অজয় মজুমদার। —নিজস্ব চিত্র।
স্বজনপোষণ এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তৃণমূল পরিচালিত কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিলেন তৃণমূলেরই অজয় মজুমদার। শুক্রবার বিকেলে তিনি দুর্গাপুরের মহকুমাশাসকের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দেন। মহকুমাশাসক কস্তুরী সেনগুপ্ত জানান, রাজ্য পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির মোট ২১টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে রয়েছে ১৫টি। বামফ্রন্টের দখলে রয়েছে ৫টি। এক জন নির্দল প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। শিবপুর এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অজয়বাবু আবার কাঁকসা ব্লক অফিসে গলসির বিধায়ক গৌরচন্দ্র মণ্ডলের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অভিযোগ করেন, পঞ্চায়েত সমিতির কোনও কাজকর্মে তাঁকে রাখা হয় না। বিধায়ক প্রতিনিধি হিসেবে কোনও কাজ নিয়ে তিনি পঞ্চায়েত সমিতিতে গেলে সহযোগিতা করা হয় না। তিনি বলেন, “যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সহ-সভাপতি চিন্ময় মণ্ডল ও তাঁর অনুগামীরা নেন। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পূর্ণিমা বাউড়িও রয়েছেন। সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গোপনে। সমিতির সভায় তা তুলে ধরা হয় না। শুধু নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি এবং স্বজনপোষণে মেতে রয়েছেন তাঁরা।”
অজয়বাবুর দাবি, এলাকার মানুষের সার্বিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে তিনি এত দিন চুপচাপ ছিলেন। তিনি বলেন, “কিন্তু আমি আর পারলাম না। এর আগে আমি প্রতিবাদ করায় অন্যায় ভাবে মামলা দায়ের করে আমাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে না পারলে আমার লাভ কি?” তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, অজয়বাবু অভিযোগপত্রে ইস্তফার কারণ হিসেবে বিমাতৃসুলভ আচরণ, এলাকার উন্নয়নে বাধা, গীতাঞ্জলি, নিজ ভূমি-নিজ গৃহ, গরিব মানুষদের সরকারি সাহায্য প্রভৃতি বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সমিতির স্বজন পোষণ ইত্যাদির উল্লেখ করেছেন।
এ দিন অজয়বাবুর ইস্তফার খবর শুনে গলসির বিধায়ক গৌরচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “আমি বিধানসভায় রয়েছি। শুনেছি পঞ্চায়েত সমিতিতে একটি গোলমাল হয়েছে। কী হয়েছে, বিশদে খোঁজ নেব।” অজয়বাবু বরাবর কাঁকসার যুব তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। পল্লববাবু বলেন, “খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এমন না হলেই ভাল হত।” এ দিকে যে চিন্ময়বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কাঁকসার তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদ সদস্য দেবদাস বক্সীর অনুগামী হিসেবে পরিচিত। চিন্ময়বাবুর দাবি, “এই সব অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই। উনি পঞ্চায়েত সমিতিতে এ বিষয়ে কোনও দিন কিছু জানাননি। দল তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নিক।” দেবদাসবাবুও বলেন, “উনি দলের কাছে এই ধরনের অভিযোগ কখনও জানাননি।” তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি তথা বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই ঘটনার কথা শুনেছি। দল তদন্ত করে দেখবে।”