তিন দিনের লক্ষ্মীপুজোর আগে রাত জাগছে গ্রাম

দুর্গাপুজো আসে, চলেও যায়। গ্রামের বারোয়ারিতে পুজো হয় ঠিকই, তবে তা নামমাত্র সরঞ্জাম নিয়ে। আসল জাঁক তোলা থাকে লক্ষ্মী পুজোর জন্য। লক্ষ্মীপুজোর অপেক্ষায় বাক্সবন্দি থাকে নতুন জামাকাপড়ও। কালনা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের হিজুলি গ্রামে এ রীতি বহুদিনের। প্রায় দু’দশক ধরে লক্ষ্মীপুজোতেই সাজছে, রাত জাগছে বেহুলা নদীর গা ঘেঁষা এ গ্রাম। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দাদের মুখে জানা যায়, একসময় বেহুলা নদী উপচে প্রায়ই বন্যা নামত এ গ্রামে।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৪০
Share:

লক্ষ্মীপুজোর আগে। নিজস্ব চিত্র।

দুর্গাপুজো আসে, চলেও যায়। গ্রামের বারোয়ারিতে পুজো হয় ঠিকই, তবে তা নামমাত্র সরঞ্জাম নিয়ে। আসল জাঁক তোলা থাকে লক্ষ্মী পুজোর জন্য। লক্ষ্মীপুজোর অপেক্ষায় বাক্সবন্দি থাকে নতুন জামাকাপড়ও।

Advertisement

কালনা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের হিজুলি গ্রামে এ রীতি বহুদিনের। প্রায় দু’দশক ধরে লক্ষ্মীপুজোতেই সাজছে, রাত জাগছে বেহুলা নদীর গা ঘেঁষা এ গ্রাম। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দাদের মুখে জানা যায়, একসময় বেহুলা নদী উপচে প্রায়ই বন্যা নামত এ গ্রামে। নোনা জলে নষ্ট হত চাষের জমি। নতুন ধান ঘরে না ওঠায় অর্থকষ্টে ভুগতেন গ্রামের বাসিন্দারা। সারা বছর দেনা শোধ করতেই চলে যেত তাঁদের। দুদর্শা থেকে রেহাই পেতে লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা শুরু করেন গ্রামের মানুষ। জনশ্রুতি, পুজো শুরু করার পরেই কমতে থাকে বন্যার প্রকোপ। ফসল ঘরে ওঠায় জীবনও অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।

কালনা-পাণ্ডুয়া রাস্তার ধারের এ গ্রামে হাজারখানেকেরও বেশি লোকের বাস। পুজোয় অবশ্য আত্মীয়-স্বজন, দূরে থাকা ছেলে-মেয়ে ফেরায় গমগম করে ওঠে গ্রাম। লক্ষ্মীপুজোও চলে তিন দিন ধরে। গ্রামের দুটি পাড়া, উত্তরপাড়া ও দক্ষিণ পাড়ায় রীতিমতো রেষারেষি করে পুজো হয়। সোমবার সন্ধ্যায় গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দুই পাড়াতেই শেষ মুহূর্তের তোড়জোড় চলছে। হিজুলি প্রাথমিক বিদ্যালয় লাগোয়া মাঠে রয়েছে উত্তরপাড়ার মণ্ডপ। তাদের থিম এ বার হারাধনের দশটি ছেলে। থার্মোকল দিয়ে অজস্র মডেল বানাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। বৃত্তাকার মণ্ডপে মঙ্গলবার সকাল থেকেই শুরু হবে মডেল সাজানো। উত্তরপাড়ার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সোমবার রাতভর কাজ চলবে। কবিতায় যে ভাবে হারাধনের একেকটা ছেলে হারিয়ে যায়, ঠিক সেভাবেই বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে দৃশ্যগুলি তুলে ধরা হবে। এ মণ্ডপ থেকে কিছুটা দূরে পুকুর পাড়ে রয়েছে পুজো মণ্ডপ। সেখানে থিমের সঙ্গে সাজুয্য রেখেই সাজবে প্রতিমা। পুজো উপলক্ষে গ্রামে বসেছে হাজারো টুনি, এলইডি আলো। তাতেও নানা দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হবে। উত্তরপাড়ার বাসিন্দা মিঠুন মালিক, কার্তিক বাগ, অনুপ মালিকেরা বলেন, “সমস্তটাই গ্রামের মানুষেরা নিজে হাতে করেন। মণ্ডপ সাজানো শেষ হতে রাত ভোর হয়ে যাবে।” তাঁদের দাবি, হিজুলি গ্রামের অনেকেই দুর্গাপুজোর মণ্ডপ তৈরির কাজে ভিন জেলায় যান। পুজো শেষে লক্ষ্মীপুজোর আগেই বাড়ি ফেরেন তাঁরা। ফলে একদিকে বাড়ি ফেরার মজা, আবার দক্ষ হাতে মণ্ডপের দেখভাল দুই মিলে লক্ষ্মীপুজো আরও জমে ওঠে।

Advertisement

উত্তরপাড়ার মণ্ডপ থেকে কয়েক পা এগোলেই দক্ষিণপাড়া। সোমবার থেকে আত্মীয়দের ভিড় জমেছে সে পাড়াতেও। পাড়ার ভেতর হ্যালোজিনের আলোয় চলছে জোরকদমে প্রস্তুতি। এ পাড়ায় পুজো উপলক্ষেও থাকবে বিভিন্ন মডেলের প্রদর্শনী। থাকবে জীবন্ত মডেলও। আর পুজোর থিম নিমাইয়ের সন্ন্যাস জীবনের নানা কাহিনি। তবে মূল আকর্ষণ সিমেন্টের তৈরি লক্ষ্মী প্রতিমা। প্রতিমা গড়েছেন কাছাকাছি হাটগাছা গ্রামের তাপস পাল নামে এক শিল্পী। পাড়ার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রতিমাটি যেখানে বসানো থাকবে তার পাশ দিয়ে কৃত্তিম পুকুর গড়া হয়েছে। পুকুরে ভাসবে পদ্ম, দেবীর মাথার উপরে ঝরবে ঝর্নাধারা। দক্ষিণপাড়ার শুভঙ্কর মালিক, সুশান্ত মালিক, সুফল মালিকেরা জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যেই মণ্ডপ ও প্রতিমা বসানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। দর্শনার্থীদের জন্য খুলেও দেওয়া হবে।

শুধুমাত্র হিজুলির বাসিন্দারাই নন, প্রত্যন্ত এ গ্রামের পুজো দেখতে ভিড় করেন আশপাশের আরও ২০টা গ্রামের মানুষ। পুজো উপলক্ষে বসে মেলাও। আর তিন দিন ধরে দেবীর কাছে গোটা গ্রাম প্রার্থনা করে, মাঠের ফসল যেন ঘরে ওঠে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন