তালিকা বাতিল না হলে অনশন, হুমকি কর্মাধ্যক্ষদের

পঞ্চায়েত দফতরে নিয়োগের যে লিখিত পরীক্ষায় দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ, সেটিতে উত্তীর্ণের তালিকা বাতিল না হলে অনশন-ধর্নার হুমকি দিলেন তৃণমূল পরিচালিত বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ও সদস্যদের বড় অংশ। এ ব্যাপারে তাঁদের সকলের সই সংবলিত চিঠি জেলা সভাধিপতি দেবু টুডুকে দেওয়া হবে বলে ওই কর্মাধ্যক্ষ ও সদস্যেরা জানিয়েছেন। বুধবার জেলা পরিষদের সাধারণ সভার পরে সভাধিপতি অবশ্য বলেন, “রাজ্য সরকারের জেলা নিয়োগ সংক্রান্ত একটি কমিটি রয়েছে। তারাই ঠিক করবে, ওই তালিকার ভবিষ্যত্‌ কী।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৮
Share:

অঙ্গীকার হলের বৈঠক শেষে চলছে সভাধিপতির সঙ্গে কর্মাধ্যক্ষদের কথাবার্তা। —নিজস্ব চিত্র।

পঞ্চায়েত দফতরে নিয়োগের যে লিখিত পরীক্ষায় দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ, সেটিতে উত্তীর্ণের তালিকা বাতিল না হলে অনশন-ধর্নার হুমকি দিলেন তৃণমূল পরিচালিত বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ও সদস্যদের বড় অংশ।

Advertisement

এ ব্যাপারে তাঁদের সকলের সই সংবলিত চিঠি জেলা সভাধিপতি দেবু টুডুকে দেওয়া হবে বলে ওই কর্মাধ্যক্ষ ও সদস্যেরা জানিয়েছেন। বুধবার জেলা পরিষদের সাধারণ সভার পরে সভাধিপতি অবশ্য বলেন, “রাজ্য সরকারের জেলা নিয়োগ সংক্রান্ত একটি কমিটি রয়েছে। তারাই ঠিক করবে, ওই তালিকার ভবিষ্যত্‌ কী। আমার কিছু করার নেই।” সন্ধ্যায় রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী তথা দলের বর্ধমান জেলার পর্যবেক্ষক সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি দু’দিন একটু ব্যস্ত আছি। তার পর ওদের বিষয়টি নিয়ে কী করা যায় দেখছি।”

তালিকা বাতিলের দাবিতে লেখা চিঠির বয়ান ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। এ দিন সভার পরেই জেলা পরিষদের সদস্য ও কর্মাধ্যক্ষদের তাতে সই করতেও দেখা যায়। তাঁদের দাবি, তৃণমূলের ৬৩ জন সদস্যের বেশির ভাগ ওই তালিকা বাতিলের পক্ষে রয়েছেন। সকলের সই হওয়ার পরে কাল, শুক্রবার তাঁরা চিঠিটি সভাধিপতির হাতে জমা দেবেন।

Advertisement

ওই চিঠিতেই জানানো হয়েছে, আগামী সাত দিনের মধ্যে তালিকা বাতিল না হলে স্বাক্ষরকারীরা অনশন ও ধর্নায় বসতে বাধ্য হবেন। তাঁদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত সহায়ক, নির্মাণ সহায়ক, করণিক-সহ চারটি পরীক্ষায় ৪১৫টি পদের জন্য ৪১৫০ জনকে যে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয়েছে, তা নিরপেক্ষ ভাবে করা হয়নি। আর সেই কারণে তাঁরা ওই তালিকা বাতিলের দাবি তুলেছেন।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জেলা নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটি ওই তালিকা প্রকাশ করেছে। তার পরেই জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ও সদস্যেরা প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানাতে থাকেন। তাঁদের অভিযোগ, ওই তালিকায় প্রচুর অনিয়ম রয়েছে। একই পরিবারে একাধিক সদস্য, এক আইএনটিটিউসি নেতার মেয়ে, অতিরিক্ত জেলাশাসকের আপ্ত সহায়কের দুই মেয়ের নাম রয়েছে তাতে। রয়েছে পরপর রোল নম্বরের পরীক্ষার্থীদের নামও।

জেলা পরিষদে তৃণমূল দলনেত্রী অরুন্ধতী সেন প্রশ্ন তুলেছিলেন, “অনলাইনে ফর্ম জমার পরেও কী ভাবে তালিকায় পরপর রোল নম্বর থাকা পরীক্ষার্থীদের নাম থাকে?” জেলা পরিষদের সহ-সভানেত্রী প্রিয়া সূত্রধর কিংবা মেমারি থেকে নির্বাচিত সদস্য মনিকা রায়ও জেলাশাসকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। এর ফলে তাঁরা দলেরই অন্য একটি অংশের বিরাগভাজন হয়েছেন বলে খবর। এ দিন মনিকাদেবী অভিযোগ করেন, “প্রিয়াদেবীর মতোই আমিও এলাকায় ঘুরতে ভয় পাচ্ছি।”

মঙ্গলবার বিকেলেই বিধানসভায় গিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং শ্রমমন্ত্রী তথা বর্ধমান জেলা পরিষদের মনিটরিং কমিটির চেয়ারম্যান মলয় ঘটকের কাছে তালিকা বাতিলের দাবি জানান বিক্ষুব্ধ কর্মাধ্যক্ষ ও সদস্যদের ১২ জন প্রতিনিধি।

জেলার রাজনীতিতে মলয় শিবিরের লোক বলে পরিচিত গোলাম জার্জিস, নুরুল হাসান, নারায়ণ হাজরা চৌধুরীরা আরও অভিযোগ করেন, বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকায় দলের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। দলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ জেলা কমিটিকে গুরুত্ব না দিয়ে দু’জনকে নিয়ে দল পরিচালনা করছেন। এ দিন সাধারণ সভায় নারায়ণবাবু-সহ একাধিক কর্মাধ্যক্ষ বলেন, “আমরা এক দিকে আন্দোলন করব, আবার ওই তালিকা বাতিলের দাবিতে আইনের পথেও হাঁটব।”

জেলা নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান উজ্জ্বল প্রামাণিক অবশ্য এ দিনও দাবি করেন, “একটা কথাই বলতে পারি, আমরা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভাবে ওই তালিকা প্রকাশ করেছি।” স্বপনবাবু বলেন, “আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। কিছু বলতে পারব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন