নতুনদের ঝোঁক বিজেপিতে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার তৃণমূল

১৬-০-এর শহরেও তৃণমূলকে টক্কর দিল বিজেপি। ২০১০ সালের পুরভোটে মেমারিতে সিপিএমকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ১৬টি ওয়ার্ডে জিতেছিল তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। বিজেপি সে বার প্রার্থী দিয়েছিল মাত্র একটি ওয়ার্ডে। তবে এ বারের লোকসভায় মোট ২৬,৩১০টি ভোটের মধ্যে ১২৩৩১টি পেয়েছে তৃণমূল, ৭৩৭৩ ভোট পেয়েছে সিপিএম, ৪৩২০ ভোট পেয়েছে বিজেপি ও ১৩৮৫টি ভোট পেয়েছে কংগ্রেস। তৃণমূলেরই একাংশের খবর, নতুন ভোটারদের বড় অংশই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছে।

Advertisement

রানা সেনগুপ্ত

মেমারি শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৪ ০১:৩৭
Share:

১৬-০-এর শহরেও তৃণমূলকে টক্কর দিল বিজেপি।

Advertisement

২০১০ সালের পুরভোটে মেমারিতে সিপিএমকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ১৬টি ওয়ার্ডে জিতেছিল তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। বিজেপি সে বার প্রার্থী দিয়েছিল মাত্র একটি ওয়ার্ডে। তবে এ বারের লোকসভায় মোট ২৬,৩১০টি ভোটের মধ্যে ১২৩৩১টি পেয়েছে তৃণমূল, ৭৩৭৩ ভোট পেয়েছে সিপিএম, ৪৩২০ ভোট পেয়েছে বিজেপি ও ১৩৮৫টি ভোট পেয়েছে কংগ্রেস। তৃণমূলেরই একাংশের খবর, নতুন ভোটারদের বড় অংশই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছে।

গত পুরভোটের তুলনায় মেমারিতে অন্তত ৬টি ওয়ার্ডে জয়ের মার্জিন কমেছে তৃণমূলের। ওই ওয়ার্ডগুলি হল ২, ৩, ৫, ১১, ১২ ও ১৪। লোকসভা ভোটের নিরিখে নিজের ওয়ার্ডে পিছিয়ে পড়েছেন মেমারির উপ-পুরপ্রধান হোসেনারা শেখ। তবে কেন পিছিয়ে পড়া, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি হোসেনারা। তিনি বলেন, “খতিয়ে না দেখে কিছু বলা সম্ভব নয়।” পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ীর ওয়ার্ডেও জয়ের মার্জিন কমেছে। গত পুরভোটে তিনি পেয়েছিলেন ৯৬৫ ভোট। জয়ের ব্যবধান ছিল ৪৭৬। এবার তাঁর ওয়ার্ডে তৃণমূলের জয়ের মার্জিন দাঁড়িয়েছে ২৮৮।

Advertisement

তৃণমূলের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বপন ঘোষাল বলেন, “ভাগ্য ভাল যে অদূর ভবিষ্যতে সিপিএম, বিজেপি আর কংগ্রেস একজোট গড়ে এই পুরসভায় লড়বে না। যদি লড়ে, তাহলে পুরবোর্ড দখলে রাখা সম্ভব হবে না কোনমতেই।” এ বারও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ভোট ভাগ না হলে বেশ কয়েকটা ওয়ার্ডে তৃণমূলের জয়ে প্রশ্নচিহ্ন উঠে যেত।

এক বছর পরে এ শহরে ফের পুরভোট। সেখানে কাজের খতিয়ান দেখিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে টক্কর দিতে হবে তৃণমূলকে। তার আগে এভাবে খোদ উপপুরপ্রধানের ওয়ার্ডে হারের মধ্যে অশনি সঙ্কেত দেখছে দলের একাংশ। এমনিতেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব লেগেই রয়েছে মেমারিতে। কোন্দলের জের এতটাই প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে যে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর চেয়ারম্যান স্বপন বিষয়ীর অপসারণ চেয়ে দলনেত্রীকে চিঠি লিখেছেন। চিঠির প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে সর্বভারতীয় তৃণমূল সভাপতি মুকুল রায়কেও। এক কাউন্সিলার বলেন, “স্বপন বিষয়ী একেবারে অযোগ্য চেয়ারম্যান। তাই তাঁর ১২ নম্বরে কাজের জোয়ার বয়ে গেলেও মানুষের একাংশ তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আমরা যে কোনও মূল্য ওঁর অপসারণ চেয়ে দলের কাছে দরবার করেছি। দল এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে যত দেরি করবে, ততই আগামী বছর আমাদের হারের সম্ভবনা বাড়বে।”

সম্প্রতি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ভেস্তে যায় মেমারি পুরবোর্ডের মিটিং। কাউন্সিলর স্বপন ঘোষাল দাবি তোলেন, গত ছ’মাস বোর্ড মিটিংয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতিলিপি পাওয়া যায়নি। আরও কয়েকজন তাঁকে সমর্থনও করেন।

পুরপ্রধান স্বপনবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “আমি যদি অযোগ্য হতাম, তবে দিদি আমাকে কবেই পদ থেকে অপসারিত করতেন। তা যখন করেননি, তখন বুঝতে হবে, আমি ঠিক কাজই করছি। আমাদের দলের কিছু ভূঁইফোড় কাউন্সিলর নানা কথা বলছেন। ওদের কথায় কান দেবেন না।” তাঁর দাবি, “এই পুরসভায় আমরা তো সার্বিক ভাবে পাঁচ হাজার ভোটের মার্জিন রেখে জিতেছি। লোকসভা ভোটে বিজেপির উত্থানের কারণে হয়তো এই মার্জিন কম দেখাচ্ছে। কিন্তু দেখবেন পুরভোটে আমরা জয়ের ধারা বজায় রাখব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন