জি টি রোড দিয়ে বাস চালানোর আর্জি খারিজ

বাস মালিকদের লোকসান ঠেকাতে এ বার থেকে বাসে উঠে যাত্রীদের দেওয়া টিকিট পরীক্ষা করবেন জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। যাত্রীদের ঠিক মূল্যের টিকিট না দেওয়া হলে বা যাত্রী সঠিক ভাড়া না দিলে দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বুধবার বড় বাস ও মিনি বাসের মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৪ ০০:৪৫
Share:

বাসের লোকসান বন্ধে পদক্ষেপ করছে প্রশাসন।—নিজস্ব চিত্র।

বাস মালিকদের লোকসান ঠেকাতে এ বার থেকে বাসে উঠে যাত্রীদের দেওয়া টিকিট পরীক্ষা করবেন জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। যাত্রীদের ঠিক মূল্যের টিকিট না দেওয়া হলে বা যাত্রী সঠিক ভাড়া না দিলে দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বুধবার বড় বাস ও মিনি বাসের মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

Advertisement

এ দিন শহরে বাস চলাচল নিয়ে ফের এক দফা বৈঠকে বসে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসকদের সঙ্গে এই বৈঠকে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত প্রমুখ। বৈঠকে বাসমালিক ও ব্যবসায়ীরা ফের পুরনো জি টি রোড দিয়ে বাস চালানোর দাবি জানালেও জেলা প্রশাসনের তরফে তা মানা হয়নি। বৈঠকে মন্ত্রী রবিরঞ্জনবাবু মিনিবাসগুলির রং নীল-সাদা করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, “আমার ইচ্ছে, শহরের সমস্ত মিনিবাসের রং একই রকম হোক। যাতে মানুষ দেখেই চিনতে পারেন, সেগুলি মিনিবাস।”

গত ১৫ জুন থেকে বর্ধমানে যাত্রিবাহী বাস ঢোকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। ঠিক হয়, সদরঘাট রোড ধরে জেলার দক্ষিণ দামোদর, আরামবাগ, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া রুটের বাসগুলি বীরহাটা ধরে ঢুকবে। কিন্তু এর ফলে প্রচণ্ড যানজট তৈরি হয়েছে। তাতে স্থানীয় মানুষ ক্ষুব্ধ। তাঁদের দাবি, বীরহাটা এলাকায় যানজটের জেরে রাস্তা পর্যন্ত পার হওয়া যাচ্ছে না। তবে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “আমরা বলে দিয়েছি, ওই এলাকা-সহ সব জায়গায় মিনিবাস যেন দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকে। আমরা ভবিষ্যতে ওই এলাকা যানজটমুক্ত করার ব্যাপারে পদক্ষেপ করব।”

Advertisement

সভায় বাসমালিকেরা দাবি করেন, বর্ধমান শহরে বাস ঢুকতে না দেওয়ায় তাঁদের লোকসান হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য তাঁদের জানান, তাঁরা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, বাসের চালক ও কনডাক্টরেরা অনেক ক্ষেত্রে কম ভাড়া নিয়ে ঠিক টিকিট দিচ্ছেন না। কোথাও যদি ভাড়া ১০ টাকা হয়, ৬ টাকা নিয়ে যাত্রীদের যেতে দেওয়া হচ্ছে। ফলে, বাস মালিকদের লোকসানের দাবি ঠিক নয়। এ ব্যাপারে খোঁজ রাখা হবে। কোনও কনডাক্টর যদি ঠিক টিকিট না দেন, তাহলে যেমন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাত্রী যদি ঠিক ভাড়া না দেন, তাহলে তাঁকেও জরিমানা করা হবে বলে প্রশাসনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়। বৈঠকে টাউন সার্ভিস বাড়ানোর ব্যাপারে নতুন করে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে।

বাসমালিকেরা আরও অভিযোগ জানান, বিশেষত সকালের দিকে শহরে বেশ কিছু বাইরের বাস ঢুকে পড়ছে। ফলে, তাঁদের যাত্রী সংখ্যা কমছে। জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তুষার ঘোষ জানান, সে কারণে তাঁরা নতুন করে জি টি রোড দিয়ে বাস চলাচলের দাবি জানিয়েছেন। তবে জেলাশাসক বলেন, “এই দাবি মানা সম্ভব নয়। তবে শহরে ঢুকে পড়া বাইরের বাসগুলির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।”

জেলা পরিবহণ আধিকারিক প্রদীপ মজুমদার বলেন, “গলসি ও আউশগ্রাম-গুসকরা রুটের বাসগুলি বর্ধমানের বাজেপ্রতাপপুরের রেলসেতু ছুঁয়ে বর্ধমান-কালনা রোডের কৃষি খামার ও বর্ধমান-কাটোয়া রোডের দেওয়ানদিঘি পর্যন্ত যাওয়ার কথা ছিল। তা না করে সেগুলি উড়ালপুর লাগোয়া এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকছে। বাসগুলিকে কৃষি খামার ও দেওয়ানদিঘি পর্যন্ত যেতে বলা হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দারা বাস পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।”

টাউন সার্ভিস বাস মালিক সমিতির সম্পাদক রাধাশ্যাম ঘোষাল জানান, এই শহর ও লাগোয়া এলাকায় সব মিলিয়ে ১২২টি মিনিবাস চলে। এই বাসগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে ও গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি করছে। তাতে যানজট বাড়ছে। অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “আমাদের সব বাসের সময় নির্দিষ্ট করা রয়েছে। একটি বাস দেরি করলে পিছনের বাস তাকে পেরিয়ে চলে যাবে। তাই আমরা দেরি করছি না। তবে প্রশাসন এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক করে দিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন