ব্যাঙ্কের নাম করে ফোনে গ্রাহকের ডেবিট কার্ড নম্বর এবং পিন কোড জেনে আমানত থেকে ফের টাকা হাতানোর অভিযোগ উঠল দুর্গাপুরে। অমরাবতী এলাকার বাসিন্দা মধুসূদন নায়েক সোমবার দুর্গাপুরের মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, শনিবার সন্ধ্যায় ধাপে ধাপে অনলাইন শপিংয়ের মাধ্যমে তাঁর আমানত থেকে প্রায় ৪১ হাজার টাকা সরিয়ে নিয়েছে দুষ্কৃতীরা। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে মহকুমাশাসকের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহক, পেশায় বেসরকারি কারখানার কর্মী মধুসূদনবাবু জানান, রবিবার সন্ধ্যায় তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে। কোনও এক ব্যক্তি ইংরেজিতে তাঁকে জানান, ব্যাঙ্কের প্রধান শাখা থেকে এই ফোন করা হচ্ছে। তাঁর আমানত যাচাই করা হচ্ছে। সে জন্য তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ডেবিট কার্ডের নম্বর এবং পিন কোড জানাতে হবে। এই সমস্ত তথ্য না দিলে আমানত ও ডেবিট কার্ড অচল হয়ে যাবে। মধুসূদনবাবু বলেন, “যে ভাবে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয় তাতে আমার কোনও সন্দেহ হয়নি। আমি সব তথ্য দিয়ে দিই।” তিনি অভিযোগ করেন, এর কিছুক্ষণ পর থেকেই আমার মোবাইলে টাকা তোলার খবর দিয়ে এসএমএস আসতে শুরু করে। তা থেকে তিনি জানতে পারেন, অনলাইন শপিংয়ের জন্য টাকা কাটা হচ্ছে। কী করবেন ভেবে ওঠার আগেই ধাপে ধাপে প্রায় ৪১ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয় তাঁর আমানত থেকে। দ্রুত স্থানীয় একটি এটিএম কাউন্টারে গিয়ে তিনি ডেবিট কার্ড বন্ধ করে দেন। সোমবার সকালে ব্যাঙ্কে গিয়ে পাশ বই পরীক্ষা করে দেখেন, পুরো ওই অঙ্কের টাকা কাটা হয়েছে।
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে মধুসূদনবাবু লিখিত অভিযোগ করেন। এর পরে তিনি নিউটাউনশিপ থানায় যান অভিযোগ জানাতে। কিন্তু ব্যাঙ্কটি এই থানা এলাকার মধ্যে পড়ে না জানিয়ে পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে বলে তাঁর দাবি। এর পরে তিনি কোকওভেন থানায় যান। তাঁর অভিযোগ, সেখানে আবার পুলিশ জানায়, তাঁর বাড়ি যেহেতু নিউটাউনশিপ থানা এলাকায়, তাই তাঁকে সেখানেই অভিযোগ জানাতে হবে। মধুসূদনবাবু বলেন, “পুলিশের এমন আচরণে বিব্রত হয়ে আমি মহকুমাশাসকের দফতরে অভিযোগ জানাই।” পরে অবশ্য নিউটাউনশিপ থানা তাঁর অভিযোগ নেয়। পুলিশ জানায়, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনার তদন্ত করা হবে।
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেরই সিটি সেন্টার শাখার এক আমানতকারীর অ্যাকাউন্ট থেকে এ ভাবেই দু’হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছিল। তাঁর আমানতে ওই পরিমাণ টাকাই ছিল। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, ফোনে জানানো হয়, তাঁর ডেবিট কার্ডের সময়সীমা শেষ দিকে। পুনর্নবীকরণ করতে হবে। সে জন্য এটিএম নম্বর ও পিন কোড জানাতে হবে। সন্দেহ না করে তিনি তা জানিয়ে দিয়েছিলেন।
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই ধরনের ঘটনার দায় নিতে চাননি। ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক জানান, এই ধরনের প্রতারণা চক্রের পাল্লায় পড়ে অতীতে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের হাজার-হাজার গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তেমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য গ্রাহকদের মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে গোপন তথ্য কাউকে না দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করা হচ্ছে। পাশাপাশি, ব্যাঙ্ক, এটিএম কাউন্টারে লিখিত ভাবে গ্রাহকদের বিষয়টি জানানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ওই আধিকারিক বলেন, “আমরা খুবই দুঃখিত যে এর পরেও অনেকে এমন ভুল করছেন ও তার খেসারত দিচ্ছেন। আমরা সব সময় গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে বদ্ধপরিকর। আমাদের তরফ থেকে পুলিশকে যথাযথ সহযোগিতা করা হবে।”