নজরদার বিমান বানিয়ে সেরা কালনার শুভঞ্জন

যাত্রী টানা যাবে না, তবে আকাশপথে নজরদারিতে যথেষ্টই দড় এ যন্ত্র। হাতে তৈরি হালকা ওজনের বিমানের মতো দেখতে এ যন্ত্র গড়েই নজর কেড়েছেন কালনার শুভঞ্জন সাহা। সম্প্রতি খড়্গপুর আইআইটিতে আয়োজিত ‘লজ অফ মোশন’ বিভাগের মডেল প্রদর্শনীতে সেরা হয়েছে শুভঞ্জনের এই বিমান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:১৬
Share:

বাড়িতে নজরদার বিমান তৈরিতে ব্যস্ত শুভঞ্জন। —নিজস্ব চিত্র।

যাত্রী টানা যাবে না, তবে আকাশপথে নজরদারিতে যথেষ্টই দড় এ যন্ত্র। হাতে তৈরি হালকা ওজনের বিমানের মতো দেখতে এ যন্ত্র গড়েই নজর কেড়েছেন কালনার শুভঞ্জন সাহা। সম্প্রতি খড়্গপুর আইআইটিতে আয়োজিত ‘লজ অফ মোশন’ বিভাগের মডেল প্রদর্শনীতে সেরা হয়েছে শুভঞ্জনের এই বিমান।

Advertisement

কল্যাণী গর্ভমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এমসিএ বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র শুভঞ্জন বছর চারেক আগে থেকেই এ ধরনের যন্ত্র তৈরির চেষ্টা শুরু করেন। থার্মোকল, ফ্লেক্স, ব্রুসলেস মোটর, স্পিড কন্ট্রোলার, ব্যাটারি, রিসিভার ও আরও নানা জিনিস দিয়ে যন্ত্রটি তৈরিও করে ফেলেন তিনি। বছর দুয়েক আগে কালনা শহর লাগোয়া ওমরপুর সেতুতে মহকুমাশাসক-সহ বেশ কিছু সরকারি আধিকারিকের সামনে যন্ত্রটি পরীক্ষামূলক ভাবে চালান শুভঞ্জন। ২০১৪ সালে অঘোরনাথ পার্কে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানেও দেখানো হয় বিমানের মতো ওই যন্ত্র। এরপরে মাস তিনেক আগে ইন্টারনেটে খড়্গপুরে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানের কথা জানতে পারেন শুভঞ্জন। সেই মতো নথিপত্র পাঠিয়েও দেন। তারপরেই হাতেকলমে যন্ত্রটি দেখানোর ডাক আসে খড়্গপুর আইআইটি থেকে। সেখানে বিমান সংক্রান্ত ১৪০টি মডেল নিয়ে হাজির হন দেশের নানা প্রান্তের প্রতিযোগীরা। প্রথম রাউন্ডে ৩০টি, সেখান থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে ৩টি মডেল বেছে নেন বিশেষজ্ঞরা। শুভঞ্জন জানান, যন্ত্রটি কতক্ষণ ভেসে থাকতে পারে, কী কী জিনিস দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, বাজারে সে সব যন্ত্র সহজে মেলে কি না ইত্যাদি বিষয় খুঁটিয়ে জানতে চান বিশেষজ্ঞরা। তারপরেই সেরা হিসেবে বেছে নেওয়া হয় শুভঞ্জনের তৈরি মডেলটি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান পায় নাগপুর ও বিশাখাপত্তনমের দুটি মডেল।

কি রয়েছে এই যন্ত্রে? শুভঞ্জন জানান, বিমানের আকারে তৈরি যন্ত্রটির ওজন এক থেকে দেড় কেজি। নিজের ওজনের সমপরিমাণ ওজন বহন করতে সক্ষম এই যন্ত্রটি। মাটি থেকে শূন্যে উঠে এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অনায়াসে উড়তে পারে এটি। সঙ্গে ভেতরে লাগানো ক্যামেরার সাহায্যে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় নজরদারিও চালাতে পারে। শুভঞ্জনের কথায়, “ক্যামেরায় ওঠা ছবি সোজা ল্যাপটপে দেখা যেতে পারে।” তাঁর দাবি, এই যন্ত্র সেনাবাহিনীর কাজে লাগতে পারে। আবার এটি ব্যবহার করে কোথাও অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটেছে কি না, বা প্রাকৃতির দুর্যোগের পরে ওষুধপত্র পাঠানোর কাজ করা যেতে পারে। এ ছাড়া জমিতে কীটনাশক ছড়ানোর ক্ষেত্রেও যন্ত্রটি ব্যবহার করা যেতে পারে। শুভঞ্জনের দাবি, আইআইটির অধ্যাপকদের কাছ থেকে যন্ত্রটি কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, সে ব্যাপারে কিছু পরামর্শ মিলেছে। চেষ্টা চলছে উড়ানোর সময় বাড়িয়ে ৫-৬ ঘণ্টা করার। পাশাপাশি, নজরদারি এলাকা বাড়ানো বা বেশি মাল বহনের চেষ্টাও করা হচ্ছে।

Advertisement

ছেলের সাফল্যে গর্বিত অজয়কুমার সাহা। তিনি বলেন, “ছোট থেকেই শুভঞ্জনের আগ্রহের বিষয় ছিল বিমান। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই বিমানের মতো আকাশে উড়বে এমন কিছু তৈরির চেষ্টা শুরু করে ছেলে। ২০০৩ সালে আমাদের এক আত্মীয় সেনাবাহিনীর গুলিতে মারা যাওয়ার পরে বিষয়টিতে আরও ডুবে যায় শুভঞ্জন।” অজয়বাবুর দাবি, শত্রুবাহিনীর উপর নজরদারি চালাতে পারে এমন যন্ত্র তৈরি করতে চেয়েছিল ছেলে। শুভঞ্জনের সাফল্যের খবর পেয়ে তাঁর বাড়িতে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন