তছরুপ নিয়ে দ্বন্দ্ব তৃণমূলে, তদন্তের নির্দেশ

কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারে কেউটে। বাসস্ট্যান্ড উন্নয়ন তহবিল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে বিরোধীদের পাশাপাশি এমন দাবি করছে তৃণমূলের একাংশও। এই তছরুপের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে পারেন শাসকদলের কাউন্সিলর, এমনকী মেয়র পারিষদও দাবি তাঁদের।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৪ ০০:৩৪
Share:

আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডের উন্নয়নের জন্য আদায় করা টাকা নিয়েই উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ।—নিজস্ব চিত্র।

কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারে কেউটে।

Advertisement

বাসস্ট্যান্ড উন্নয়ন তহবিল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে বিরোধীদের পাশাপাশি এমন দাবি করছে তৃণমূলের একাংশও। এই তছরুপের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে পারেন শাসকদলের কাউন্সিলর, এমনকী মেয়র পারিষদও দাবি তাঁদের। এ নিয়ে চাপানউতোর তৈরি হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। প্রশাসনিক স্তরে এই অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আসানসোল উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মলয় ঘটক। দলীয় স্তরেও পৃথক তদন্ত হবে বলে জানান তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরি সভাপতি ভি শিবদাসন।

আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ড দেখভালের দায়িত্ব পুরসভার। মেয়রের তত্ত্বাবধানে গঠিত বাসস্ট্যান্ড উন্নয়ন কমিটি এই কাজ করে। কমিটির তহবিলের জন্য টাকা আদায় থেকে খরচ, সবই করেন কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যেরা। ২০০৯ সালে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট পুরসভায় ক্ষমতায় আসার পরে মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন কমিটি গড়েন। টাকা আদায়ের দায়িত্ব পান অসীম মিত্র নামে এক ব্যক্তি। পুরসভার একটি সূত্রে জানা যায়, ২০০৯-এর ১ অগস্ট থেকে ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সিটি বাসস্ট্যান্ডে যাতায়াতকারী বাসগুলির কাছ থেকে কমিটির তহবিলের জন্য চাঁদা আদায় করেছেন অসীমবাবু। খাতায়-কলমে এই আদায় করা টাকার পরিমাণ প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা। কিন্তু তহবিলে জমা দিয়েছেন প্রায় সাড়ে ১৮ লক্ষ টাকা। অর্থাত্‌, প্রায় ১৮ লক্ষ টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

এ ব্যাপারে প্রথম আঙুল তোলেন আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত আসানসোলের ‘মোটর ট্রান্সপোর্ট ইউনিয়ন’-এর সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়া। তাঁর দাবি, শুধু টাকা কম জমা করাই নয়, হিসেব বহির্ভূত ভাবে প্রতি দিন প্রতিটি বাস ও মিনিবাসের কাছ থেকে জোর করে ৪৭ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। রাজুবাবুর অভিযোগ, “এই অপকর্মের পিছনে একটি সিন্ডিকেট কাজ করেছে। শাসকদলেরই কয়েক জন নেতা-কর্মী তাতে জড়িত থাকায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। আমি বিষয়টি প্রাক্তন মন্ত্রী, মেয়র ও দলের নেতাদের জানিয়েছি। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। ভাল ভাবে তদন্ত হলে আমাদের দলেরই অনেক রাঘববোয়াল ধরা পড়বে।”

বাসস্ট্যান্ড উন্নয়ন কমিটির তহবিল নিয়ে গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে ব্যপক দুর্নীতি হচ্ছে, তা মেনে নিচ্ছেন তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরি সভাপতি ভি শিবদাসন। তাঁরও দাবি, এই কমিটিতে দুর্নীতির আখড়া তৈরি করে রেখেছে দলের সঙ্গেই জড়িত কয়েক জন। তিনি বলেন, “আমি সমস্তটা জেনেছি। মেয়রের সঙ্গেও কথা হয়েছে। আমরা দলীয় স্তরেও তদন্ত করছি।” তৃণমূলের একটি সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্তে এই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে আসানসোলের দুই মেয়র পারিষদ ও এক কাউন্সিলরের।

এই ঘটনা নিয়ে পরোক্ষে মেয়র তাপসবাবুকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ। তাঁদের দাবি, আদায় করা টাকা ঠিক ভাবে সময় মতো তহবিলে জমা পড়ছে কি না, তা মেয়রের দেখা উচিত ছিল। অভিযুক্তদের আড়াল করতেই তিনি এত দিন বিষয়টি নিয়ে উদাসীন ছিলেন কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। বিষয়টি সামনে আসার পরে শুধুমাত্র অসীম মিত্রকে নোটিস পাঠানোর বদলে মেয়রের পুলিশে অভিযোগ করা উচিত ছিল বলেও তাঁদের দাবি। সেক্ষেত্রে এই ঘটনার পিছনে যে বা যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের নামও সামনে আসত বলে মনে করছে তৃণমূলের এই অংশ। পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের তাপস রায়ের দাবি, “ক্ষমতায় আসার পর থেকে একের পর এক দুর্নীতিতে জড়িয়েছে বর্তমান পুরবোর্ড। এই ঘটনার ঠিক মতো তদন্ত হলে তো বড়-বড় নাম উঠে আসবে।”

মেয়র বলেন, “প্রাথমিক ভাবে আমার মনে হয়েছে দুর্নীতি হয়েছে।” তবে তাঁর দাবি, অভিযুক্তকে টাকার হিসেব দেওয়ার জন্য কিছুটা সময় দিয়েছেন। তিনি তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দিতে না পারলে পুলিশের দ্বারস্থ হবেন বলে মেয়র জানান। মূল অভিযুক্ত অসীম মিত্রের সাফ দাবি, “এই কাজ তো আমি একা করিনি। আমাকে অন্যায় ভাবে জড়ানো হচ্ছে। আমি শনিবারের মধ্যে হিসেব দেব।”

গোটা বিষয়টি নিয়ে আসানসোলের তৃণমূল নেতা তথা বিধায়ক মলয়বাবু জানান, অভিযোগ পেয়ে তিনি প্রশাসনিক তদন্তের জন্য মেয়রের কাছে কাগজপত্র পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ। তাই এর বেশি এখন আর কিছু বলার নেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement