প্রচারে যাওয়ায় হুমকি, অভিযোগ

সকালে প্রচার সেরে গেলেন সিপিএম প্রার্থী। রাতেই দলীয় কর্মী-সমর্থকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বাইক বাহিনীর বিরুদ্ধে। সিপিএমের অভিযোগ, আসানসোল লোকসভা এলাকার জেমুয়া পঞ্চায়েতের শঙ্করপুর, টেটিখোলা, কালীগঞ্জ এলাকায় ভোটগ্রহণের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করেছে তৃণমূল। নির্বাচন কমিশনের কাছে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহমের আর্জি জানিয়েছেন তারা। প্রয়োজনে দলের তরফে বাহিনী গড়ে তৃণমূলের সন্ত্রাস প্রতিরোধের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০১:০৬
Share:

সকালে প্রচার সেরে গেলেন সিপিএম প্রার্থী। রাতেই দলীয় কর্মী-সমর্থকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বাইক বাহিনীর বিরুদ্ধে।

Advertisement

সিপিএমের অভিযোগ, আসানসোল লোকসভা এলাকার জেমুয়া পঞ্চায়েতের শঙ্করপুর, টেটিখোলা, কালীগঞ্জ এলাকায় ভোটগ্রহণের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করেছে তৃণমূল। নির্বাচন কমিশনের কাছে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহমের আর্জি জানিয়েছেন তারা। প্রয়োজনে দলের তরফে বাহিনী গড়ে তৃণমূলের সন্ত্রাস প্রতিরোধের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

কালীগঞ্জ গ্রামের ধর্মপদ ঘোষ বরাবরের সিপিএম সমর্থক। তাঁর দাবি, সোমবার সকালে এলাকায় প্রচারে এসেছিলেন প্রার্থী বংশগোপাল চৌধুরী। সন্ধ্যায় তৃণমূলের বাইক বাহিনী বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রীকে হুমকি দেয়। ধর্মবাবুর অভিযোগ, তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা বলে, ‘ভোটের দিন যেন তাঁরা বুথে না যান।’ কালীগঞ্জেরই মনি সূত্রধর পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছিলেন। তখন তাঁকে কর্মস্থল থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করার অভিযোগ তুলেছিল সিপিএম। এ দিন মনিবাবুও অভিযোগ করেন, “সোমবার সন্ধ্যা থেকেই সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন।” টেটিখোলার তরুণ করের দাবি, ““বাড়িতে না পেয়ে আমি যে বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করি সেখানে গিয়ে কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।” শঙ্করপুরের জয়ন্ত চক্রবর্তী, শঙ্কর দাসদের দাবি, “মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারলে তৃণমূলের ফল ভাল হবে না। সেটা আমাদের মিছিলে লোক দেখে ওরা বুঝে গিয়েছে।”

Advertisement

তবে তৃণমূলের যুব নেতা তথা দুর্গাপুর-ফরিদপুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, শঙ্করপুরের বাসিন্দা স্বাধীন ঘোষের দাবি, সিপিএম মিথ্যা অভিযোগ করছে। তিনি বলেন, “হুমকি দেওয়ার প্রশ্ন নেই। এলাকার মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। ‘লিড’ পাবই।” তৃণমূল সূত্রে খবর, ভোটের দিন দলীয় কর্মী-সমর্থকদের জন্য দেদার খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। বুথে যাওয়ার রাস্তার ধারে দলের ছেলেরা কয়েকজন মিলে এক জায়গায় বসে থাকবেন। ভোটারদের সহযোগিতা করবেন তাঁরা। তবে এটা নিয়েই আপত্তি সিপিএমের। দলের জেমুয়া-বিধাননগর লোকাল কমিটির সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, “সপ্তর্ষি পার্ক, ইন্দো-আমেরিকান পার্ক, বলাকা পার্ক প্রভৃতি এলাকা থেকে ৩-৪ কিমি দূরে বুথগুলি। মাঝ পথে তৃণমূলের ওই সব ছেলেরা ভোটারদের বাধা দেবে। ফলে সাধারণ মানুষ বুথমুখো না হয়ে ঘরে ফিরে আসতে বাধ্য হবেন।”

কালীগঞ্জের ২৩১ ও ২৩২ নম্বর বুথ, টেটিখোলার ২৩৩ ও ২৩৪ নম্বর বুথ, শঙ্করপুরের ২৩৫, ২৩৬ ও ২৩৭ নম্বর বুথগুলিকে স্পর্শকাতর ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পর্যন্ত কোনও বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী চোখে পড়েনি। সোমবার সকালে আধা সামরিক বাহিনী অবশ্য একবার টহল দিয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, বুথে রয়েছে শুধু রাজ্য পুলিশ। যেমন, শঙ্করপুরের তিনটি বুথে তিনজন লাঠিধারী এবং তিনজন অস্ত্রধারী পুলিশ রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগও করেছেন প্রার্থী বংশগোপালবাবু এবং পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভার সিপিএম বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়। সিপিএম নেতা পঙ্কজবাবুর অভিযোগ, বারবার বলা সত্বেও কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হল না। স্বচ্ছ ভোট হবে না বলে আশঙ্কা তাঁর।

সিপিএমের আরও অভিযোগ, তৃণমূল সাড়ে তিনশো থেকে চারশো বুথ চিহ্নিত করেছে যেখানে বিরোধী দলের এজেন্ট বসতে দেবে না। এছাড়া সর্বদল বৈঠকে উপদ্রুত বুথের যে তালিকা তাদের তরফে জমা দেওয়া হয়েছিল চূড়ান্ত করার সময় তা অনেকখানি বদলে দেওয়া হয়েছে বলেও সিপিএমের দাবি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেড়শো থেকে দু’শো জনের ফ্লাইং স্কোয়াড বানিয়েছে সিপিএম। কোথাও ভোটগ্রহণে অস্বচ্ছতা নজরে এলে কমিশনকে প্রথমে জানানো হবে। ব্যবস্থা না নিলে বিক্ষোভ অবরোধের পথে যাবে সেই কমিটি। দলের জেলা সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “তৃতীয় দফার ভোটে আমাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে। এ বার সাধ্যমতো প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন