জমি না পেলে কাগজকল চালু করবেন কি না, সে কথা ভাবতে হবে বলে জানিয়ে দিলেন দুর্গাপুরের খয়রাশোলের কাগজকল কর্তৃপক্ষ। সোমবার রাজ্যের শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁরা অভিযোগ জানিয়েছেন। মঙ্গলবার কারখানার অন্যতম অংশীদার স্বপন রায় বলেন, “অনুসারী শিল্পের জন্য প্রায় এক একর জমি দরকার। তিন মাস আগে আবেদন করেছি। এখনও কোনও সাড়া পাইনি। এরকম চললে আমাদের অন্য ভাবে ভাবতে হবে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৪ সালে খয়রাশোলে একটি বেসরকারি ইস্পাত সামগ্রী নির্মাণের কারখানা গড়ে ওঠে। সেখানে ল্যান্সিং পাইপ তৈরি হত। বছর দুয়েক আগে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। সেখানেই বর্তমানে একটি কাগজকল গড়ে তোলা হচ্ছে। সে জন্য বেশ কিছু যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। চলছে কিছু নির্মাণকাজও। স্বপনবাবু জানান, তিনি বর্তমানে ইন্দৌরে থাকেন। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত চাকরি করেছেন রানিগঞ্জের বেঙ্গল পেপার মিলে। সংস্থার পক্ষ থেকে তাই তাঁকে দুর্গাপুরের কাগজকল নির্মাণ দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ২০ কোটি টাকা লগ্নি করা হয়েছে। কারখানা চালু হলে প্রায় সাড়ে চারশো কর্মসংস্থান হবে। তা ছাড়া অনুসারী শিল্পেও বেশ কিছু কর্মসংস্থান হবে।
কিন্তু, অনুসারী শিল্প কোথায় তৈরি হবে, তা নিয়েই সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে দাবি স্বপনবাবুর। তিনি জানান, “জমি চেয়ে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) কাছে ২০ জুন আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও সাড়া মেলেনি। উত্পাদন শুরুর আগেই অনুসারী শিল্প গড়ে তুলতে না পারলে বিপাকে পড়তে হবে।” তিনি জানান, কাগজ তৈরির উপকরণ তৈরি হবে সেখানে। তা না হলে তা মুম্বই থেকে আনতে হবে, যা খরচ সাপেক্ষ। স্বপনবাবু বলেন, “উন্নতমানের রফতানি যোগ্য কাগজ তৈরি হবে এখানকার কারখানায়।” তিনি জানান, ইন্দৌরে দু’টি কাগজকল গড়েছেন তাঁরা। সংস্থার অন্যতম অংশীদার শঙ্কর নাগের দাবি, “অন্য রাজ্যের অভিজ্ঞতা থেকে দেখছি, এখানে শিল্প সেরকম গুরুত্ব পায় না। সরকারি তরফে সদর্থক সাড়া নেই।” স্বপনবাবু বলেন, “আমি এ রাজ্যের মানুষ। তাই এখানে কাগজকল নিয়ে এত উত্সাহী। কিন্তু জমি না পেলে কী হবে সন্দেহ আছে!”
এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি চেয়ে আবেদন এলে বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করা হয়। তার পরে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জমি দেওয়া হয়। এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তথা দুর্গাপুর পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই কাগজকলকে এখনই জমি দেওয়ার সুযোগ নেই। নিখিলবাবু বলেন, “স্বপনবাবু আমার কাছে কারখানার ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র মিলছে না বলে অভিযোগ করেছিলেন। আমি হাতে-হাতে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এ ভাবে জমি চাইলেই তড়িঘড়ি তা দেওয়া সম্ভব নয়। আগে ওঁরা উত্পাদন শুরু করুন। তার পরে অতিরিক্ত জমি দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে।”