জেলা পরিষদের নির্মাণ ছাই-ইট দিয়ে, আশ্বাস

কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের নির্দেশ, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একশো কিলোমিটার পরিধির মধ্যে যে কোনও নির্মাণকাজ সারতে হবে ‘ফ্লাই অ্যাশ ব্রিক’ বা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই থেকে তৈরি হওয়া ইট দিয়ে। জুলাই থেকে রাজ্য পূর্ত দফতর সরকারি নির্মাণ সামগ্রীর তালিকায় এই ইট অন্তর্ভুক্ত করেছে। অথচ, তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে অভিযোগ ইট নির্মাতাদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০২:২০
Share:

ছাই-ইট তৈরির এই সব কারখানা ধুঁকছে বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।

কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের নির্দেশ, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একশো কিলোমিটার পরিধির মধ্যে যে কোনও নির্মাণকাজ সারতে হবে ‘ফ্লাই অ্যাশ ব্রিক’ বা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই থেকে তৈরি হওয়া ইট দিয়ে। জুলাই থেকে রাজ্য পূর্ত দফতর সরকারি নির্মাণ সামগ্রীর তালিকায় এই ইট অন্তর্ভুক্ত করেছে। অথচ, তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে অভিযোগ ইট নির্মাতাদের। মঙ্গলবার দুর্গাপুরের জেলা শিল্পকেন্দ্রে আয়োজিত বৈঠকে অবশ্য জেলা পরিষদের নির্মাণকাজে ইট ব্যবহারের আশ্বাস আদায় করে নিলেন তাঁরা।

Advertisement

সাধারণ ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল মাটি। ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় উর্বর অংশ চলে যায়। চাষের ক্ষতি হয়। অন্য দিকে, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই দিয়ে ইট তৈরি হলে পরিবেশ বাঁচে। পাশাপাশি বাঁচে জমির উর্বরতাও। আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বেশ কয়েকটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলি থেকে টন-টন ছাই বেরোয়। সেই ছাই কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে প্রায় ২৫টি কারখানা ফ্লাই অ্যাশ ব্রিক তৈরি করছে। ইট নির্মাতাদের অভিযোগ, কারখানা গড়তে গড়ে ৫০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। অথচ, ইট তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। রোদে-জলে তা নষ্ট হচ্ছে। ক্রেতা নেই। তাঁদের দাবি, সাধারণ ইটে অতিরিক্ত জল শোষণ করে ‘ড্যাম্প’ ধরার ভয় থাকে। কম দামি নিম্নমানের ইট ভাল গুণমানের ইটের মধ্যে চালান করে অতিরিক্ত মুনাফা করার সুযোগ থাকে বলে ঠিকাদাররা ছাইয়ের ইট এড়িয়ে চলেন। কারণ, ছাইয়ের ইট একাধিক গুণমানের করা যায় না। ছাই-ইট নির্মাতাদের সংগঠন ‘ফ্লাই অ্যাশ ব্রিকস অ্যান্ড ব্লকস ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক সন্তোষ তাঁতিয়া জানান, বহু বেআইনি মাটির ইট কারখানা গড়ে উঠেছে। সেখানে ছাইয়ের ইট কারখানাগুলি সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত। নিয়মিত রাজস্বও দেয়। তিনি বলেন, “একমাত্র রাজ্য সরকারের কড়া নজরদারি ও সহযোগিতা পরিস্থিতি বদলাতে পারে।”

ওই সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৪ সালের ১০ জুন রাজ্যের মুখ্যসচিব বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে সরকারি, সরকার অধিগৃহীত সংস্থা, পুরসভা, পঞ্চায়েতের নির্মাণকাজের অন্তত ১০ শতাংশ সম্পন্ন করতে হবে ‘ফ্লাই অ্যাশ ব্রিক’ বা টালি দিয়ে। ২০০৭ সালের অগস্টের মধ্যে তা ১০০ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে। সন্তোষবাবু জানান, পূর্ত দফতরের নির্মাণ সামগ্রীর তালিকায় ছাইয়ের ইট তালিকাভুক্ত না হওয়ায় সরকারি কাজে ইটের ব্যবহার প্রায় চালুই হয়নি। তবে গত ১ জুলাই সে সমস্যা মিটেছে। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি বলে তাঁদের দাবি।

Advertisement

মঙ্গলবার জেলা শিল্পকেন্দ্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে শিল্পোদ্যোগী ও শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন বণিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন ক্ষুদ্র শিল্প অধিকর্তা দফতরের আধিকারিক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু। সেখানে ছাই-ইট নির্মাতারা তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে দেবুবাবু জানান, জেলা পরিষদের কাজে যাতে ছাইয়ের ইট ব্যবহার হয় সে ব্যাপারে তিনি উদ্যোগী হবেন। এ ছাড়া সরকারি নির্মাণকাজে ছাইয়ের ইট ব্যবহারের ব্যাপারে উদোগী হওয়ার আশ্বাস মিলেছে ক্ষুদ্র শিল্প অধিকর্তা দফতরের দিক থেকেও। সন্তোষবাবু বলেন, “ইট বিক্রি না হওয়ায় ইতিমধ্যে একাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আশা করি পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন