পুলক চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র।
তিন বছরে চেয়ারে বসলেন মোট পাঁচ জন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান পদে এমনই ঘনঘন পরিবর্তন হচ্ছে। শুক্রবার এই পদে এলেন পুলক চক্রবর্তী।
রাজ্যে তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন গলসির স্বপন ঘোষ। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। তার পরে এই পদে আসেন পূর্বস্থলীর বাসিন্দা, সেখানকার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস নাগ। রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা নেতা স্বপন দেবনাথের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তিনি। ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পরে দেবাশিসবাবুকে ওই পদ থেকে সরানো হয়।
দেবাশিসবাবুর অপসারণের পরে চেয়ারপার্সন হন পপি বর্মণ। কিন্তু তিনি পদে ছিলেন দিন কয়েক২৪ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত। তার পরে ফের স্বপন ঘোষকে ওই পদে নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার তাঁকে পদ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি সে দিনই পদত্যাগ করেন। শুক্রবার পুলকবাবু দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই পদে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি বর্ধমানের বাসিন্দা নন। তবে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলকবাবু বর্ধমানের বেশ কয়েকটি ব্লকে দলের পর্যবেক্ষক। তিনি কি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হওয়ার আগে পর্যবেক্ষক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন? সে প্রশ্ন এড়িয়ে পুলকবাবু বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী আমাকে বলেছেন এই পদে যোগ দিতে। এর চেয়ে বেশি কিছু আমি বলতে পারব না।”
তবে এই পদে এত ঘনঘন পরিবর্তনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের শিক্ষক নেতাদেরই একাংশ। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে টেট পরীক্ষা-সহ কয়েকটি বিষয়ে গোলমালের অভিযোগ উঠেছিল। স্বপনবাবুর বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। দেবাশিসবাবু এ নিয়ে কোনও কথা বলতে না চাইলেও স্বপনবাবুর মন্তব্য, “দল ভাল বুঝেছে বলেই আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল না।” জেলা তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি রথীন মল্লিকের বক্তব্য, “কাজে গতি আনতে ও স্বচ্ছ প্রশাসন গড়তেই পুলকবাবুকে ওই পদে নিয়োগ করা হয়েছে।”
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “স্বপনবাবুকে পদে আনার পরে জানা গেল, উনি আগে এক বার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। তাঁকে তাই আর রাখা হয়নি। পুলকবাবু প্রায় দশ বছর ধরে শিক্ষাক্ষেত্রে জড়িয়ে রয়েছেন। তাই তাঁকেই বেছে নিয়েছি আমরা।” তিনি আরও বলেন, “আমরা অতীতে চাকরিতে নিয়োগ বা বদলি নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছিলাম বর্ধমান থেকেই। তাই ঠিক করা হয়েছে, শিক্ষক নিয়োগ বা কাউকে বদলি করতে হলে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানেরা সুপারিশ করতে পারবেন। কিন্তু এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা দফতর নিযুক্ত সেল।”