বাঁ দিকে, রাস উপলক্ষে প্রীতম ক্লাবের পদ্মমন্দির ও ডান দিকে, বৌদ্ধ সঙ্ঘের মূর্তি।—নিজস্ব চিত্র।
রাস উৎসব বলতেই নবদ্বীপের কথা ভাবেন রাঢ় বঙ্গের লোকজন। তবে গত কয়েক বছর ধরে মণ্ডপ ভাবনা ও শোভাযাত্রায় নবদ্বীপের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে দাঁইহাট। এক রাস মিটতে না মিটতেই পরের বছরের জন্য ভাবনা চিন্তা শুরু করে দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
আজ, বৃহস্পতিবার থেকে দু’দিনের রাস উৎসবে মেতে উঠবে দাঁইহাট। এ বছর প্রায় ৪৭ জন উদ্যোক্তা রাসে যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে একদলের নজর বাহারি মণ্ডপসজ্জায়, আরেক দল আলো-বাজনা নিয়ে শুক্রবার শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। প্রতিবারের মতো এ বারেও দাঁইহাটের কেন্দ্রীয় রাস উৎসব কমিটি পুরসভা ও প্রশাসনের কাছে একগুচ্ছ দাবি রেখেছিলেন। কমিটির অন্যতম সদস্য নান্টু সাহা বলেন, “আমাদের বেশিরভাগ দাবি প্রশাসন মেনে নিয়েছে।” কেন্দ্রীয় রাস কমিটির দাবি মেনে এ দু’দিন ভাগীরথীতে গভীর রাত পর্যন্ত নৌকা চলাচল করবে। এ ছাড়াও অন্যান্য পরিবহণ ব্যবস্থা সচল থাকবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
ফি বছরই নানা ‘থিমে’ চমক দেয় প্রীতম সঙ্ঘ। এ বার তারা ক্লাবের কাছে একটি পুকুরের উপর পদ্ম-মন্দির তৈরি করেছে। ক্লাবের সদস্যেরাই দিনরাত এক করে পদ্ম-মন্দির বানাচ্ছেন। মন্দিরের বাইরে পুকুরে চোখে পড়বে পদ্ম ফুল, জল কেটে ঘুরে বেড়াবে হাঁসও। ক্লাবের সদস্যেরাই জানান, পদ্ম বাঁচানোর আর্জি নিয়েই তাঁদের এই প্রয়াস। নদিয়ার মাটিয়ারি ঘাট যাওয়ার পথে চোখে পড়বে একটি বড় ড্রাগন। সেই ড্রাগনের ভিতরে ঢুকলে চোখে পড়বে গ্রামের দৃশ্য। দু’জন গাঁয়ের মহিলা পুকুর থেকে মাটির কলসিতে জল ভরে বাড়ির পথে হাঁটছেন, কোথাও চলছে ঢেঁকিতে ধান ভাঙা, কোথাও কাস্তে দিয়ে ধান কাটার কাজ চলছে দেখা যাবে। নজর কাড়বে পালকি, ধানের গোলা, শালিক, লোকগানের দৃশ্যও। মণ্ডপের পরিকল্পনা যিনি করেছেন, দাঁইহাটের সেই সন্তোষ ঘোষ বলেন, “নানা কারণে বঙ্গ সংস্কৃতি থেকে ওই সব দৃশ্য বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে কিংবা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পথে। এ সব দৃশ্য তুলে ধরে দর্শনার্থীদের পুরনো স্মৃতি, পুরনো কথা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমরা।” ওই মণ্ডপের সামনে যামিনী রায়ের আদলে আঁকা ছবিও দেখা যাবে।
আইসক্রিমের চামচ দিয়ে এ বার মণ্ডপ বানাচ্ছে রাইরাজা। মণ্ডপে চামচ দিয়েই নানারকম কারুকার্য করা হচ্ছে। মণ্ডপের ভিতর রাধাকৃষ্ণের নানা দৃশ্য থাকবে বলেও উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। দাঁইহাটের দেওয়ানগঞ্জের ইন্দিরা স্মৃতি সঙ্ঘ আবার তাদের মণ্ডপ সাজাচ্ছে জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র ছোটা ভীমের নানা কার্যকলাপ দিয়ে। মণ্ডপের মূল থিম, গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান।