তদন্তে নেই নিজের কুকুর, হিমশিম পুলিশ

পুলিশ কমিশনারেট তৈরি হওয়ার পরে কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু ড্রাগ, বিস্ফোরক, খুনি বা অপরাধীদের ধরতে যাদের অত্যন্ত প্রয়োজন, সেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর আর জোটেনি আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের। ফলে, তদন্তে প্রয়োজন পড়লে কুকুর চাইতে হয় কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর (সিআইএসএফ) কাছ থেকে।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৪৩
Share:

পুলিশ কমিশনারেট তৈরি হওয়ার পরে কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু ড্রাগ, বিস্ফোরক, খুনি বা অপরাধীদের ধরতে যাদের অত্যন্ত প্রয়োজন, সেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর আর জোটেনি আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের। ফলে, তদন্তে প্রয়োজন পড়লে কুকুর চাইতে হয় কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর (সিআইএসএফ) কাছ থেকে। নিয়মের জাঁতাকল পেরিয়ে কুকুর হাতে পেতে গড়িয়ে যায় বেশ কয়েক ঘণ্টা। এর ফলে অপরাধের কিনারায় বিলম্ব হয়, অনেক সময়ে নানা সূত্র মুছেও যায় বলে অভিযোগ।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে দুর্গাপুরের এনার্জি পার্কের পাশের মাঠে ডিএসপি-র এক কর্মীর ক্ষতবিক্ষত দেহ মেলে। পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা জ্যাকেট, দেহের পাশ থেকে তিনটি রক্তমাখা ছুরি, একটি লোহার চেন ও তিনটি জলের বোতলও উদ্ধার করে। খুনের ঘটনা অনুমান করে পুলিশ তদন্তের জন্য কুকুর আনতে উদ্যোগী হয়। সিআইএসএফের কাছে কুকুর চেয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু কাগজপত্র তৈরি করে, সইসাবুদ মিটিয়ে কুকুর আনতে পেরিয়ে যায় ঘণ্টা পাঁচেক। পুলিশকর্মীদের মতে, এত সময় পেরিয়ে যাওয়ায় সূত্র নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এই ঘটনায় দেরিতে আসা কুকুর তেমন বড় কোনও সূত্র দিতে পারেনি বলেও জানান কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা। বুধবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতারও হয়নি।

কমিশনারেটের এক আধিকারিক জানান, দুর্গাপুর যখন জেলা পুলিশের আওতায় ছিল তখন পুলিশের নিজস্ব কুকুর ছিল। কিন্তু কমিশনারেট হওয়ার পরে নিয়ম অনুযায়ী তা বর্ধমান জেলা পুলিশের হাতে চলে যায়। তার পর থেকে আর কুকুর পাওয়া যায়নি। ব্যারাকপুরে পুলিশের নিজস্ব ডগ স্কোয়াড আছে। কিন্তু সেখান থেকে কুকুর আনা সময়সাপেক্ষ। সময় বাঁচাতে দুর্গাপুরের সিআইএসএফের কাছ থেকেই কুকুর নিতে হয়। কিন্তু একটি কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছ থেকে কুকুর নিতে গেলে প্রক্রিয়াগত কারণে সময় লাগে। ওই পুলিশকর্তা জানান, প্রথমে কুকুর চেয়ে ‘রিক্যুইজিশন’ জমা দিতে হয়। তা এক এক করে অনুমোদন করেন সিআইএসএফের নানা স্তরের আধিকারিকেরা। তার পরে দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফের সংশ্লিষ্ট জওয়ান কুকুর নিয়ে রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যান।

Advertisement

কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রশিক্ষণের পদ্ধতি সব সংস্থায় এক রকম হলেও প্রত্যেক কুকুর নিজের ‘মাস্টার’-এর নির্দেশ মানতেই অভ্যস্ত। সেক্ষেত্রে রাজ্য পুলিশ সিআইএসএফের কুকুর নিয়ে কাজ করার সময়ে তদন্তে ব্যাঘাতের সম্ভাবনা থাকে। কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, “অপরাধী ধরার জন্য অনেক সময় কুকুর খুব কাজে আসে। কিন্তু কমিশনারেটের নিজস্ব কুকুর না থাকায় বহু সময়েই চাইলেও তা ব্যবহার করা যায় না।” তাঁর অভিযোগ, অপরাধের পরে বহু জায়গায় স্থানীয় বাসিন্দারা কুকুর এনে তদন্তের দাবি জানান। তখন বিপাকে পড়তে হয় পুলিশকে। তিনি আরও জানান, কোথাও সন্দেহজনক কোনও সামগ্রী বা ব্যাগ পেলে বহু ক্ষেত্রেই প্রথমে কুকুর নিয়ে গিয়ে তা দেখার কথা। কিন্তু তা হয় না। ঝুঁকি নিয়ে তা দেখতে হয় পুলিশকর্মীদেরই।

কমিশনারেটের এক আধিকারিক জানান, ডগ স্কোয়াডকে যে কোনও বাহিনীর সম্পদ হিসেবে দেখা হয়। সাধারণত বিদেশি কুকুর রাখা হয় স্কোয়াডে। ঠিক মতো প্রশিক্ষণ পেলে অনেক সময়ে দেশি কুকুরও ভাল কাজ করে। নিজস্ব ডগ স্কোয়াড তৈরির ব্যাপারে কি কমিশনারেটের কোনও ভাবনাচিন্তা আছে? কমিশনারেটের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, “ডগ স্কোয়াডের জন্য রাজ্য সরকারের নির্দিষ্ট দফতরে আর্জি জানানো হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন