ছাত্র পেটানোয় অভিযুক্ত তৃণমূলের শিক্ষাবন্ধুরা

আন্দোলনরত পড়ুয়াদের উপরে চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূলপন্থী শিক্ষাবন্ধু সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে। দু’জন ছাত্র আহত হয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ছাত্রদের তরফে বর্ধমান থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নিয়ামকের দফতরের সামনে ঘটনাটি ঘটে। হামলার পরে দোষীদের শাস্তি চেয়ে প্রায় চার ঘণ্টা পরীক্ষা নিয়ামকের দফতর ঘেরাও করে রাখেন পড়ুয়ারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৫ ০১:১৬
Share:

শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে চলছে ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি। ইনসেটে, মারধরে আহত এক ছাত্র। নিজস্ব চিত্র।

আন্দোলনরত পড়ুয়াদের উপরে চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূলপন্থী শিক্ষাবন্ধু সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে। দু’জন ছাত্র আহত হয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ছাত্রদের তরফে বর্ধমান থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নিয়ামকের দফতরের সামনে ঘটনাটি ঘটে। হামলার পরে দোষীদের শাস্তি চেয়ে প্রায় চার ঘণ্টা পরীক্ষা নিয়ামকের দফতর ঘেরাও করে রাখেন পড়ুয়ারা। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরে ঘেরাও তোলা হয়। উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার ঘটনার নিন্দা করে বলেন, “বিষয়টি দুঃখজনক। প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করছি।”
বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজের এক দল ছাত্রছাত্রী দীর্ঘদিন ধরে ‘হোক প্রতিবাদ’ নামে আন্দোলন করছেন। স্নাতক স্তরের তৃতীয় বর্ষের রিভিউয়ের ফল বের করা ও অসম্পূর্ণ ফল ঠিক করে তালিকা বের করার দাবিতে এ দিনও আন্দোলন চলছিল। এরই মধ্যে, শিক্ষাবন্ধু সমিতির লোকজন বাম সংগঠনগুলির ডাকা ২ সেপ্টেম্বরের শিল্প ধর্মঘটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করতে যাচ্ছিলেন। পরীক্ষা নিয়ামকের দফতর থেকে বেরোতে গেলে আন্দোলনরত ছাত্রেরা তাঁদের বাধা দেন বলে অভিযোগ। তবু কয়েক জন কোনও রকমে বেরিয়ে মিছিলে যোগ দিতে চলে যান।
আন্দোলনে সামিল পড়ুয়াদের অভিযোগ, তাঁদের প্রতিনিধিরা অভাব অভিযোগ নিয়ে ডেপুটি পরীক্ষা নিয়ামকের সঙ্গে কথা বলছিলেন, বাকিরা নীচে বসেছিলেন। সেই সময়ে শিক্ষাবন্ধু সমিতির লোকজন আচমকা তাঁদের উপরে হামলা চালায়। ছাত্রদের ওই সংগঠনটির নেতা অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, ইমরান মণ্ডলদের অভিযোগ, “তৃণমূলের ওই সংগঠনের লোকেদের হাত থেকে মহিলারাও রেহাই পাননি। পুলিশের সামনেই ঘটনাটি ঘটে। আমাদের দশ জন জখম হয়েছেন, তার মধ্যে দু’জনকে বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করাতে হয়েছে।”

Advertisement

শিক্ষাবন্ধু সমিতির নেতা অংশুমান গোস্বামীর পাল্টা অভিযোগ, “অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করছিল ওই পড়ুয়ারা। ওদের হামলায় আমাদের এক সহকর্মী গুরুতর জখম হয়েছেন। সংগঠনের সভাপতি-সহ আরও কয়েক জন আহত হয়েছেন।” পুলিশ জানায়, ঘটনার পরে ওই পড়ুয়ারা প্রায় চার ঘণ্টা পরীক্ষা নিয়ামকের ঘরের সামনে বসে থাকেন। অনেক বোঝানোর পরে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে।

পড়ুয়াদের ক্ষোভ, গোটা ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। ডেপুটি রেজিস্ট্রার রামবিলাস মহাপাত্র অবশ্য এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই সংগঠন যে সব দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে, তা ঠিক নয়। রেজিস্ট্রার নিজে ওই সব পড়ুয়াদের কাছ থেকে রিভিউ সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছিলেন, কিন্তু কেউ তেমন কোনও তথ্য দিতে পারেননি। তাঁদের দাবি, রিভিউয়ের ফল প্রকাশ একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতির মধ্যে করতে হয় বলে দ্রুত প্রকাশ করা যায় না। তবে বাকি দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে তাঁরা খতিয়ে দেখছেন।

Advertisement

এসএফআই অবশ্য আন্দোলনরত পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আহত ছাত্রদের দেখতে বর্ধমান মেডিক্যালে গিয়ে সংগঠনের সম্পাদক দীপঙ্কর দে দাবি করেন, “গোটা রাজ্য জুড়ে আন্দোলনরত ছাত্রদের উপরে হামলা করাটাই সংস্কৃতিতে পরিণত করেছে তৃণমূল। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ও তার ব্যতিক্রম নয়।” টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র অবশ্য বলেন, “কোথাও ‘হোক কলরব’, কোথাও বা ‘হোক প্রতিবাদ’ নাম দিয়ে শিক্ষাঙ্গনে অশান্তি তৈরির চেষ্টা চলছে। তবে এ ক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটেছে, বলতে পারব না। যাই ঘটে থাকুক, তা দুঃখজনক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন