগতি হয়নি। ওই জায়গা সদর্থক কী উপায়ে কাজে লাগানো যায়, সে ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।”

Advertisement

রাজ্যের অচিরাচরিত শক্তি দফতর (ওয়েবরেডা) দুর্গাপুরে ২০০৩ সালে পার্কটি চালু করে। ওয়েবরেডার প্রাক্তন ডিরেক্টর তথা কেন্দ্রীয় সরকারের এনার্জি পার্ক কমিটির চেয়ারম্যান শক্তিপদ গণচৌধুরী পার্কটি গড়তে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় মোট ৯টি পার্ক গড়ার জন্য অর্থ বরাদ্দ করে কেন্দ্রীয় সরকার। শক্তিপদবাবু কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাব তুলে ধরেন দুর্গাপুর পুরসভার কাছে। পুরসভা সম্মতি দেয়। পার্ক গড়তে কেন্দ্রীয় সরকার দিয়েছিল ১ কোটি টাকা। রাজ্য খরচ করে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। জাতীয় সড়কের ডিভিসি মোড় থেকে কিলোমিটার খানেকের মধ্যে ‘ভবানী পাঠকের গুহা’ নামে পরিচিত টিলা লাগোয়া এডিডিএ-র জমিতে গড়ে ওঠে পার্কটি।

শক্তি ও অচিরাচরিত শক্তি সংক্রান্ত নানা মডেল রাখা হয়েছিল পার্কে। লক্ষ্য ছিল শক্তি সম্পর্কে শিক্ষার্থী ও উৎসাহীদের মধ্যে সঠিক ধারণা গড়ে তোলা। সৌরশক্তি, জলবিদ্যুৎ, স্থিরতড়িৎ সংক্রান্ত বিভিন্ন মডেলে হাতে-কলমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা দেখানোর ব্যবস্থা ছিল। পার্ক চালু করার পরে তা ওয়েবরেডা চুক্তির ভিত্তিতে তুলে দেয় একটি বেসরকারি সংস্থার হাতে। ওই সংস্থা পার্ক চালু রাখা, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল। উদ্বৃত্ত অর্থ সংস্থাটি তুলে দিত ওয়েবরেডার হাতে। জেলা থেকে তো বটেই, আশপাশের জেলাগুলি থেকেও অনেকে আসতেন এই পার্কে। ছুটির দিনে স্কুলবাসে চড়ে আসত পড়ুয়ারা। জমজমাট ভিড় লেগে থাকত ছুটির দিনগুলিতে।

Advertisement

বছর চারেক পরেই পার্কের রমরমা কমতে থাকে। আগ্রহীদের মতে, এই ধরনের পার্কের নিয়মিত উন্নতিকরণ প্রয়োজন। নতুন নতুন মডেল গড়ে তোলা দরকার। তা না হলে এক বার কেউ ঘুরে গেলে ফের আসার ব্যাপারে উৎসাহ পান না। কিন্তু এখানে তেমন কোনও উন্নতিকরণ না হওয়ায় দর্শক সংখ্যা কমতে থাকে। ফলে, টিকিট বিক্রি বাবদ পার্কের আয় কমে যায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থাটিও হাল ছেড়ে দেয়। ২০০৮ সাল নাগাদ পার্কটি চালু রাখার দায়িত্ব পুরসভার হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে ওয়েবরেডার গভর্নিং বডি প্রস্তাব নেয়। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। ২০০৯ সালের শেষ দিকে পাকাপাকি বন্ধ হয়ে যায় পার্কটি। ধীরে-ধীরে আগাছায় ভরে যায় পার্ক। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রোদে-জলে নষ্ট হয়ে যায় মডেলগুলি। ২০১৩ সালে এক বার আগুন লাগে। দমকলের একাধিক ইঞ্জিন গিয়ে আগুন আয়ত্তে আনে।

এডিডিএ-র প্রাক্তন বোর্ড সদস্য তথা দুর্গাপুরের প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী বলেন, “পড়ুয়ারা দল বেঁধে এসে এক সময় এই পার্কে বিজ্ঞানের নানা মডেল হাতেকলমে পরীক্ষা করার সুযোগ পেত। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।” পার্কটি খোলার ব্যাপারে কোনও সম্ভাবনার কথা শোনা যায়নি এডিডিএ-র তরফে। এডিডিএ-র চেয়ারম্যান নিখিলবাবু জানান, দীর্ঘদিন এ ভাবে জায়গাটি ফেলে রাখলে অসামাজিক কাজকর্মের আখড়া হয়ে দাঁড়াবে। ইতিমধ্যে স্থানীয় বাসিন্দারা সেই আশঙ্কার কথা লিখিত ভাবে জানিয়ে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। নিখিলবাবু বলেন, “পার্ক খোলার ব্যাপারে কোনও সংস্থা বা অন্য কারও কাছ থেকে কোনও প্রস্তাব আসেনি। তবে জায়গাটি দীর্ঘদিন ফেলে রাখা যাবে না। এমন কিছু করতে হবে যা দুর্গাপুরবাসীর কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন