বৃহস্পতিবার পিসিসি-সিপিআই (এমএল) অফিসে বাবুল সুপ্রিয়। —নিজস্ব চিত্র।
অন্য যে কোনও দলের প্রার্থী আসতে পারেন তাঁদের অফিস বা নিহত নেতার বাড়িতে। কিন্তু স্বাগত নয় সিপিএম। এক দিকে যখন সিপিএম প্রার্থীর মনোনয়ন পেশের সময়ে প্রস্তাবক হচ্ছেন সিপিআই (এমএল) নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, তখন পিসিসি-সিপিআই (এমএল)-এর তরফে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের এমন অবস্থানের কথা।
পাণ্ডবেশ্বর ও অন্ডালে পিসিসি-সিপিআই (এমএল) এবং সিপিআই (এমএল)-এর প্রভাব রয়েছে দীর্ঘ দিনের। তবে গত তিন দশকে নানা ভোটে নানা পক্ষের সঙ্গে জোট বেঁধেছে তারা। এ বারের লোকসভা ভোটে পিসিসি-সিপিআই (এমএল) সরকারি ভাবে কোনও দলকে সমর্থনের কথা জানায়নি। তবে পাণ্ডবেশ্বরের কেন্দ্রা এলাকায় প্রচারে গিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূলদু’দলের প্রার্থীকেই সহানুভূতি জানাতে দেখা গিয়েছে ওই দলের নিহত নেতা গণেশ পালের পরিবারকে। বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় বৃহস্পতিবার গিয়েছিলেন পিসিসি-সিপিআই (এমএল)-এর অফিসেও। মালা দেন গণেশবাবুর মূর্তিতে। সে দিনই আবার সিপিআই (এমএল) নেতা সোমনাথবাবু নিজের বেশ কিছু অনুগামী নিয়ে দাঁড়িয়েছেন সিপিএম প্রার্থী বংশগোপাল চৌধুরীর পাশে। তৃণমূল মানুষের সঙ্গে নেই, তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
পাণ্ডবেশ্বরের কেন্দ্রা পঞ্চায়েতে ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত বামেদের সঙ্গী ছিল পিসিসি-সিপিআই (এমএল)। সেই সময়ে ওই পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন তাদের দল থেকেই। উপপ্রধান সিপিআইয়ের। ১৯৯৮ সালে পিসিসি-সিপিআই (এমএল) বিজেপি সমর্থিত নির্দল ও তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধে এই পঞ্চায়েত দখল করে। ২০০৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের আগে জানুয়ারিতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে খুন হন পিসিসি-সিপিআই (এমএল)-এর রাজ্য সম্পাদক গণেশবাবু। অভিযোগ ছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রায় সে বার সিপিএম পঞ্চায়েত দখল করলেও নিহত গণেশবাবুর স্ত্রী করুণাময়ী পাল-সহ ছ’জন পিসিসি-সিপিআই (এমএল) প্রার্থী জেতেন। সে বছরই আবার অন্ডালের উখড়ায় সিপিএমের সঙ্গে জোট করে সিপিআই (এমএল)। ২০০৮-এ পরের পঞ্চায়েত ভোটে সেখানে তারা জোট বাঁধে কংগ্রেস-তৃণমূলের সঙ্গে।
২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে পাণ্ডবেশ্বর কেন্দ্রে তৃণমূলের সঙ্গে জোট হয় পিসিসি-সিপিআই (এমএল) এবং সিপিআই (এমএল)-এর। কিন্তু এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীর হারের পরে তৃণমূলের সঙ্গে মনোমালিন্য শুরু হয় তাদের। এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে গোলমালও হয়। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে আবার কেন্দ্রা ও উখড়া, দু’জায়গাতেই সিপিএমের সঙ্গে জোট বাঁধে দুই নকশাল দল। সেখানে এ বার লোকসভা ভোটে সিপিএমের বিরোধিতা করছে পিসিসি-সিপিআই (এমএল)। দলের নেতা সাধন দাস বলেন, “তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেন প্রচারে এসে গণেশ পালের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। বাবুল সুপ্রিয় আসতে চেয়েছিলেন। আমরা আপত্তি করিনি। এর বেশি আর কোনও সম্পর্ক নেই। তবে আমরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি, সিপিএমকে কোনও ভাবে স্বাগত জানানো হবে না।” তবে কাউকে তারা সমর্থন করছেন কি না, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। সিপিএমের দামোদর জোনাল সম্পাদক তুফান মণ্ডল বলেন, “এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। যা জবাব দেওয়ার, মানুষ দেবেন।”
বিজেপি-র জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকার বলেন, “আমরা প্রচারে গিয়ে ওদের অফিসে গিয়েছিলাম। আমরা তো প্রচারে বেরিয়ে সকলের কাছেই যাচ্ছি।” তৃণমূল নেতা নরেন চক্রবর্তী জানান, গণেশ পাল হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ তাঁরা বরাবরই করে আসছেন। সে কারণেই প্রচারে গিয়ে তাঁদের প্রার্থী গণেশ পালের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে নরেনবাবুর দাবি, “গণেশ পালের মৃত্যুর বছরেই তাঁর বন্ধু সোমনাথবাবু সিপিএমের হাত ধরেছিলেন। এই দুই নকশাল দল বারবার জোট বদলে প্রমাণ করেছে, ওদের আসলে কোনও আদর্শ নেই।”