পরপর খেলায় হাঁসফাঁস মাঠ, সাইডলাইনে খুদেরা

মাঠের সমস্যা যেন তাড়া করে ফিরছে বর্ধমানের খোলোয়াড়দের। একদিকে, শহরে যে কয়েকটি মাঠ রয়েছে সেগুলি এক একটি প্রতিষ্ঠানের দখলে। ফলে খেলতে চাওয়া সাধারণ ছেলেমেয়েদের জন্য কার্যত কোনও মাঠ নেই। আবার ক্রীড়া সংগঠনের হাতে যে মাঠ রয়েছে তাতেও জেলা, মহকুমা স্তরের সমস্ত প্রতিযোগিতা শেষ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

Advertisement

রানা সেনগুপ্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:২৮
Share:

অরবিন্দ স্টেডিয়ামে ইন্ডোর নেই, বাইরেই বল হাতে দাপাচ্ছে মেয়েরা।

মাঠের সমস্যা যেন তাড়া করে ফিরছে বর্ধমানের খোলোয়াড়দের।

Advertisement

একদিকে, শহরে যে কয়েকটি মাঠ রয়েছে সেগুলি এক একটি প্রতিষ্ঠানের দখলে। ফলে খেলতে চাওয়া সাধারণ ছেলেমেয়েদের জন্য কার্যত কোনও মাঠ নেই। আবার ক্রীড়া সংগঠনের হাতে যে মাঠ রয়েছে তাতেও জেলা, মহকুমা স্তরের সমস্ত প্রতিযোগিতা শেষ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

শহরের রাধারানি স্টেডিয়ামটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠ। বছরভরই অ্যাথলেটিক্স, ফুটবল, ক্রিকেট চলে সেখানে। কিন্তু একটি মাঠকেই বারবার তৈরি করতে গিয়ে দেরি হয়। এক প্রতিযোগিতার চাপে অন্য প্রতিযোগিতা পিছিয়েও যায় অনেকসময়। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি উজ্জ্বল প্রামাণিকের দাবি, “প্রতি বছর দু’বার করে মাঠটাকে খুঁড়তে হচ্ছে। একবার ক্রিকেট পিচ তৈরি করা হচ্ছে, আবার সেই পিচ তুলে ঘাস লাগিয়ে মাঠটাকে ফুটবলের উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। তার উপরে যদি বর্ষা বেশি হয় তাহলে মাঠ তৈরি করতেই অনেক বেশি সময় লেগে যায়। ফলে মাঠের উপর চাপ পড়ছে।” আবার মাঠের সম্যায় জেলা ক্রীড়া সংস্থার র্টুনামেন্টের সংখ্যা কমছে বলেও তাঁর দাবি।

Advertisement

রাধারানি স্টেডিয়াম ছাড়াও শহরে আরও দুটি মাঠ রয়েছে।একটি স্পন্দন, অন্যটি কল্পতরু। কিন্তু দুটি মাঠের প্রথমটি আকারে ছোট বলে সেখানে ক্রিকেট প্রতিযোগিতা করা যায় না। আর সিএবির নিয়ম মেনে টার্ফ পিচ তৈরি করার সমস্যা রয়েছে কল্পতরু মাঠে। তবে এই দুটি মাঠে কিছু ফুটবল ম্যাচ করানো হয় বলে জানিয়েছেন উজ্জ্বলবাবু।

রাধারানি স্টেডিয়ামে খেলার সুযোগ চেয়ে একদা তৎকালীন রাজ্যের মন্ত্রী, বর্ধমানের বিধায়ক নিরুপম সেনের কাছে দরবার করেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি ছিল, হাতের কাছে এমন মস্ত মাঠ থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাড়ির ছেলেরা খেলতে পায় না। নিরুপমবাবু অবশ্য সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর ওই রাধারানি স্টেডিয়াম সযত্নে সাজাতে বহু অর্থ ব্যয় করতে হয়। কিছুদিন আগে মাঠের সংস্কার, রং করতে প্রায় সাড়ে ন’লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে বর্ধমান দক্ষিনের বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের তহবিল থেকে। তাই ওই মাঠে বাইরের ছেলেদের খেলা এমনকী ভ্রমনকারীদের হাঁটা পর্যন্ত বারণ। তাদের দাবি, মাঠের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই এমনটা করা হয়েছে।

আর অন্য মাঠ? জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পীরদাস মণ্ডল জানিয়েছেন, জেলা যুব দফতর সম্প্রতি সংস্থাকে ৩৯ লক্ষ টাকা দিয়েছে বর্ধমানের স্পন্দন কমপ্লেক্সের ভেতরের মাঠটি সংস্কারের জন্য। তাই মাঠ বন্ধ করে সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়েছে।

শহরের আর একটি মাঠ, অরবিন্দ স্টেডিয়ামে রয়েছে চারটি ভলিবল ও দুটি বাস্কেটবল কোর্ট। ছোটদের কোচিংয়ের জন্যও একটি কোর্ট রয়েছে। জেলা ভলিবল ও বাস্কেটবল সংস্থার সদস্যদের অভিযোগ, এই মাঠে বছরের পর বছর ভাল খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে, অথচ ইন্ডোর স্টেডিয়ামের কোনও ব্যবস্থা নেই। তাঁদের দাবি, দীর্ঘদিন আগে ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী এই মাঠে ইন্ডোর স্টেডিয়াম তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও মাঠ পড়ে আছে এক হালে। ওই সংস্থার সম্পাদক বনবিহারী যশ বলেন, “ইন্ডোর না থাকায় সারা বছর ছেলেমেয়েদের অনুশীলন করানো যায় না। বৃষ্টি হলে তো প্রতিযোগিতার ম্যাচও বন্ধ করে দিতে হয়।” তাঁর অভিযোগ, খেলোয়ারদের থাকার জায়গা না থাকায় জাতীয় বা রাজ্য স্তরের বড় কোনও প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে পারছেন না তাঁরা।

শহরের আর এক মাঠ, মোহনবাগান মাঠের নামকরণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেউ বলে একসময় মোহনবাগান খেলতে এসেছিল এই মাঠে। আবার কেউ বলে ওই মাঠে ছিল একটি চমৎকার বাগিচা ছিল। সেই মোহন বাগ থেকে নাম হয়েছে মোহনবাগান মাঠ। এই মাঠে সারা বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা প্রতিযোগিতা হয়। যে সমস্ত স্কুলের মাঠ নেই তাদের বার্ষিক ক্রীড়াও হয়। তবে বহিরাগতদের খেলার তেমন সুযোগ নেই এ মাঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস অফিসার সুরজিত নন্দী বলেন, “আগামী দিনে মোহনবাগান মাঠে ফিজিক্যাল এডুকেশনের স্নাতকোত্তর স্তরের পঠনপাঠন শুরু হবে। সে কথা খেয়াল রেখে একটি ইন্ডোর হল ও স্পোর্টস হস্টেল তৈরির কাজ শুরু করা হবে।” বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছে বলেও তাঁর দাবি।

তবে এ সব মাঠে পাড়ার বা বাইরের ছেলেদের খেলার বিশেষ সুযোগ নেই। তাহলে ছেলেমেয়েগুলো যাবে কোথায়? বর্ধমান টাউন স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্তের অবশ্য দাবি, ওই মাঠে পাড়ার ছেলেদের খেলতে দেন তাঁরা। তবে ফুটবল কোর্টের সংস্কার হলেও বাস্কেটবল ও ভলিবল কোর্ট অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সুইমিংপুলটিও সংস্কারের অভাবে ভেঙে গিয়েছে। মিউনিসিপ্যাল স্কুলের মাঠে আবার গাড়ি ঢুকে পড়ে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি। ফলে মাঠ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। খোসবাগানে জাতীয় সঙ্ঘের মাঠ ও শাঁখারীপুকুর অগ্রদূত সঙ্ঘের মাঠেও বহিরাগতদের খেলার সুযোগ তেমন নেই।

আপাতত সিএমএস বাবুরবাগ স্কুল লাগোয়া মাঠে দিনভর খেলতে দেখা যায় খুদেদের। আলমগঞ্জ কল্পতরু মাঠেও পাড়ার ছেলেরাই মাঠ দাপাচ্ছে। তবে ওই মাঠের দায়িত্বে থাকা সংস্থার সম্পাদক সুনীল সিংহ বলেন, “এলাকার ছেলেদের খেলা নিয়ে আমাদের কোনও বাধা নেই। তবে কিছুদিনের মধ্যেই আমরা মাঠে নানা ধরনের প্রশিক্ষন শিবির চালু করব।”

অগত্যা, যে ক’দিন হাতে রয়েছে তাতেই চেটেপুটে মাঠের ধুলো গায়ে মাখছে খুদেরা।

ছবি: উদিত সিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন