পুজোয় দেখা মেলে না কার্তিকেরই

কার্তিক পুজোয় দেখা নেই কার্তিকেরই। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় কার্তিক পুজোর ধারাটাই এমন। অনেকটা রাসের ঢঙে কোথাও শিব-পাবর্তী, কোথাও রণচণ্ডী, কোথাও কালী পুজো হয় এই দু’দিন। কার্তিকের দেখা মেলে বড়জোর দু-চারটি মণ্ডপে। এলাকার প্রবীণদের কাছ থেকে জানা যায়, দেড়শো বছরেরও বেশি সময় ধরে কার্তিক পুজোর চল রয়েছে এ অঞ্চলে। পুজো শুরুর কারণ খুঁজতে গিয়েও সন্ধান মেলে রকমারি গল্পের।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫৬
Share:

পুজোর মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র।

কার্তিক পুজোয় দেখা নেই কার্তিকেরই। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় কার্তিক পুজোর ধারাটাই এমন। অনেকটা রাসের ঢঙে কোথাও শিব-পাবর্তী, কোথাও রণচণ্ডী, কোথাও কালী পুজো হয় এই দু’দিন। কার্তিকের দেখা মেলে বড়জোর দু-চারটি মণ্ডপে।

Advertisement

এলাকার প্রবীণদের কাছ থেকে জানা যায়, দেড়শো বছরেরও বেশি সময় ধরে কার্তিক পুজোর চল রয়েছে এ অঞ্চলে। পুজো শুরুর কারণ খুঁজতে গিয়েও সন্ধান মেলে রকমারি গল্পের। শোনা যায়, একসময় পাশের নবদ্বীপের রাসযাত্রা দেখতে ভিড় জমাতেন পূর্বস্থলীর লোকেরা। কিন্তু ভিন এলাকায় পসার না জমায় এবং নবদ্বীপের পণ্ডিতদের সঙ্গে পূর্বস্থলীর পণ্ডিতদের মতানৈক্যের কারণে নিজেদের এলাকাতে বড় উৎসবের পরিকল্পনা করেন তাঁরা। কার্তিক পুজোর শুরু সেই তখন থেকেই।

এখন মাসখানেক আগে থেকেই পুজোর প্রস্তুতি শুরু করে বিভিন্ন ক্লাব। সোম-মঙ্গল দু’দিন ধরে কার্তিক পুজো ও বিসর্জনের শোভাযাত্রা চলে পূর্বস্থলীতে। এ বছর পূর্বস্থলী, লক্ষ্মীপুর, পলাশফুলি, চুপি, কাষ্ঠশালী জুড়ে প্রায় ১২০টি পুজো হয়েছে। পূর্বস্থলী স্টেশন লাগোয়া ভারতমাতা পুজো কমিটির পুজোটি এলাকার অন্যতম বড় পুজো। এ বছর দক্ষিণ ভারতের মিনাক্ষী মন্দিরের আদলে মণ্ডপ গড়েছে তারা। ৬০ ফুট উঁচু মণ্ডপে রয়েছে ভারতমাতার মূর্তি ও বন্যা কবলিত এলাকার চিত্র। পুজোর উদ্বোধন করেছেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। মণ্ডপের সামনের বিশাল মাঠ জুড়ে বসেছে মেলাও। আদি স্টেশন বাজার বারোয়ারিতে পুজো হয়েছে শিব-পাবর্তীর। বাঙালি সঙ্ঘের মূর্তি শ্মশানকালী। বটগাছের গুঁড়ির মধ্যে প্রতিমা সাজিয়েছেন তারা। পাশে রয়েছে শ্মশানের নানা দৃশ্য। পূূর্বস্থলী থানার মাঠে রেনবো ইয়ুথ এ বার পুজো করেছে শিব-শক্তির। হাসপাতাল পাড়ার মূর্তি আবার কমলেকামিনী। পলাশফুলির সদগোপ পাড়া আবার রাম-রাবণের যুদ্ধকে থিম করেছে। এছাড়া চৌরঙ্গি, কৈবর্তপাড়া, ধারাপাড়া মহিষমদির্নীর বড় মূর্তি গড়ে পুজো করেছে। নানা স্বাদের মণ্ডপের সঙ্গে আলোর বাহারও নজর কাড়ে। রাস্তা জুড়ে নানা থিমে আলো সাজায় অনেক ক্লাবই।

Advertisement

এলাকা ঘুরে যে দু’পাঁচটা কার্তিক চোখে পড়ে তাদের আবার নামের বৈচিত্র্য নজর কাড়ে। যেমন, কাষ্ঠশালীর শ্যামসুন্দরতলার মূর্তি পরিচিত ‘চেন কার্তিক’ নামে। মূর্তির গায়ে চেন থাকাটা এখানে বাধ্যতামূলক। এলাকাবাসীর দাবি, দুষ্টের দমন করতেই কার্তিকের এমন সাজ। আর একটি ক্লাবের কার্তিকের নাম আবার ‘বোম কার্তিক’। মূর্তির হাতে সুতো জড়ানো বোম এ পুজোয় বাধাধরা।

তবে বর্তমানে শোভাযাত্রার তেমন ধুম নেই পূর্বস্থলীতে। দেড় দশক আগেও চুপি-হাটতলা এলাকায় প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা হত। কিন্তু প্রায়শই গণ্ডগোল বাধায় বড় ক্লাবগুলি কার্তিক লড়াই থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। তবে পুজো উপলক্ষ্যে পুলিশ, প্রশাসনের তরফে সাধারণ মানুষের যাতে কোনও অসুবিধে না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা হয়। বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শৌচাগার,পানীয় জলের অভাব যাতে না হয়, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে। পর্যাপ্ত পুলিশেরও বন্দোবস্ত রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন