পারিবারিক আবহে সর্বজনীনের স্বাদ শিল্পাঞ্চলের লক্ষ্মীপুজোয়

দুর্গাপুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই লক্ষ্মীপুজোর আনন্দে মেতে উঠেছে খনি ও শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দারা। কোথাও ঘরোয়া ভাবে, আবার কোথাও সর্বজনীন-বিভিন্ন ভাবে পুজিত হচ্ছেন দেবী লক্ষ্মী। অন্ডালের দক্ষিণখণ্ড গ্রামের মুখোপাধ্যায় বাড়ির লক্ষ্মীপুজো এ বছর ৪৪ বছরে পড়ল। বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছে দক্ষিণখণ্ড পল্লি উন্নয়ন সমিতি। নামে বাড়ির পুজো হলেও এই পুজো আসলে সর্বজনীন।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

অন্ডাল শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৩৪
Share:

দক্ষিণখণ্ড পল্লির একটি লক্ষ্মীপুজোর মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র।

দুর্গাপুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই লক্ষ্মীপুজোর আনন্দে মেতে উঠেছে খনি ও শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দারা।

Advertisement

কোথাও ঘরোয়া ভাবে, আবার কোথাও সর্বজনীন-বিভিন্ন ভাবে পুজিত হচ্ছেন দেবী লক্ষ্মী। অন্ডালের দক্ষিণখণ্ড গ্রামের মুখোপাধ্যায় বাড়ির লক্ষ্মীপুজো এ বছর ৪৪ বছরে পড়ল। বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছে দক্ষিণখণ্ড পল্লি উন্নয়ন সমিতি। নামে বাড়ির পুজো হলেও এই পুজো আসলে সর্বজনীন। এ বারের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দিরের আদলে। পল্লি উন্নয়ন সমিতির সদস্য উদয়কুমার চট্টোপাধ্যায় জানান, মুখোপাধ্যায় বাড়িতে ওই পরিবারের পরিচালনায় কয়েক দশক লক্ষ্মীপুজো হওয়ার পরে মুখোপাধ্যায় পরিবারের সম্মতিতেই গ্রামের পল্লি উন্নয়ন সমিতি পুজোর দায়িত্ব নেয়। সেই থেকেই গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ এই পুজোয় যোগ দেন। লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করে এখানে মেলা বসে। স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

দক্ষিণখণ্ডের অদূরেই খান্দরা গ্রামে সিংহ বাড়ির লক্ষ্মীপুজোর বয়স প্রায় ১৫৮ বছর। পরিবারের সদস্যরা জানান, এই পুজো শুরু করেছিলেন তাঁদের পূর্বপুরুষ সুধাকৃষ্ণ সিংহ। এটি গ্রামের একমাত্র লক্ষ্মীপুজো। এই বাড়ির পুজোয় লক্ষ্মী প্রতিমার দু’পাশে একটি করে পরীর মূর্তি রাখা হয়। সিংহ পরিবারের নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি অনুপ সিংহ বলেন, “পুর্বপুরুষদের কাছে শুনেছি সুধাকৃষ্ণবাবু মুর্শিদাবাদের কান্দি থেকে এসে এখানে বসবাস শুরু করেছিলেন। গ্রামে লক্ষ্মীপুজোর প্রচলন না থাকায় কারণেই তিনি এই পুজো শুরু করেছিলেন।” পুজোর পরে এখানেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। খান্দরা গ্রামের বাসিন্দা বুধো সরকারের দাবি, “সিংহবাড়ির পুজো মণ্ডপ এলাকার শিল্পীদের প্রতিভা প্রকাশের মঞ্চ হয়ে উঠেছে।”

Advertisement

পাণ্ডবেশ্বরে তিনটি পারিবারিক লক্ষ্মীপুজো আয়োজিত হয়। চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে হয় দু’টি পুজো। এর মধ্যে একটি সরকারি পুজো বলে পরিচিত। এই পুজোর উদ্যোক্তা উৎপল চট্টোপাধ্যায় জানান, ১৮০ বছর আগে তাঁদের বাড়ির দুর্গাপুজোর সঙ্গেই লক্ষ্মীপুজো শুরু হয়েছিল। চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে অনুষ্ঠিত অন্য পুজো কমিটির সদস্য সৌম্যব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমার দাদু প্রয়াত নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায় তাঁর বাবার সহযোগিতায় এই লক্ষীপুজো শুরু করেছিলেন। গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ এই পুজোয় যোগ দেন।” জামুড়িয়ার নন্ডীগ্রামে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতেও আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হয় লক্ষ্মীপুজো। এই পরিবারের সদস্যরা জানান, পুজো শুরু হয়েছিল হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। পরিবারের প্রবীণ সদস্য কৃষ্ণকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “আমার মা লক্ষ্মীপুজো করার জন্য স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। তার ভিত্তিতেই দাদু সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় পুজো শুরু করেন।” রানিগঞ্জে হিলবস্তিতে ১৯২৮ সালে শুরু হয়েছিল লক্ষ্মীপুজো। এই পুজো কমিটির সদস্য কল্লোল মুখোপাধ্যায় জানান, এলাকাবাসীর চাহিদা থেকেই বিভূতিভূষণ সিংহের নেতৃত্বে পুজো শুরু হয়। ২০০৪ সালে এই পুজোর কমিটির উদ্যোগে তৈরী করা হয় স্থায়ী মন্দির। ওই মন্দিরে পাশাপাশি দু’টি বেদী রয়েছে। তার একটিতে লক্ষ্মী এবং অন্যটিতে সরস্বতী পুজো হয়। এই পুজোগুলি ছাড়াও খনি শিল্পাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি পাড়াতেই আয়োজিত হচ্ছে ছোট-বড় লক্ষ্মীপুজো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন