বারবার দুর্ঘটনার পরেও চলছে মাছ ধরা। দুর্গাপুর ব্যারাজে তোলা নিজস্ব চিত্র।
এক সপ্তাহের মধ্যে দুর্গাপুর ব্যারাজে দু’টি দুর্ঘটনা। মৃত্যু পাঁচ জনের। দুর্গাপুর ব্যারাজে এই ঘটনার পরে অবশেষে টনক নড়ল প্রশাসনের। রবিবার সকাল থেকে দামোদরের দুই পাড়ে সচেতনতা বাড়ানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে বড়জোড়া থানার পুলিশ। মাইক হাতে ঘুরে ঘুরে নদীতে স্নান না করার আবেদন জানাতে থাকেন তাঁরা। দেরিতে হলেও প্রশাসনের তরফে এমন প্রচার চালানোয় খুশি বাসিন্দারা।
ব্যারাজের জলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা যে শুধু সাম্প্রতিক কালের দু’টি, তা নয়। বছরের বিভিন্ন সময়ে লকগেটের নীচে স্নান করতে নেমে তলিয়ে যাওয়ার বহু ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার দুপুরে দুর্গাপুর ব্যারাজে স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে যান দুর্গাপুরের এমএএমসি এলাকার মহম্মদ আকবর নামে এক যুবক। পুলিশ সূত্রে খবর, আকবর আট বন্ধুর সঙ্গে ব্যারাজে স্নান করতে নামেন। লকগেটের নীচে স্নান করার সময় তিনি তলিয়ে যান। কিছু ক্ষণ পর তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়। শনিবারের এই ঘটনার এক সপ্তাহ আগে ১৮ মে একই জায়গায় স্নান করতে তলিয়ে যান দুর্গাপুরের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের চার ছাত্র ।
অতীতে বারবার দুর্ঘটনার পরেও নড়ে বসেনি প্রশাসন। ডিভিসি-র পক্ষ থেকেও কখনও বিশেষ কোনও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি, এমনই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। লকগেটের নীচের অংশে নামা যে বিপজ্জনক তা জানিয়ে ডিভিসি-র একটি বোর্ড লাগানো থাকলেও অধিকাংশ লোকজনই সেই নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই জলে নেমে যান। ডিভিসি-র আধিকারিকদের দাবি, সর্বক্ষণের নজরদারি চালানোর মতো পরিকাঠামো তাঁদের নেই।
সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়েই রবিবার সকাল থেকে বড়জোড়া থানা প্রচার শুরু করেছে। নদীর দুই পাড়ে এ দিন হাত-মাইক নিয়ে ব্যারাজে আসা লোকজনকে সতর্ক করতে দেখা যায় পুলিশকর্মীদের। লকগেটের নীচে নামা যে বিপজ্জনক, সে কথা বারবার বলেন ওই পুলিশকর্মীরা। কেউ এ দিন ব্যারাজের বিপজ্জনক অংশে নামতে গেলে তাঁকে নিষেধও করছেন তাঁরা।
বড়জোড়া থানার সাব-ইনস্পেক্টর সঞ্জয় মাজি বলেন, “বারবার লকগেটের নীচে দুর্ঘটনা ঘটছে। সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন করে তোলার উদ্দেশেই এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এখন এই ভাবেই সচেতনতা প্রচার চালানো হবে।” দুর্গাপুরের দিকে লকগেটের কাছে যে নিষেধাজ্ঞা বোর্ড লাগানো আছে, সেটির লেখা উঠে গিয়েছে। অস্পষ্ট লেখার দরুণ কিছুই বোঝা যায় না। আবার, বাঁকুড়ার দিকে কোনও বোর্ডই নেই। এই নিষেধাজ্ঞা বোর্ডগুলি নতুন করে লেখা হবে এবং সব দিকেই সেগুলি লাগানো হবে বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে।
পুলিশের এই কর্মসূচিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় বীরভানপুরের বাসিন্দারা। কারণ, বীরভানপুরের বহু বাসিন্দাই এখানে ডুবে যাওয়া দেহগুলি উদ্ধার করেন। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চার ছাত্রের দেহ যাঁরা উদ্ধার করেছিলেন, সেই বাবন দাঁ, জগু দাঁ, রাজু মুখোপাধ্যায়, শঙ্কর মুখোপাধ্যায়েরা জানান, প্রশাসন এ ভাবে উদ্যোগী হওয়ায় অনেকে রক্ষা পাবেন। তাঁদের দাবি, প্রশাসন যেন এখানে এ ভাবেই নজরদারি চালাতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে সচেতনতা বাড়ানোর কাজও করে থাকে। এই কাজে যাতে ভাটা না পড়ে, সেই আবেদন জানান তাঁরা দুর্গাপুর মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বনাথ সমাজদার বলেন, “মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তার সঙ্গে যে অংশটি বিপজ্জনক, সেখানে স্নান করতে নামা বন্ধ করার জন্য নজরদারি বাড়ানো হবে।”