মহকুমায় পোস্ত চাষ রুখতে বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছে প্রশাসন। কোথাও নদীপথে নজরদারি, কোথাও পুতুল নাচের মাধ্যমে সতর্কতামূলক প্রচার চালানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। সম্প্রতি পুলিশ, আবগারি দফতর ও মহকুমা প্রশাসনের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে ঠিক হয়েছে, কখনও একত্রিত হয়ে, আবার কখনও আলাদা ভাবে মহকুমার সর্বত্র এই চাষে নজরদারি চালানো হবে।
পূর্বস্থলীর দুই ব্লক ও মন্তেশ্বরের বিভিন্ন জায়গায় এর আগেও একাধিকবার হানা দিয়েছে আবগারি দফতর। পোস্ত গাছ কেটে নষ্ট করে তা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আবগারি দফতর মাদক তৈরির কাজে ব্যবহৃত অসংখ্য পোস্ত গাছের ফলও নষ্ট করেছে। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে ওই চাষের সঙ্গে একাধিক দুষ্কৃতী দল জড়িয়ে রয়েছে। তারা স্থানীয়দের সঙ্গে যোগসাজস করে, লোভ দেখিয়ে পোস্ত চাষ করায়। জমি হিসেবে বেছে নেওয়া হয় নদী পাড়ের খাস জমি। কিছু জায়গায় জমির মালিককে ভয় দেখিয়েও তাঁর সম্মতি আদায় করে দুষ্কৃতীরা। নদী পাড়ের জমি বেছে নেওয়ার পিছনে দুটি কারণ রয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। প্রথমত, এই সমস্ত দুর্গম এলাকায় পুলিশ ও আবগারি দফতরের পক্ষে নজরদারি চালানো কঠিন। দ্বিতীয়ত, পুলিশ অভিযান চালালেও নদীপথে অন্য জেলায় পালিয়ে যাওয়া সুবিধে।
মহকুমা পুলিশের দাবি, ২০১২ সালে শেষ পোস্ত চাষের জমি মিলেছিল। এরপরে একাধিক অভিযান চালিয়ে পূর্বস্থলী এবং মন্তেশর এলাকার বেশ কিছু পোস্ত গাছ নষ্ট করে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে চারটি মামলাও দায়ের হয়। পোস্ত চাষে জড়িত অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কালনা আদালতে মামলার চার্জশিটও জমা পড়ে গিয়েছে। পরে ২০১৩ সালে পুলিশের কাছে খবর আসে স্যাটালাইটের মাধ্যমে দেখা গিয়েছে, পূর্বস্থলীর একটি পঞ্চায়েতে পোস্ত চাষ হয়েছে। তবে তদন্তে নেমে পুলিশ দেখে সেটি পেঁয়াজের খেত। তবে পুলিশের আশঙ্কা, নজরদারিতে সামান্য গাফিলতি হলেই ফের পোস্ত চাষে নামতে পারে দুষ্কৃতীরা।
সম্প্রতি কালনা মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে পোস্ত চাষ নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে ঠিক হয়, বিষয়টি শুধু আবগারি দফতরের নজরদারির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। কারণ কড়া নজরদারির জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই তাদের। ফলে এ ব্যাপারে বিডিওরা ও পুলিশ খোঁজখবর রাখবে। খড়ি নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলি ছাড়াও মন্তেশ্বরের তেঁতুলিয়া, পূর্বস্থলী ২ ব্লকের নাকাদহ, বাবুইডাঙা, রাজারচরের মতো এলাকাগুলিতে নজরদারি চালানোর কথাও ঠিক হয়। বৈঠকে আধিকারিকেরা জানান, অতীতে জেলার মধ্যে সব থেকে বেশি পোস্ত চাষের নজির রয়েছে কাটোয়া মহকুমায়। তবে যেহেতু পূর্বস্থলী ২ ব্লকের বেশ কিছু এলাকা কাটোয়া লাগোয়া তাই ওই সমস্ত এলাকায় বাড়তি নজর রাখার কথাও হয়। নভেম্বর মাস থেকেই এই নজরদারি শুরু হবে। কারণ নভেম্বর থেকেই সাধারণত পোস্ত চাষের জমি তৈরির কাজ শুরু হয়। মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, নদীপথ ধরেও নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রয়োজনে নৌকা থেকে দূরবীন ব্যবহার করা হবে।
পোস্ত চাষ নিয়ে বিশেষ সতর্কতার কথা স্বীকার করেছে মহকুমা প্রশাসনও। কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ জানান, এলাকার কোথাও যাতে পোস্ত চাষ না হয়, তার জন্য বিশেষ উদ্যোগ করছে প্রশাসন। তল্লাশি চালাতে নৌকা-সহ নানা সরঞ্জাম দিয়ে পুলিশকে সাহায্য করবে তারা। এছাড়া পোস্ত চাষ করতে গিয়ে ধরা পড়লে কী শাস্তি হতে পারে সে ব্যাপারে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হবে। তার জন্য লিফলেট, পোস্টার ছড়ানো হবে নানা জায়গায়। চেষ্টা চলছে পুতুল নাচের মাধ্যমেও প্রচার চালানোর। এ ব্যাপারে মহকুমা তথ্য এবং সাংস্কৃতিক আধিকারিককে একটি পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হবে বলেও মহকুমাশাসক জানান।