প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় জলদূষণ রোধ, ও পানীয় জলের অভাব ঘোচাতে নজরদার বাহিনী তৈরি করছে জেলা পরিষদ। প্রশিক্ষণের পরে ওই কর্মীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাজ করবেন। কোথাও জল সরবরাহে সমস্যা বা নলকূপ বসানোর ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকলেই সঙ্গে সঙ্গেই তার রিপোর্ট জমা দেবেন। বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ গোলাম জার্জিস জানিয়েছেন, গোটা জেলা জুড়েই এই কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
তবে জেলার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এই বাহিনী তৈরি নতুন কোনও ঘটনা নয়। গোটা রাজ্য জুড়েই এ ধরনের উদ্যোগ করা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রের খবর, ২০১৪ সালের জুলাইয়ের মধ্যে রাজ্যের ১৭টি জেলার ১৫৭০৫ জনকে ওই কমিটির সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ দিয়েছে ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটারি সাপোর্ট অর্গানাইজেশনের তরফে একটি বেসরকারি সংস্থা। আগামী মার্চের মধ্যে মুর্শিদাবাদ ও পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ওই গ্রামীন জল ও স্বাস্থ্যবিধান কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শেষ হবে বলেও জানা গিয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর জানিয়েছে, ওই কমিটির সদস্যেরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে কোথায় জলের অভাব রয়েছে তা চিহ্নিত করতে পারলে সেখানে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তাঁদের আশা, ২০১৭-র মধ্যে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকাগুলিতে বাড়ি বাড়ি নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়ার কর্মসূচির অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারবেন ওই কমিটির সদস্যেরা।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১২ জনের ওই কমিটিতে ৬ পুরুষ ও ৬ মহিলা থাকবেন। তার মধ্যে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য থেকে শুরু করে কলের মিস্ত্রিও থাকবেন। যাতে প্রয়োজনে সঙ্গে সঙ্গেই নলকূপ সারিয়ে গ্রামের সমস্যা মেটানো যায়। গোলাম জার্জিসের দাবি, গ্রামের প্রতিটি নলকূপের দেখভাল করবেন ওঁরা। যদি কোনও নলকূপের সিমেন্টের চাতাল না থাকে বা সোকপিট তৈরি না হয় সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েতকে রিপোর্ট দেবেন তাঁরা। কোনও গ্রামে বা পাড়ায় যদি পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকে সে ব্যাপারেও জেলা জল ও স্বাস্থ্যবিধান কমিটিকে জানাবেন তাঁরা। পরে সমস্ত রিপোর্ট একসঙ্গে পাঠানো হবে রাজ্য জল ও স্বাস্থ্যবিধান কমিটির কাছে। ওই কমিটির চেয়ারম্যান পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তারপরে রাজ্য কমিটির সুপারিশে প্রতিটি পাড়ায় পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় যে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রাথমিক বা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে সেখানে চিকিৎসার জন্য আসা মানুষকে কী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, সেদিকেও নজর রাখবে ১২ জনের ওই কমিটি।
বর্ধমান জেলাতেও জানুয়ারি থেকে ওই জল ও স্বাস্থ্য বিধান কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫ থেকে ১১ জানুয়ারির মধ্যে বর্ধমানের দুটি মহকুমা, কাটোয়া ও দুর্গাপুর মহকুমার ১৮৯টি পঞ্চায়েতের ওই কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। ১৬ থেকে ১৮ তারিখের মধ্যে কালনা মহকুমার ৪৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ও ১৯-২১ জানুয়ারি আসানসোলের সম্প্রীতি ভবনে ওই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলেও জানা গিয়েছে।