জমিজট এখনও পুরোটা খোলেনি। কিন্তু সমাধান যে হাতের নাগালেই, সে ব্যাপারে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই) এক রকম নিশ্চিত। আর সেই ভরসাতেই এ বার শুরু হয়ে গেল পানাগড় বাইপাস নির্মাণের কাজ।
প্রথমে পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়ক থেকে বায়ুসেনার ছাউনির দিকে এবং পানাগড় রেল ওভারব্রিজ থেকে নির্মীয়মাণ বেসরকারি সার কারখানার পাশ দিয়ে মাটি সমান করার কাজ শুরু করেছে এনএইচএআই। সংস্থার দুর্গাপুরের প্রজেক্ট ডিরেক্টর কৃষ্ণ মুরারী বলেন, “পুরোদমে কাজ চলছে। আপাতত কোনও সমস্যা দেখছি না। পরে যা হবে দেখা যাবে।”
কলকাতা থেকে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল ছুঁয়ে ঝাড়খণ্ড হয়ে দিল্লি চলে যাওয়া ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ২০০১ সালে কেন্দ্রীয় স্বর্ণ চতুষ্টয় জাতীয় সড়ক প্রকল্পে দু’লেন থেকে চার লেনের করা হয়েছিল। কিন্তু দোকান, বাজার, বাড়িঘর ভাঙতে দেবেন না জানিয়ে বাধা দেন পানাগড়ের সওয়া তিন কিলোমিটার এলাকার কিছু বাসিন্দা। ফলে দার্জিলিং মোড় থেকে পানাগড় বাজার পেরিয়ে রেল ওভারব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা কার্যত গলার ফাঁস হয়ে রয়ে যায়। নিত্যদিন সেই ফাঁসে যানজটে হাঁসফাঁস করে যাতায়াতের মসৃণ গতি।
এই বিপত্তি এড়াতে যে ওই সরু অংশটুকুকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া ছাড়া গতি নেই, তা অনেক আগেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। তখনই পরিকল্পনা হয় বাইপাস গড়ার। কিন্তু যে সব এলাকার উপর দিয়ে সেটি যাবে, সেখানকার কিছু বাসিন্দাও বেঁকে বসেন। মূলত জমির দর নিয়েই টানাপড়েন চলতে থাকে। তার অনেকটাই মিটে গিয়েছে। যাঁরা এখনও চেক নেননি, তাঁদেরও একটা বড় অংশ বাইপাসের গুরুত্ব অস্বীকার করতে পারছেন না।
এই পরিস্থিতিতেই কোমর বেঁধে নেমেছে এনএইচএআই। ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার বারোয়াড্ডা থেকে বর্ধমান জেলার পানাগড় পর্যন্ত ১১৪ কিমি রাস্তা ছ’লেন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বাজেট প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যেই ধরা আছে ৮ কিমি পানাগড় বাইপাস তৈরির খরচ। সেটি যাওয়ার কথা কাঁকসা, পন্ডালি, ধরলা ও সোঁয়াই মৌজার উপর দিয়ে। কোন মৌজায় কত জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, ২০১২-র ফেব্রুয়ারিতে তার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল এনএইচএআই। কেন্দ্রীয় ওই সংস্থার বিশেষ আইনবলে অধিগ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয় বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসককে (ভূমি অধিগ্রহণ)।
গোড়ায় বাধা এসেছিল। ২০১৩-র জানুয়ারিতে ‘সোঁয়াই-পন্ডালি-ধরলা জমিরক্ষা কমিটি’ গঠিত হয়। বেশ কয়েক দফা শুনানির পরে অবশ্য জমিমালিকেরা জমি দিতে সম্মত হন। একর পিছু সর্বোচ্চ প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা হারে ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত হয়। সোঁয়াই ও পন্ডালির জমিমালিকেরা চেক নিয়ে নেন। কিন্তু ধরলার জনা দশেক চাষি তাঁদের জমি ‘তিনফসলি’ বলে দাবি করে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
অতিরিক্ত জেলাশাসকের (ভূমি অধিগ্রহণ) দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে ধরলায় একর পিছু ক্ষতিপূরণ ৬০ লক্ষ টাকা বাড়িয়ে ৬৬ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। সেখানকারও সব জমিমালিক চেক নিয়েছেন। ধরলা মৌজার জমিমালিক সংগঠনের আহ্বায়ক শ্রীকান্ত কোনার বলেন, “আমরা জমি দেব না, কখনও বলিনি। নায্য ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলাম, পেয়েছি। সুফল পেয়েছেন পন্ডালি ও সোঁয়াই মৌজার চাষিরাও।” জমিরক্ষা কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা কিষাণ কর্মকার বলেন, “আমাদের তিন মৌজার সবাই জমি দিয়েছেন। চেক দেওয়া হচ্ছে ধাপে ধাপে। কোনও সমস্যা নেই।”
কাঁকসা মৌজার ইজ্জতগঞ্জ ও পানাগড় গ্রামেও কিছু জমিমালিক ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন। কিন্তু মাধবমাঠ-মাস্টারপাড়া প্রভৃতি এলাকায় এখনও কিছু সমস্যা রয়ে গিয়েছে। ২০০৯ সালে ওই এলাকায় একর পিছু ১০ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বেশ কিছু জমি অধিগ্রহণ করেছিল রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম। সেখানকার কয়েক জন জমিদাতা এখন নতুন হারে ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন। তাঁদের প্রায় ১০ কাঠা জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল জানিয়ে মাস্টারপাড়ার বিশ্বজিৎ দাসের প্রশ্ন, “শিল্প হয়নি, কিন্তু এখন সেই জমিতে রাস্তা হবে। আমরা কেন অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করব না?” মাস্টারপাড়ায় কিছু বাড়ি ভাঙা পড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানকার ভূমি ও গৃহরক্ষা কমিটির সম্পাদক সন্তোষকুমার দাসের দাবি, “শুধু ক্ষতিপূরণ নয়, নায্য পুনর্বাসনও দিতে হবে।”
এ সব সমস্যাকে অবশ্য আমল দিতে চাইছেন না অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) উৎপল বিশ্বাস। তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত ধাপে-ধাপে প্রায় ২৮১ কোটি টাকা দিয়েছে এনএইচএআই। চেক বিলির কাজ চলছে। উৎপলবাবু বলেন, “কিছু সমস্যা এখনও আছে। আমরা এনএইচএআইয়ের নজরে এনেছি। আশা করছি, দ্রুত সব মিটে যাবে।” শিল্পপতি থেকে সাধারণ নিত্যযাত্রীরাও চাইছেন, যত শিগগির সম্ভব বাইপাস গড়া হোক।
শিল্পপতি বিপিন ভোরা নিয়মিত কলকাতা থেকে দুর্গাপুর যাতায়াত করেন। তাঁর বক্তব্য, “যেখানে দু’আড়াই ঘন্টা লাগার কথা, পানাগড়ের যানজটের জন্য চার-সাড়ে চার ঘন্টাও লেগে যায়। বাইপাসের কাজ শুরু হয়েছে জেনে ভাল লাগছে। আশা করি, দ্রুত কাজ শেষ হবে।” দুর্গাপুরের দ্য মিশন হাসপাতালের চেয়ারম্যান সত্যজিৎ বসুও বলেন, “পানাগড় মানে তো বিভীষিকা! বাইপাসই মুক্তির এক মাত্র রাস্তা। দ্রুত কাজ শেষ হোক।”
একই কথা বলছেন ইতিমধ্যে জমি দিয়ে দেওয়া চাষিরাও। পন্ডালি মৌজার চরণদাস পাল, সুকুমার ঘোষেরা বলেন, “উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পেয়ে আমরা বাইপাসের জন্য জমি দিয়েছি। কাজটা শেষ হলে হাজার-হাজার মানুষ উপকৃত হবেন।” যাঁরা এখনও জমি দেননি, তাঁরাও কেউ বাইপাসের গুরুত্ব অস্বীকার করতে পারছেন না। মাস্টারপাড়ার নিতাই সরকারের কথায়, “এত বড় উদ্যোগ। আমরা তো বিরোধিতা করতে পারি না। পানাগড়ের যানজট সত্যিই ভয়াবহ সমস্যা। কিন্তু ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের বিষয়টা যেন প্রশাসনের মাথায় থাকে, এইটুকুই আমরা চাই।”
থানায় ‘নিখোঁজ’ ডাক্তার
নিজস্ব সংবাদদাতা • কালনা
আগাম খবর না দিয়ে আচমকা ছুটি নিয়ে মোবাইল বন্ধ করে বসে থাকায় এক শেখ সওকত আলি নামে এক শিশু বিশেষজ্ঞের বিরুদ্ধে কালনা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন কালনা হাসপাতালের সুপার। শনিবার সেই চিকিৎসক নিজেই ফোন করলেন থানায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ওই চিকিৎসক থানার এক আধিকারিকের ফোনে ফোন করে জানতে চান, “আমি কি মিসিং?” এরপরে পুলিশ তাঁকে থানায় এসে দেখা করতে বলে। এ দিন বিকেলে থানায় দেখা ওই চিকিৎসক। পুলিশকে ওই শিশু চিকিৎসক জানান, তিনি ছুটিতে ছিলেন। সেই কারণেই কাজে যোগ দেননি। জরুরী প্রয়োজনে ডেকে আনার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাড়িতে চিঠি পাঠাতে পারতেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ফোন না ধরা প্রসঙ্গে ওই শিশু চিকিৎসক পুলিশকে জানান, তাঁর ফোন সরকারি নয়। তাই হাসপাতালের ফোন ধরতে তিনি বাধ্য নন। মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সন্ধ্যায় ওই চিকিৎসকের দু’জন পরিচিত একটি চিঠি নিয়ে হাসপাতালের সুপারের অফিসের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু সুপার না থাকায় সেই চিঠি ‘রিসিভ’ হয়নি। হাসপাতালের সুপার অভিরূপ মণ্ডল বলেন, “শুক্রবার সারা দিনের পরে শনিবারও হাসপাতালের পক্ষ থেকে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন তোলেননি।” চিকিৎসক না থাকার কারণে শনিবারও হাসপাতালের শিশু ও মেডিসিনের বহির্বিভাগ বন্ধ ছিল।