টহল সার, লেন ভাঙা চলছেই জাতীয় সড়কে

দ্রুত গতিতে ছুটতে ছুটতে আচমকা ব্রেক কষতে বাধ্য হলেন গাড়ির চালক। উল্টো দিক থেকে হঠাৎই লেন ভেঙে ঢুকে পড়েছে ট্রাক। কোনও রকমে পাশ কাটিয়ে দুর্ঘটনা থেকে বাঁচল গাড়ি। সব সময় যে দুর্ঘটনা থেকে রেহাই মেলে, তা নয়। যেমন গত শনিবারই গলসিতে রেহাই পাননি একটি গাড়ির পাঁচ আরোহী। ২ নম্বর জাতীয় সড়কে নানা গাড়ি ও ট্রাকের এমন লেন ভাঙার প্রবণতার জন্য দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে দাবি করেন বহু গাড়ি চালকই।

Advertisement

বিপ্লব ভট্টাচার্য

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৪৯
Share:

ইচ্ছে মতো যাতায়াত। বাঁশকোপার কাছে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে এই দৃশ্য দেখা যায় প্রায় প্রতি দিন। ছবি: বিশ্বনাথ মশান ও সব্যসাচী ইসলাম।

দ্রুত গতিতে ছুটতে ছুটতে আচমকা ব্রেক কষতে বাধ্য হলেন গাড়ির চালক। উল্টো দিক থেকে হঠাৎই লেন ভেঙে ঢুকে পড়েছে ট্রাক। কোনও রকমে পাশ কাটিয়ে দুর্ঘটনা থেকে বাঁচল গাড়ি।

Advertisement

সব সময় যে দুর্ঘটনা থেকে রেহাই মেলে, তা নয়। যেমন গত শনিবারই গলসিতে রেহাই পাননি একটি গাড়ির পাঁচ আরোহী। ২ নম্বর জাতীয় সড়কে নানা গাড়ি ও ট্রাকের এমন লেন ভাঙার প্রবণতার জন্য দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে দাবি করেন বহু গাড়ি চালকই। অত্যন্ত সচেতন হয়ে গাড়ি না চালালে এই রাস্তায় সব সময় বিপদ লুকিয়ে থাকে বলে জানান তাঁরা। পুলিশের টহল, নজরদারি সত্ত্বেও এত লেন ভাঙার ঘটনা কী করে ঘটে সে নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।

দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে ঝাঁ-চকচকে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে সব গাড়িই দ্রুত গতিতে যাতায়াত করে। এই রাস্তা ব্যবহারের জন্য মোটা টোল ট্যাক্সও দিতে হয়। কিন্তু, চালকদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই লেন ভাঙার প্রবণতা। তাঁরা জানান, নিয়ম মেনে কোনও মোড় নয়, রাস্তার বিভিন্ন ডিভাইডারের কাটা অংশ দিয়েই লেন পরিবর্তন করে কিছু গাড়ি। যার ফলে বিপদে পড়তে হচ্ছে সেই লেন দিয়ে যাওয়া গাড়িগুলিকে।

Advertisement

জাতীয় সড়ক ধরে গিয়ে দেখা যায়, দুর্গাপুর থেকে বুদবুদ পর্যন্ত এ রকম বেশ কয়েকটি ডিভাইডারের ‘ফাঁকা’ অংশ রয়েছে। সেগুলি দিয়ে শুধু গাড়ি বা লরি নয়, সাইকেল, মোটরবাইক, মোটরভ্যান পারাপার করছে ইচ্ছে মতো। অনেক ডিভাইডারে ট্রাফিক পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ার্সরা রয়েছেন। কোথাও কোথাও রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পাইলট কার। কিন্তু তাতে লেন ভাঙার বিরাম নেই। চালকেরা জানান, বেশ কিছু জায়গায় কোনও রক্ষী থাকেন না। অনেক জায়গায় রক্ষী থাকলেও তাঁদের মানে না যাতায়াতকারীরা। কাজেই ‘লেন’ ভাঙা চলতেই থাকে।

মঙ্গলবার দুপুরেই যেমন দেখা গেল, জাতীয় সড়কের রাজবাঁধ চটির কাছে একটি ছোট গাড়ি লেন ভেঙে উল্টো দিকে আসছে। ওই চটিতে কোনও ট্রাফিক পুলিশ বা সিভিক ভলেন্টিয়ার্স তখন নেই। এই জায়গায় রয়েছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার ডিপো। ট্যাঙ্কারে তেল ভরে ডিভাইডারের এই অংশ দিয়ে পার হয় অনেক গাড়ি। কাজেই দুর্ঘটনার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে। চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, একটু অন্যমনস্ক হলেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এখানে।

আসানসোল থেকে একটি ছোট গাড়িতে করে কয়েক জন যাত্রীকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাপস চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, এই রকম ভাবে গাড়ি ঢুকে যাওয়ার ফলে খুবই অসুবিধা হয়। তাঁর কথায়, “দূর থেকে দেখা গেলে কোনও অসুবিধা হয় না। আচমকা কেউ লেন ভাঙলে আর গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।” কাঁকসার বাঁশকোপা শিল্পাঞ্চলে বেশ কিছু কলকারখানা আছে। সারাদিনই প্রচুর লরি, ডাম্পার সেগুলিতে যাতায়াত করে। তাদের অনেকে প্রায়ই লেন ভাঙে বলে অভিযোগ। বেশ কিছু গাড়ি চালক জানান, এখন জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ফলে, রাস্তার পাশে জায়গা কম। এই অবস্থায় উল্টো লেন ভাঙার প্রবণতা ভয়ানক সমস্যা তৈরি করছে বলে তাঁদের অভিযোগ।

গত শনিবার কলকাতা থেকে দু’টি গাড়িতে করে গিরিডি যাচ্ছিলেন ১৪ জন। গলসির মানিকবাজারের কাছে দু’টি ডিভাইডারের ফাঁক দিয়ে আসা ধান বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে একটি গাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। তাঁদের মধ্যে এক জন পথচারী। এই রকম বহু ছোটবড় দুর্ঘটনা জাতীয় সড়কে লেগেই থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় লেন ভাঙার ফলেই দুর্ঘটনা। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকসা ও বুদবুদের মধ্যে জাতীয় সড়কে ডিভাইডারের বেশ কয়েকটি অংশ বিপজ্জনক। বুদবুদের সাধুডাঙার কাছে দুর্গাপুর থেকে বুদবুদ ঢোকার রাস্তায়, বুদবুদ থেকে বর্ধমান যাওয়ার রাস্তায় ভিড়সিন গ্রামের কাছে ডিভাইডারে নানা দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের তরফে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য সিভিক ভলান্টিয়ার্স রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। তা সত্ত্বেও লেন ভাঙার প্রবণতা না কমার জন্য সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছে পুলিশ।

জেলা পুলিশ জানায়, লেন ভেঙে ধরা পড়া গাড়িকে শাস্তি দেওয়া হয়। তবু অনেকে সেই নিয়ম মানছেন না। তাই এ ব্যাপারে সেই সচেতন করা হচ্ছে বিভিন্ন থানার তরফে। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে জানানো হয়, বিভিন্ন মোড়ে নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া পাইলট কারও ঘোরাফেরা করে। কোথাও কোনও বেনিয়ম দেখলেই জরিমানা করা হয়। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের আশা, ছয় লেনের রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। সেই কাজ শেষ হলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন