দলেরই কর্মীকে মারধর, গ্রেফতার তৃণমূলের নেতা

পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা দলীয় প্রার্থীকে মারধর করে টাকা-আংটি কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে সোমবার রাতে গ্রেফতার হলেন কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য। মঙ্গলবার, কয়েকজন মহিলা কর্মীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা ও তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকির অভিযোগে গ্রেফতার হলেন এক তৃণমূল কর্মী। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, ধৃত দু’জনের নাম অজয় মজুমদার এবং দেবাশিস বর্মন। দুটি ঘটনাতেই কাঁকসায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া দেখছে রাজনৈতিক মহল। এ দিন অভিযুক্তদের ১৪ দিন জেল-হাজতে পাঠান বিচারক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁকসা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ০২:০৭
Share:

পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা দলীয় প্রার্থীকে মারধর করে টাকা-আংটি কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে সোমবার রাতে গ্রেফতার হলেন কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য। মঙ্গলবার, কয়েকজন মহিলা কর্মীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা ও তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকির অভিযোগে গ্রেফতার হলেন এক তৃণমূল কর্মী। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, ধৃত দু’জনের নাম অজয় মজুমদার এবং দেবাশিস বর্মন। দুটি ঘটনাতেই কাঁকসায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া দেখছে রাজনৈতিক মহল। এ দিন অভিযুক্তদের ১৪ দিন জেল-হাজতে পাঠান বিচারক।

Advertisement

তৃণমূল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকসায় তৃণমূলের স্থানীয় রাজনীতিতে দেবদাস বক্সী ও পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায় গোষ্ঠীর তরজা নতুন নয়। অতীতেও দুই গোষ্ঠীর কর্মী-সমর্থকরা একাধিকবার অশান্তিতে জড়িয়েছেন। তবে, বিধানসভা নির্বাচনের পরে সেই বিবাদ অনেকটাই কমে গিয়েছিল। কিন্তু আবার সেটি সামনে চলে এল বলে তৃণমূলেরই একটি অংশের দাবি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মনোমালিন্যের সূত্রপাত কিছু দিন আগে। মাটি উৎসবের স্টল চুরির মালপত্র মিলেছিল কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পূর্ণিমা বাউড়ির বাড়ির পাশে। তৃণমূলের কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, সমিতির সভাপতি স্টল চুরির বিষয়টি জানতেন। তখনকার মতো বিষয়টি ধামাচাপা দেন নেতারা। কিন্তু সোমবার পঞ্চায়েত সমিতির দেওয়ালে পোস্টার পড়ে। পোস্টারে লেখা ছিল, “মাটি মেলার ইট বালি পাওয়া গিয়েছে সভাপতির ঘরে। সভাপতি ইট, বালি চোর। সহ সভাপতি তেল চোর।” বাদ পড়েননি দলের ব্লক সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায়ও। তিনিও চুরির জিনিস বিক্রির টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয় পোস্টারে। এরপরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

Advertisement

ঘটনাক্রমে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ সভাপতি দু’জনেই দলের অন্যতম জেলা (শিল্পাঞ্চল) সম্পাদক দেবদাস বক্সীর অনুগামী বলে পরিচিত। দেবদাসবাবু বলেন, “কে বা কারা পোস্টারগুলি দিয়েছে জানা যায়নি। আইনি পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে।” দলের ব্লক সভাপতি অশোকবাবু বলেন, “আমার রাজনৈতিক চরিত্রহননের জন্য এসব করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তের জন্য থানায় অভিযোগ দায়ের করছি।”

সোমবার রাজকুসুম গ্রামের পরাজিত পঞ্চায়েত প্রার্থী, দেবদাসবাবুর অনুগামী নব সামন্ত সমিতিতে গিয়ে বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন দলীয় সদস্য অজয় মজুমদারের সঙ্গে। দলীয় রাজনীতিতে অজয়বাবু ব্লক যুব সভাপতি পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। সমিতির বাইরেও দু’জনের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। অজয়বাবু তাঁর উপরে চড়াও হয়ে একটি সোনার আংটি ও একশো টাকা ছিনিয়ে নিয়েছেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন নববাবু। সোমবার রাতেই অজয়বাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এরপরে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জয়ন্ত মণ্ডল নামে এক তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে, শ্লীলতাহানির চেষ্টা ও তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকির অভিযোগ দায়ের করেন কয়েকজন মহিলা তৃণমূল কর্মী। তাঁদের অভিযোগ, পাড়ার মহিলা তৃণমূল কর্মীরা ‘পিকনিক’ করছিলেন। সেই সময় সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, হাবিবুল্লা, সঞ্জয় দাস-সহ বেশ কয়েকজন মিলে ঘটনাটি ঘটায়। পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দেবাশিস বর্মনকে গ্রেফতার করেছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, ধৃত ও অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই দলীয় রাজনীতিতে দেবদাসবাবুর ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত।

এ দিন পল্লববাবু বলেন, “দলীয় কর্মীদের উপরেই যেভাবে আক্রমণ নেমে আসছে তা বলার নয়। দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে সমস্ত বিষয় জানাব।” দেবদাসবাবুর প্রতিক্রিয়া, “কাঁকসায় দলের কয়েকজন জমির দালালিতে হাত পাকিয়েছে। একশো দিনের কাজ না করে মজুরি তুলছে। প্রতিবাদ করায় নববাবুর মতো পুরনো কর্মীকে মার খেতে হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন