ট্যাঙ্কার ফুটো, আতঙ্ক ছড়াল অ্যাসিড গড়িয়ে

ট্যাঙ্কার ফুটো হয়ে অ্যাসিড গড়িয়ে রাস্তায় এসে পৌঁছনোয় আতঙ্ক ছড়াল দুর্গাপুর কেমিক্যালস (ডিসিএল) কারখানার আশপাশে। কটূ ঝাঁঝালো গন্ধে ভরে যায় এলাকা। ছড়িয়ে পড়া অ্যাসিড সাফ করতে ঢালা জল পাশের নর্দমা মারফত দামোদরের ক্যানালে গিয়ে পৌঁছনো নিয়েও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আতঙ্কের কোনও কারণ নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৫ ০১:৪৫
Share:

রাস্তায় অ্যাসিডের উপরে ছড়ানো হয়েছে চুন।

ট্যাঙ্কার ফুটো হয়ে অ্যাসিড গড়িয়ে রাস্তায় এসে পৌঁছনোয় আতঙ্ক ছড়াল দুর্গাপুর কেমিক্যালস (ডিসিএল) কারখানার আশপাশে। কটূ ঝাঁঝালো গন্ধে ভরে যায় এলাকা। ছড়িয়ে পড়া অ্যাসিড সাফ করতে ঢালা জল পাশের নর্দমা মারফত দামোদরের ক্যানালে গিয়ে পৌঁছনো নিয়েও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আতঙ্কের কোনও কারণ নেই।

Advertisement

রাজ্য সরকারি সংস্থা ডিসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি বেসরকারি পরিবহণ সংস্থার ট্যাঙ্কারে করে অ্যাসিড আনা হচ্ছিল কারখানায়। সেটি দাঁড়িয়েছিল কারখানার সামনে। মঙ্গলবার ভোরে ট্যাঙ্কারটি ফুটো হয়ে অ্যাসিড পড়তে থাকে সামনের রাস্তায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ ট্যাঙ্কারটিকে কারখানার মধ্যে নিয়ে গিয়ে খালি করে দেন। কিন্তু ততক্ষণে রাস্তায় পড়া অ্যাসিডের ঝাঁঝালো গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশে। পাশেই পুরসভার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষপাড়া এলাকা। ছুটে আসেন বাসিন্দারা। কারখানার তরফে প্রথমে নিয়ম মতো চুন দেওয়া হয় অ্যাসিডে। এর পরে জল ঢালা হয়।

কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, অ্যাসিডের মাত্রা লঘু করার কাজ হয়েছে রাস্তার পাশের নর্দমা বন্ধ করে। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, অ্যাসিড মিশ্রিত জল নর্দমায় গিয়ে মিশেছে। এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, কারখানার ফটক থেকে জল ও অ্যাসিডের মিশ্রণ গিয়ে ঘোষপাড়ার ভিতরের নর্দমায় পড়েছে। সেখানকার জল হ্যানিম্যান সরণি পেরিয়ে গিয়ে মিশছে দামোদরের ডিটিপিএস ক্যানালে। স্থানীয় গৃহবধূ পুতুল মণ্ডল, করুণা সোরেনদের দাবি, অ্যাসিড মিশ্রিত কিছুটা জল পাশের একটি ডোবায় গিয়ে মেশার পরে সেখানে কয়েকটি মাছ মারা গিয়েছে। ডোবার জলে নেমে দু’টি হাঁসও অসুস্থ হয়েছে। সেই জল দামোদরের ক্যানালে মেশায় তাঁরা আতঙ্কিত। তাঁদের কথায়, ‘‘একে কটূ গন্ধ। তার পরে এ ভাবে মাছ মারা গেল, হাঁস অসুস্থ হল। আমরা ভয়ে রয়েছি।’’

Advertisement


অ্যাসিড ধোওয়া জল গিয়ে পড়ায় একটি ডোবায়
মাছের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

কারখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য কোনও ভাবে অ্যাসিড মিশ্রিত জল নর্দমায় গিয়ে মিশেছে বলে মানতে চাননি। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, উপযুক্ত আগাম ব্যবস্থা নিয়েই অ্যাসিড লঘু করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে সব রকম আপতকালীন ব্যবস্থা রাখতে হয়। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।’’ এ দিন সকালে স্থানীয় হেড-কোয়ার্টার এলাকায় টিউশনে যাচ্ছিল ঘোষপাড়ার নবম শ্রেণির ছাত্র নিতাই মণ্ডল ও দশম শ্রেণির জয়ন্ত মণ্ডল। তারা বলে, ‘‘ঝাঁঝালো গন্ধ পাচ্ছিলাম। অ্যাসিড কোনও ভাবে গায়ে লেগে গেলে কী হতে পারে তা আমরা জানি। তাই খুব ভয় পেয়ে যাই।’’

ডিসিএল গড়ে ওঠে ১৯৬৩ সালে। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। এখন কারখানায় মনোক্লোরো বেঞ্জিন, ডাইক্লোরো বেঞ্জিন, সোডিয়াম পেন্টাক্লোরো ফেনেট, সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট, হাইড্রোজেন গ্যাস, কস্টিক সোডা, ক্লোরিন, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, ব্লিচিং পাউডার ইত্যাদি উৎপাদন হয়। আশপাশের বাসিন্দারা জানান, কারখানা থেকে মাঝে-মাঝেই বিভিন্ন রাসায়নিকের ঝাঁঝালো গন্ধ বেরোয়। ক্লোরিন গ্যাস ‘লিক’ করার ছোটখাটো ঘটনাও ঘটে বলে দাবি বাসিন্দাদের। তবে এ দিনের ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্ক ছড়ায়।

দামোদরের ক্যানালের জল শোধন করে শহরে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে ‘ফিল্ড সুপারভাইজার’ তারক ভুঁইকে সঙ্গে নিয়ে এলাকা পরিদর্শনে যান পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ সদস্য প্রমোদ সরকার। পরে তাঁর আশ্বাস, ‘‘ওই জল কোনও ভাবে শোধনাগারে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’’ সকাল থেকে এলাকায় ছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর অরবিন্দ নন্দী। তিনি বলেন, ‘‘মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। সবাইকে আশ্বস্ত করেছি। ডিসিএল কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক হতে বলব।’’ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আঞ্চলিক আধিকারিক অঞ্জন ফৌজদার।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন