জাতিগত শংসাপত্র দেখিয়ে দিব্যি সরকারি চাকরি পেয়ে গিয়েছেন কালনার পূর্ব সাতগাছিয়া এলাকার সুব্রত সরকার। কিন্তু হঠাৎ সেই শংসাপত্র পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায়, বছর দশেক আগে যে ক্রমিক নম্বরে ওই শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে তার কোনও হদিসই নেই সরকারি খাতায়।
আবার শাসপুরের বিনয় বিশ্বাসের শংসাপত্র প্রামাণ্য হিসেবে দিয়ে জাতিগত শংসাপত্রের জন্য আবেদন করেছিলেন তাঁর এক আত্মীয়। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা যায় যে তারিখে শংসাপত্রটি দেওয়া হয়েছে সেই তারিখে আদৌ কোনও শংসাপত্র বিলি করাই হয়নি।
সম্প্রতি নানা কারণে জমা পড়া তফসিলি জাতি, উপজাতি ও ওবিসি শংসাপত্র পরীক্ষা করতে গিয়ে এমনই প্রতারণার খোঁজ পেয়েছে কালনা মহকুমা প্রশাসন। কেউ চাকরির ক্ষেত্রে আবার কেউ নতুন শংসাপত্র পেতে দাখিল করেছেন ওই নকল শংসাপত্র। দেখা গিয়েছে, পূর্ব সাতগাছিয়া এলাকার চারটি শংসাপত্র জাল। যাঁরা ওই শংসাপত্র দাখিল করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হবে বলেও জানিয়েছেন মহকুমাশাসক।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জাল চার শংসাপত্রের মধ্যে তিনটিই নকল করা হয়েছে এক দশকেরও বেশি আগে। তখন কালনার মহকুমাশাসক ছিলেন তপন বিশ্বাস। একটিতে তপনবাবুর স্ট্যাম্পও নকল করা হয়েছে বলে মহকুমা প্রশাসনের দাবি। যেমন, পূর্ব সাতগাছিয়া পঞ্চায়েত এলাকার শাসপুর দিঘিরপারের বাসিন্দা সুব্রত সরকার ব্যারাকপুরে চাকরি করছেন। তাঁর শংসাপত্রটি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে দেখা যায়, ওই শংসাপত্রের সিরিয়াল নম্বর, মহকুমাশাসকের স্বাক্ষর, সবটাই জাল। আবার সুফল সরকার নামে একজনের শংসাপত্র খতিয়ে দেখতে গিয়েও আধিকারিকদের নজরে আসে, মহকুমাশাসকের রাবার স্ট্যাম্প নকল করা হয়েছে। এই শংসাপত্রটি নদিয়ার কৃষ্ণনগরে নিজের শংসাপত্রের আবেদনের সঙ্গে জমা দিয়েছিলেন সুফলের এক আত্মীয়। পরীক্ষা করে দেখা যায়, শংসাপত্রটি ২০০১ সালে ইস্যু হয়েছে বলে উল্লেখ থাকলেও যে ক্রমিক নম্বর (৬৩১) তাতে রয়েছে সরকারি নথিতে তা নেই। সেখানে দেখা যায়, ২০০১ সালের ওই মাসে ৬৩১টি শংসাপত্র দেওয়ায় হয়নি। আবার কিছুদিন আগে কালনা মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে স্থানীয় বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তি শংসাপত্র হারিয়ে গিয়েছে জানিয়ে আবেদন করেন। সঙ্গে পুরনো শংসাপত্রের প্রতিলিপিও দেন। সেই প্রতিলিপি দেখে বিভাগীয় আধিকারিকেরা নিশ্চিত হয়ে যান, সেটি জাল। এর আগেও এ বছরের ২৭ আগস্ট মহকুমাশাসক কালনা থানায় একটি অভিযোগ করে জানিয়েছিলেন যে বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েত এলাকার মুক্তারপুর গ্রামের এক যুবকের শংসাপত্র জাল। ওই শংসাপত্রটি তুফানগঞ্জ থেকে তদন্তের জন্য কালনায় পাঠানো হয়েছিল।
মহকুমা প্রশাসনের দাবি, জাল শংসাপত্র দেওয়ার এই চক্রটি এখনও এলাকায় সক্রিয়। তদন্তে নেমে এলাকার এক যুবকের নামও পেয়েছেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা দরে জাল শংসাপত্র বিক্রি করা হয়। কিন্তু যেখানে বিনা পয়সায় সরকারি দফতর থেকে শংসাপত্র মেলে, সেখানে টাকা দিয়ে মানুষ তা কেনেন কেন? প্রশাসনের দাবি, সরকারি পদ্ধতিতে শংসাপত্র পেতে কিছুটা সময় লাগে। অনেকেরই চাকরি বা নানা কারণে তাড়া থাকে। তাঁরাই মূলত ঝক্কি সামলাতে হবে না, এই ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারণার শিকার হন।
মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ মঙ্গলবার বলেন, “যারা জাল শংসাপত্র দাখিল করেছে তাদের নামে আমি পুলিশের কাছে অভিযোগ করব। পুলিশকে তদন্তে সবরকম সাহায্য করবে মহকুমা প্রশাসন।”