দুঃস্থ পরিবারের পড়ুয়াদের জন্য আলাদা ক্লাসের ব্যবস্থা শিক্ষিকার

বাবার অবসরের টাকা থেকে কিছুটা নিয়ে কাজটা তিনি শুরু করেছিলেন সেই ২০০৬ সালে। আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। সেই লক্ষেই বস্তিবাসী পড়ুয়াদের জন্য তাঁর স্কুলে গড়ে তুলেছেন আস্ত একটি বিভাগ। দুর্গাপুর শহরের ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পাবলিক হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দেবযানীদেবী।

Advertisement

সব্যসাচী ইসলাম

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪০
Share:

চলছে ক্লাস। নিজস্ব চিত্র।

বাবার অবসরের টাকা থেকে কিছুটা নিয়ে কাজটা তিনি শুরু করেছিলেন সেই ২০০৬ সালে। আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। সেই লক্ষেই বস্তিবাসী পড়ুয়াদের জন্য তাঁর স্কুলে গড়ে তুলেছেন আস্ত একটি বিভাগ।

Advertisement

দুর্গাপুর শহরের ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পাবলিক হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দেবযানীদেবী। তিনি জানালেন, পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অনুমোদিত এই স্কুলে ইংরেজি ও বাংলা দু’টি মাধ্যমেই পড়াশোনা চলে। প্রথম দফায় ক্লাস চলে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। ওই বিভাগের ছুটির ঘণ্টা পড়তেই শুরু হয় দুপুর ২টো থেকে দু’ঘন্টার বিশেষ বিভাগ। আর সেখানেই দুর্গাপুর শহরের ধোবীঘাট, নেতাজিনগর লাগোয়া বস্তি এলাকা ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ২৫০ জন্য স্কুলে আসে। বিশ্বজিৎ কর্মকার, গৌরব দত্তদের মতো অনেকের অভিবাবকেরাই অন্যের বাড়িতে কাজ করে বা ধূপকাঠি ফেরি করে সংসার চালান। স্কুল থেকেই ওই পড়ুয়াদের পোশাক, বই-খাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় বলে জানা গেল।

দেবযানীদেবী জানান, পড়াশোনার জন্য ওই পড়ুয়াদের কাছ থেকে কোনও বেতন নেওয়া হয় না বলে। শুধু তাই নয়, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ১৫ জন পড়ুয়াকে অন্যদের সঙ্গে পড়াশোনারর সুযোগও দেওয়া হয় এই পর্বে। আইভি মাল, কৌস্তুভ সাহা, দ্বীপানন বিশ্বাসদের মতো অনেকেই ভুগছে স্নায়ুর সমস্যায়। কৌস্তুভের বাবা কৌশিক সাহা বলেন “আমার ছেলে ঠিক মতো কথা বলতে পারত না। মুখ দিয়ে লালা ঝরতো বলে আগের স্কুল থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। এই স্কুলে এসে ছেলে এখন অনেক স্বাভাবিক ভাবে পড়াশোনা করতে পারছে।” পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এই বিশেষ বিভাগটি চলে, তার পরে পড়ুয়াদের সাধারণ বিভাগেই ভর্তি করা হয় বলে জানান দেবযানীদেবী।

Advertisement

হঠাৎ কেন স্কুলে তিনি এই রকম একটি বিভাগ চালু করলেন? দেবযানীদেবী জানান, কয়েক বছর আগে অর্থনৈতিক সামর্থ্য না থাকায় ধোবীঘাট এলাকা এক মহিলা তাঁর বছর পাঁচেকের ছেলেকে কোনও স্কুলে ভর্তি করতে পারেননি। এই স্কুল থেকে ফিরে যাওয়ার সময়ে তিনি বলে গিয়েছিলেন, ‘এটাও বড়লোকেদের স্কুল’। তা তাঁকে দুঃখ দিয়েছিল। বাড়ি ফিরে বাবা বিনয়কুমার বোসকে সে কথা জানান। তার পরে বাবার অনুপ্রেণায় এই আলাদা অবৈতনিক বিভাগ শুরু করেন তিনি।

দুপুরের স্কুলে দেবযানীদেবী ছাড়াও রয়েছেন মায়া মজুমদার, গীতা ঘোষ, মৌসুমী মাইতিদের মতো কয়েক জন শিক্ষিকা। তাঁরা সকলেই মাত্র ৫০০ টাকার সাম্মানিকের বিনিময়ে কাজ করেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সকালের বিভাগের সুতপা চন্দ ও কৃষ্ণা মল্লিক। তাঁরা বলেন, “এই উদ্যোগ ভাল লেগেছ বলেই উৎসাহিত হয়ে সামিল হয়েছি এই প্রয়াসে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন