প্রতিশ্রুতি নয়, মাটি চুরি রুখতে ব্যবস্থা চায় দু’পাড়

ভাঙছে দু’পাড়। তবু মাটি কাটা কমছে না ভাগীরথীর দু’দিকে। প্রতিশ্রুতি দিলেও চোখে পড়ছে না প্রশাসনিক উদ্যোগ। রাজনৈতিক দলগুলির ভোট প্রচারেও ব্রাত্য হয়ে গিয়েছে ভাগীরথীর ভাঙন। মাস কয়েক আগে সেচ কর্তারা বর্ধমান ও নদিয়াতে ভাগীরথীর ভাঙন পরিস্থিতি দেখতে এসেছিলেন। ফিরে গিয়ে তাঁরা রিপোর্ট দেন, ভাগীরথীর দুই পাড় থেকেই মাফিয়ারা প্রচুর পরিমাণে মাটি কাটছে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৩৪
Share:

ভাঙছে দু’পাড়। তবু মাটি কাটা কমছে না ভাগীরথীর দু’দিকে। প্রতিশ্রুতি দিলেও চোখে পড়ছে না প্রশাসনিক উদ্যোগ। রাজনৈতিক দলগুলির ভোট প্রচারেও ব্রাত্য হয়ে গিয়েছে ভাগীরথীর ভাঙন।

Advertisement

মাস কয়েক আগে সেচ কর্তারা বর্ধমান ও নদিয়াতে ভাগীরথীর ভাঙন পরিস্থিতি দেখতে এসেছিলেন। ফিরে গিয়ে তাঁরা রিপোর্ট দেন, ভাগীরথীর দুই পাড় থেকেই মাফিয়ারা প্রচুর পরিমাণে মাটি কাটছে। তাঁরা আরও জানান, মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বন্ধ না হলে বিপদ বাড়বে। তারপরেও পরিস্থিতির বদল ঘটেনি।

শুধু প্রশাসনই নয়, ভাগীরথীর ভাঙন আটকাবার জন্য এর আগে নির্বাচন এলেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা। কিন্তু এ বার শুধু প্রতিশ্রুতিতে ভুলতে রাজি নন দু’পাড়ের বাসিন্দারা। দিন কয়েক আগে, কালনা ১ ব্লকের কলডাঙা ও নতুনচরে লোকসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল প্রার্থী সুনীল মণ্ডল। তাঁকে ঘিরে মাটি কাটা বন্ধের দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের ক্ষোভ, মাটি মাফিয়ারা চাষের জমি থেকে গ্রামের রাস্তা সব জায়গা থেকে মাটি কাটছে। ফলে ক্রমশ গ্রামের দিকে এগিয়ে আসছে ভাগীরথী।

Advertisement

প্রশাসনের বিভিন্ন মহল ও স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে জানা গিয়েছে, এলাকার দুষ্কৃতীরা খাস জমি দখল করে নিয়ে মাটি কাটে। তারপরে সেই মাটি যায় কাটোয়া ও পূর্বস্থলীর বিভিন্ন ইটভাটায়। অভিযোগ, ভাগীরথীর মাটি মাফিয়াদের পিছনে মদত রয়েছে স্থানীয় ইটভাটার মালিকদের একাংশের। এই ইটভাটাগুলির মধ্যে বেশির ভাগই বেআইনি। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান গ্রামীণ এলাকায় ৬৯টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। তার মধ্যে কাটোয়া ২ ব্লকেই রয়েছে ২১ টি। এই ইটভাটাগুলি থেকে ধোঁয়া ও ছাই উড়ে গিয়ে দূষণ তৈরি হয়। স্থানীয় বড়কুলগাছির বাসিন্দারা অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবিতে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। বিচারপতি ওই ইটভাটা বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। তার পরেও ওই ইটভাটাটি বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ। বড়কুলগাছির বাসিন্দারা ফের হাইকোর্টে গিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে মাটি চুরি রুখতে তাঁরা একজোট হয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, সেটা আটকানোর জন্য মাটি মাফিয়ারা ট্রাক্টর ও ট্রলারের মধ্যে এখন আগ্নেয়াস্ত্র রাখে। ফলে প্রাণের ভয়ে এখন কেউই মাটি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে যেতে সাহস পান না। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে অগ্রদ্বীপে ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ের কোল ঘেঁষে ট্রলিতে করে মাটি পাচারের সময়ে অভিযান চালিয়েছিল ব্লক প্রশাসন। তখন প্রশাসনিক কর্তারা আশ্বাস দেন, মাটি চুরি রুখতে ভাগীরথীর দু’পাড়ে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হবে। কিন্তু ঘটনা হল, ওই এলাকায় এখনও পুলিশ ক্যাম্প তো দূরের কথা তার পর থেকে অভিযানও হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চোখের সামনে খাস জমি দখল করে দেদার মাটি চুরি হতে দেখেও রাজনৈতিক দলগুলির চাপেই হাত গুটিয়ে রয়েছে প্রশাসন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের কর্তারাও বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলির ইচ্ছা না হলে মাটি কাটার মতো বেআইনি কার্যকলাপ বন্ধ করা কার্যত অসম্ভব।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভাগীরথীর দু’পাড়ে প্রচারে গিয়ে জাতীয় ও রাজ্য স্তরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক কথাই বলছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও তাঁর সঙ্গীরা। কিন্তু ভাঙনের বিষয়ে নিয়ে কেউই সোচ্চার নন। ভাঙন রুখতে কী বলছে রাজনৈতিক দলগুলি? সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “শুধু মাত্র ভাগীরথীর ভাঙন নিয়ে আমরা নির্দিষ্ট করে কিছু বলছি না। আমরা সমস্ত মাফিয়া রাজের বিরুদ্ধেই সরব হচ্ছি।” তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) ও রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “কে বলল ভাগীরথীর ভাঙন নিয়ে আমরা সরব হচ্ছি না?” তাঁর দাবি, ভাঙন রুখতে সক্রিয় রয়েছে প্রশাসন। বর্ধমান পূর্বের কংগ্রেস প্রার্থী চন্দনা মাঝির আশ্বাস, “আমরা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে ভাঙন রুখতে চাইছি। যার মাধ্যমে বেআইনি মাটি কাটাও বন্ধ হবে।”

শুকনো প্রতিশ্রুতিতে অবশ্য আতঙ্ক কাটছে না ভাগীরথীর দু’পাড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন