নোংরা কামরা থেকে ট্রেনে দেরি, নালিশ শুনলেন কর্তা

কয়লার বস্তা থেকে ছানার ব্যাগ, তোলা হয় সব কিছুই। নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় অপরিচ্ছন্ন কামরাতেই সফর করতে হয় যাত্রীদের। রাতের ট্রেন দেরি করে আসে নিয়মিত। তাতে কোনও রক্ষী থাকে না। নিরাপত্তার অভাবে ভোগেন যাত্রীরা। টিকিট কাউন্টারের কর্মীরা প্রায়শই দুর্ব্যবহার করেন। স্টেশন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও সুরাহা হয় না। যাত্রীদের কথা শোনার জন্য লোকাল ট্রেনে যাত্রা করে এমনই নানা অভাব-অভিযোগ শুনলেন পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের ডিআরএম বিজয় সেহগাল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০০:৫৬
Share:

লোকাল ট্রেনে যাত্রীদের সঙ্গে আসানসোলের ডিআরএম। নিজস্ব চিত্র।

কয়লার বস্তা থেকে ছানার ব্যাগ, তোলা হয় সব কিছুই। নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় অপরিচ্ছন্ন কামরাতেই সফর করতে হয় যাত্রীদের।
রাতের ট্রেন দেরি করে আসে নিয়মিত। তাতে কোনও রক্ষী থাকে না। নিরাপত্তার অভাবে ভোগেন যাত্রীরা।
টিকিট কাউন্টারের কর্মীরা প্রায়শই দুর্ব্যবহার করেন। স্টেশন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও সুরাহা হয় না।
যাত্রীদের কথা শোনার জন্য লোকাল ট্রেনে যাত্রা করে এমনই নানা অভাব-অভিযোগ শুনলেন পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের ডিআরএম বিজয় সেহগাল। এই ডিভিশনে মঙ্গলবার থেকে পনেরো দিনের একটি বিশেষ অভিযান কর্মসূচি নিয়েছে রেল। আধিকারিকেরা ঘুরে-ঘুরে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যা বোঝার চেষ্টা করবেন এই ক’দিন। তার পরে সেগুলি সমাধানের রাস্তা খোঁজা হবে। কর্মসূচির প্রথম দিন বর্ধমানগামী একটি লোকাল ট্রেনে আসানসোল থেকে রানিগঞ্জ পর্যন্ত যাত্রা করলেন ডিআরএম।

Advertisement

এ দিন দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ ওই ট্রেনে চড়েন ডিআরএম। যাত্রীদের সঙ্গে তাঁর কথা শুরু হতেই অভিযোগের পাহাড় জমতে থাকে। যাত্রীরা অভিযোগ করেন, ট্রেনের কামরাগুলি অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন থাকে, যেন আবর্জনার স্তূপ। কয়লা বোঝাই বস্তা থেকে দুধের ছানা সব কিছুই চাপানোর ফলে দুর্গন্ধে টেকা যায় না। স্টেশন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েও ফল মেলেনি। বর্ধমানের এক যাত্রী অভিষেক রায়ের অভিযোগ, ‘‘আসানসোল স্টেশনে টিকিট কাউন্টারের সামনে কোনও পাখা নেই। প্রচণ্ড ভিড়ে যাত্রীরা কষ্ট পান।’’ আর এক যাত্রী কৌশল্যা দেবীর অভিযোগ, ‘‘টিকিট কাউন্টারের কর্মীরা প্রায় সময়ই যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।’’ বেশ কিছু যাত্রী ডিআরএমের কাছে অভিযোগ করেন, প্রায় দিনই রাতের লোকাল ট্রেনগুলি অনেক দেরিতে চলাচল করে। তাতে রীতিমতো বিপাকে পড়তে হয়। বিশেষত, শীত ও বর্ষায় তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন। কারণ, ট্রেনে কোনও নিরাপত্তা রক্ষী থাকে না। ডিআরএম বলেন, ‘‘আমি এই বিষয়গুলি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখব।’’

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, যাত্রীরা অনেক দিন ধরেই স্টেশনের শৌচালয়গুলির অপরিচ্ছনতা নিয়ে অভিযোগ করছিলেন। এ দিন ডিআরএম প্রথমে সেগুলি পরিদর্শনে যান। শৌচাগারের দশা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। এ নিয়ে অন্য আধিকারিকদের প্রশ্নও করেন। পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা ঠিকা সংস্থার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি। ট্রেনে সফরের সময়ে অন্ডালের বাসিন্দা রঞ্জিত মণ্ডল অভিযোগ করেন, তিনি কয়েক দিন আগে একটি এক্সপ্রেস ট্রেনের সংরক্ষিত কামরার টিকিট নির্দিষ্ট সময়ে বাতিল করে টাকা ফেরত চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে নানা অজুহাতে আসানসোলের বুকিং ক্লার্কেরা ফিরিয়ে দিয়েছেন। ডিআরএম বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করার জন্য ওই ব্যক্তির কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য নেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করার আশ্বাস দিয়েছেন। রানিগঞ্জের এক যাত্রী স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পাখা না চলা নিয়ে অভিযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, ডিআরএম পরিদর্শনে আসছেন বলে এ দিন সেগুলি চালানো হয়েছে। ডিআরএম তাঁকে বিষয়টি দেখা হবে বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু তার পরে ডিআরএম চলে যেতেই পাখাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

Advertisement

আসানসোল ডিভিশনের বেশ কিছু স্টেশনে রাতে আলো না জ্বলা, পানীয় জলের অব্যবস্থা, শৌচালয় বন্ধ থাকা নিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয় ডিআরএম-কে। নানা স্টেশনে পর্যাপ্ত ছাউনি বা বসার জায়গা না থাকা নিয়েও অভিযোগ জানানো হয়। তিনি জানান, অনেক সমস্যা মিটেছে। বাকিগুলিও মেটানোর ধারাবাহিক প্রক্রিয়া চলছে। আসানসোল স্টেশনে চলমান সিঁড়ি কবে চালু হবে, সে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘কাজ চলছে। আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।’’ তিনি আরও জানান, আসানসোল স্টেশনে মূল প্রবেশপথে মেটার ডিটেক্টর বসানোর কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে। কিছু কারিগরি ত্রুটি রয়েছে। তবে শীঘ্রই তা হয়ে যাবে বলে তাঁর আশ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন