দখলের রাস্তায় গতি হারিয়েছে শহর

যেখানে সেখানে গাড়ি রেখে দেওয়া। ইচ্ছে মতো দোকানের পরিধি বাড়িয়ে নেওয়া। দিনভর রাস্তা জুড়ে গাড়ি রেখে পণ্য তোলা-নামানো। শহরের সংকীর্ণ রাস্তায় একেই সুস্থ ভাবে চলাফেরা করা দায়। তার উপরে এই সবের অত্যাচারে যানজটে নাজেহাল জামুড়িয়া। এই শহরের প্রাণকেন্দ্র বলতে বোঝায় বাসস্ট্যান্ড থেকে সিনেমা মোড় হয়ে পেট্রোল পাম্প এলাকা। বাসস্ট্যান্ডের কাছেই রাস্তার ধারে রয়েছে আসানসোল মাইনস বোর্ড অব হেলথের কার্যালয়। সেই অফিসের সামনের জায়গা বেদখল হয়ে গিয়েছে। চা থেকে মাংসের দোকান, কী নেই সেখানে! ফলে, রাস্তা সেখানে সংকুচিত।

Advertisement

নীলোত্‌পল রায়চৌধুরী

জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:১৯
Share:

যানজটে নাজেহাল। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

যেখানে সেখানে গাড়ি রেখে দেওয়া। ইচ্ছে মতো দোকানের পরিধি বাড়িয়ে নেওয়া। দিনভর রাস্তা জুড়ে গাড়ি রেখে পণ্য তোলা-নামানো। শহরের সংকীর্ণ রাস্তায় একেই সুস্থ ভাবে চলাফেরা করা দায়। তার উপরে এই সবের অত্যাচারে যানজটে নাজেহাল জামুড়িয়া।

Advertisement

এই শহরের প্রাণকেন্দ্র বলতে বোঝায় বাসস্ট্যান্ড থেকে সিনেমা মোড় হয়ে পেট্রোল পাম্প এলাকা। বাসস্ট্যান্ডের কাছেই রাস্তার ধারে রয়েছে আসানসোল মাইনস বোর্ড অব হেলথের কার্যালয়। সেই অফিসের সামনের জায়গা বেদখল হয়ে গিয়েছে। চা থেকে মাংসের দোকান, কী নেই সেখানে! ফলে, রাস্তা সেখানে সংকুচিত। সারা দিনই ভিড় লেগে থাকে এই এলাকায়। ওখান থেকে সামান্য এগোলেই থানা মোড়। সেখানে দু’দিকে ঠেলায় সাজানো নানা পসরা। ফলে, সেখানেও রাস্তা কার্যত অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। সমস্যা দ্বিগুণ করেছে যত্রতত্র রাখা যানবাহন। সুষ্ঠু পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় চালকেরাও গাড়ি রাখারা ব্যাপারে অসহায়।

শহরের কালীমন্দির এলাকায় বেআইনি ভাবে চলছে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। এ ছাড়া রয়েছে রাস্তা দখল করে মাটিতে চট পেতে সব্জি, মাছ-সহ নানা জিনিসপত্র কেনাবেচা। সঙ্গে বিড়ম্বনার অন্যতম বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সারা দিন নানা দোকানের পণ্য লরিতে তোলা ও নামানো। সিনেমা মোড়ের দু’পাশের রাস্তায় ট্রেকার ও মিনিট্রাক রাখার দাপটে চলা দায়। পেট্রোল পাম্পের পাশ দিয়ে জামুড়িয়া হাটতলা যাওয়ায় রাস্তাও মাল তোলা-নামানোর জেরে সারা দিন যানজটে ফেঁসে থাকে।

Advertisement

শহরবাসীর অভিযোগ, পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পরেও যোগাযোগ ও ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজার কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি এই শহরে। শহরের বাইপাসের ধারে একটি নতুন বাসস্ট্যান্ড তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বাসের মালিকেরা সেখান থেকে বাস চালানো লাভজনক মনে করেননি। তাই কোনও বাস সেখানে যায়নি। এখন বাসস্ট্যান্ডের জন্য গড়া কার্যলয়টি ট্রাফিক কার্যালয় হয়ে গিয়েছে। নতুন সেই বাসস্ট্যান্ড এখন দূরপাল্লার লরি ও ট্যাক্সি রাখার জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় তৃণমূল নেতা পূর্ণশশী রায়ের অভিযোগ, “ওখানে জুয়া খেলার মতো অসামাজিক কাজকর্মও হয়।” সেই বাসস্ট্যান্ডের পাশেই একটি গুদাম তৈরি করা হয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল, শহরের সমস্ত ব্যবসায়ীর পণ্য-সামগ্রী ওই গুদামে আসবে। সেখান থেকে ছোট গাড়িতে করে নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত দোকানে পণ্য পৌঁছে যাবে। কিন্তু সেই বড়সড় গুদামঘর নির্মাণের পরে বছর চারেক ধরে পড়ে রয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে, যানজট সমস্যাও মেটেনি।

নতুন বাসস্ট্যান্ড তৈরি করেও লাভ হয়নি। আবার প্রধান বাসস্ট্যান্ডেও কোনও উন্নতি হয়নি। ফলে, যাত্রীদের দুর্ভোগ কমেনি। প্রধান বাসস্ট্যান্ডে কোনও যাত্রী প্রতিক্ষালয় নেই। রোদে-জলে নাকাল হয়ে বাস ধরতে হয় যাত্রীদের। বালানপুরের বাসিন্দা বাবন সিংহ, জামুড়িয়া গ্রামের রজত কবিরা জানান, প্রচণ্ড গরমে বা ভরা বর্ষার সময়ে যাত্রীদের ভরসা বাসস্ট্যান্ডের চা ও খাবারের দোকান। মদনতোড়ের বাসিন্দা অরূপ পান্ডের দাবি, “সব থেকে বেশি ভুক্তভোগী হন বয়স্করা। বাসস্ট্যান্ডের পরিকাঠামো তো ঢেলে সাজেনি পুরসভা বা প্রশাসন। উল্টে, বাসস্ট্যান্ডের জায়গায় একটি হোটেলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।”

আসানসোল মহকুমা মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাজু অহলুয়ালিয়ার কথায়, “শহরকে যানজট মুক্ত করা নিয়ে পুরসভা-প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে আমরা সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।” জামুড়িয়া বণিকসভার কর্তা অজয় খেতানের দাবি, “ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ মনে চলতে তৈরি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে তত্‌পর হতে হবে। নির্ধারিত সময়ে গাড়িতে পণ্য তোলা বা নামানোয় কোনও আপত্তি আমাদের নেই। শহর জবরদখলমুক্ত করে হকারদের অন্যত্র বসার ব্যবস্থা করাও দরকার। তাহলেই সুষ্ঠু পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে।” পুর কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, যান নিয়ন্ত্রণ ও পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা রয়েছে। প্রশাসনের উপযুক্ত সহায়তা পেলেই তা সম্পন্ন হবে।

জল, নিকাশি বা রাস্তা দখল এই ধরনের নাগরিক পরিষেবা নিয়ে অভাব-অভিযোগ তো রয়েছেই। তবে শহরবাসীর আরও খেদ রয়েছে এলাকার ক্রীড়া, সংস্কৃতির পরিস্থিতি নিয়েও।

(চলবে)

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
subject-এ লিখুন ‘আমার শহর বর্ধমান’।
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, বর্ধমান বিভাগ,
জেলা দফতর আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।
প্রতিক্রিয়া জানান এই ফেসবুক পেজেও: www.facebook.com/anandabazar.abp।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন