তারুণ্য চুলোয়, ব্রাত্য রইলেন আভাস-পার্থ

উঁচুতলা চাইছে, নেতৃত্বে এগিয়ে আসুক তরুণ মুখ। কিন্তু বর্ধমান জেলা সিপিএম হাঁটছে উল্টো পথে। বার্নপুরের সম্প্রীতি প্রেক্ষাগৃহে আজ, শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে সিপিএমের তিন দিনের জেলা সম্মেলন শুরু হচ্ছে।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৪
Share:

উঁচুতলা চাইছে, নেতৃত্বে এগিয়ে আসুক তরুণ মুখ। কিন্তু বর্ধমান জেলা সিপিএম হাঁটছে উল্টো পথে।

Advertisement

বার্নপুরের সম্প্রীতি প্রেক্ষাগৃহে আজ, শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে সিপিএমের তিন দিনের জেলা সম্মেলন শুরু হচ্ছে। তিন দফার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় দলের জেলা সম্পাদক পদ থেকে সরতে চলেছেন অমল হালদার। কিন্তু সেই পদে কমবয়সী কোনও কাউকে বসানোর পরিবর্তে প্রবীণ নেতাকেই বাছা হচ্ছে বলে দল সূত্রের খবর।

দিন কয়েক আগেই উত্তর ২৪ পরগনায় প্রকাশ্য সমাবেশে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব আক্ষেপ করছিলেন, গোটা সভা পাকা চুলের মাথায় ভরা। বুড়োদের বিশ্রাম দিয়ে তরুণদের এগিয়ে আসার পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু বর্ধমানে নেতা বদলের সময়ে আভাস রায়চৌধুরী বা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের মতো তরুণদের নাম গ্রাহ্যই করা হল না।

Advertisement

জেলা সিপিএম সূত্রের খবর, নতুন সম্পাদকের নাম বাছাই পর্বে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে একাধিক বার রাজ্য কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরীর নাম উঠে এসেছিল। গত বছর পর্যন্ত সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদক ছিলেন আভাস। কিন্তু তিনি ভোটের রাজনীতিতে নেহাতই ‘ছেলেমানুষ’ দাবি করে পক্বকেশ নেতারা তাঁর জেলা সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা পত্রপাঠ নাকচ করে দিয়েছেন। মূলত কলকাতা-কেন্দ্রিক রাজনীতি করা আভাসের সঙ্গে জেলার সংগঠনের যোগাযোগ কম, এই যুক্তিও তোলা হয়েছে।

সেই যুক্তি খাড়া করা যেত না জেলা কমিটির সদস্য, শিল্পাঞ্চলের তরুণ নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের বেলায়। অদূর ভবিষ্যতে বর্ধমান থেকে আসানসোল-দুর্গাপুর আলাদা হয়ে গেলে তাঁকেই নতুন জেলার সম্পাদক করা হতে পারে বলে শিল্পাঞ্চলের সিপিএম নেতাদের একাংশের দাবি। আভাস ছাড়া আর যে তরুণ নেতার নাম একাধিক বার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের মুখে ঘুরেছে, তিনি পার্থ। কিন্তু তাঁরও কপাল পুড়েছে মূলত বয়স তথা ‘অভিজ্ঞতা’ কম বলেই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য মুচকি হেসে বলেন, “আভাস আর পার্থ তরুণ বলেই এই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে।”

গত বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পরে সিপিএমের অনেকেই ভেবেছিলেন, জেলায় দলকে এ বার চাঙ্গা করতে তরুণ নেতৃত্ব তুলে আনা হবে। শিল্পাঞ্চলে বিজেপির তরুণ সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কে ঠেকানোর জন্যও তা জরুরি বলে মনে করছেন অনেকে। সে জন্যই বেশি করে আভাস-পার্থদের নাম ঘুরে-ফিরে এসেছে। কিন্তু এ দিনই সন্ধ্যায় বার্নপুরে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর শেষ সভায় পরবর্তী সম্পাদক হিসেবে মঙ্গলকোটের কৃষক নেতা অচিন্ত্য মল্লিকের নাম উঠে এসেছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর। বিদায়ী জেলা সম্পাদক অমল হালদার অবশ্য দাবি করেন, “এটা এ ভাবে এখনও বলা যাচ্ছে না।”

সিপিএম সূত্রের খবর, জেলা সম্মেলনে প্রায় ছ’শো প্রতিনিধি যোগ দেবেন। গত তিন বছরে দলের সাফল্য ও ব্যর্থতা, সব নিয়ে আলোচনা করবেন ২৭টি জোনাল ও ১৩৭টি লোকাল কমিটির সদস্যেরা। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের তর্ক-বিতর্ক আলাপ-আলোচনার শেষে রবিবার নতুন জেলা কমিটির সভায় এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে অন্য নানা বিষয়ে বিতর্ক হলেও সম্পাদক নির্বাচন নিয়ে যাতে ভোটাভুটি না হয়, তার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সিপিএমের জেলা তথা রাজ্য নেতৃত্ব। অচিন্ত্যবাবুকে সর্বসম্মত নেতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে।

অচিন্ত্যবাবু নিজে অবশ্য বলেন, “এ সব বানানো গল্প। এখনও কিছুই ঠিক হয়নি।” অমলবাবুর উত্তরসূরী হিসেবে এক সময়ে যাঁর নাম বেশি শোনা যাচ্ছিল, সিটুর সেই জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্রকিশোর চৌধুরীও দাবি করেন, “এখন নানা চিন্তাভাবনা হচ্ছে। একতরফা কিছু বলা সম্ভব নয়।” কিন্তু আসলে সবই যে ঠিক হয়ে গিয়েছে, সেই খবর পৌঁছে গিয়েছে নিচুতলায়। আর তাতে ঘরে-বাইরে মার খেতে থাকা সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের একাংশ যথেষ্ট হতাশ। তাঁদের বক্তব্য, তৃণমূল বা বিজেপির উত্থান রুখতে কমবয়সী ডাকাবুকো নেতা দরকার। সাধারণ কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ বা সক্রিয়তার অভাব দেখা যাচ্ছে, তা জেলা সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদনেও পরিষ্কার।

বিদায়ী সম্পাদকের পেশ করা সাংগঠনিক রিপোর্টের ৫০ পাতায় পার্টি সংগঠন অনুচ্ছেদে স্পষ্টই বলা হয়েছে, গত লোকসভা ভোটের পরে কর্মীরা হতোদ্যম হয়ে পড়েন। এলাকাভিত্তিক ছোট কর্মসূচিগুলিতে যোগদানের ঝুঁকি নিচ্ছিলেন না তাঁরা। কারণ, দলের ভিতরেও অনেক কর্মী বিশ্বাস করতে শুরু করেন, বামপন্থীদের আর কোনও ভবিষ্যৎ নেই। তাঁরা বিভিন্ন ভাবে সেই মত ব্যক্ত করতেও শুরু করেন। এমনকী দলের উল্লেখযোগ্য সদস্যেরাও কর্মসূচিতে যোগদান করছিলেন না। ৫৩ পাতায় লেখা হয়েছে, অনেক নেতাই সাধারণ জনগণ বা কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন না। শুধু উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি পার্টির সব কাজের সঙ্গে আছেন।

কিন্তু সংগঠন দুর্বল হওয়ার জন্য দলে তারুণ্যের অভাবকে কোথাও তেমন দায়ী করেননি অমলবাবু। কী ভাবে তরুণ নেতাদের তুলে আনা হবে, তা নিয়েও সে ভাবে আলোচনা করা হয়নি। একই মনোভাব দেখা গিয়েছে প্রবীণ নেতাদের অধিকাংশের মধ্যেই। বয়োবৃদ্ধদের এই মনোভাবে কি তরুণ নেতারা হতাশ? আভাসও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “এ সব দলের বিষয়। এখনও কিছু ঠিক হয়নি।” পার্থও একই সুর ধরেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন