বিজেপি-কে তোপ সমুদ্রগড়ে, কাটোয়ায় নিশানা নয় কংগ্রেস

কর্মীরা আশা করেছিলেন, নেত্রী কিছু একটা বার্তা দেবেন, যাতে তাঁরা দিশা পাবেন। কিন্তু যে বিষয়ে বার্তা পাওয়ার আশায় ছিলেন তাঁরা, সেই কংগ্রেস প্রসঙ্গে কাটোয়ায় কোনও চড়া আক্রমণের রাস্তায় গেলেন না তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নানা বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা, সিপিএমকে তুলোধুনো করলেও বর্ধমান জেলায় কংগ্রেসের অন্যতম এই খাসতালুকে তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে দলকে নির্দিষ্ট কোনও দিশা নেত্রী না দেওয়ায় খানিকটা হতাশ স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা।

Advertisement

সৌমেন দত্ত ও কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কাটোয়া ও সমুদ্রগড় শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৪৯
Share:

কাটোয়ায় নির্বাচনী জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

কর্মীরা আশা করেছিলেন, নেত্রী কিছু একটা বার্তা দেবেন, যাতে তাঁরা দিশা পাবেন। কিন্তু যে বিষয়ে বার্তা পাওয়ার আশায় ছিলেন তাঁরা, সেই কংগ্রেস প্রসঙ্গে কাটোয়ায় কোনও চড়া আক্রমণের রাস্তায় গেলেন না তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নানা বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা, সিপিএমকে তুলোধুনো করলেও বর্ধমান জেলায় কংগ্রেসের অন্যতম এই খাসতালুকে তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে দলকে নির্দিষ্ট কোনও দিশা নেত্রী না দেওয়ায় খানিকটা হতাশ স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা।

Advertisement

কংগ্রেসের খাসতালুকে তাদের নিয়ে সুর না চড়ালেও জেলায় বিজেপি-র অন্যতম ঘাঁটি পূর্বস্থলীর সমুদ্রগড়ে অবশ্য পদ্মফুলে ভোট না দেওয়ার ডাক দিলেন মমতা। বৃহস্পতিবার সেখানে তিনি বলেন, “আমি জানি এখানে কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা বিজেপিকে ভোট দেন। বাংলায় বিজেপি-র কিছু নেই। কিছু টিভি চ্যানেল ওদের ফানুসটা ফোলাচ্ছে। দেখবেন, নির্বাচনের পরে ফেটে গিয়েছে।” তাঁর আরও দাবি, “বিজেপিকে ভোট দেবেন না। পঞ্চায়েত নির্বাচনে দেখেছি ওরা সিপিএমকে সহযোগিতা করে।”

এ দিন দুপুরে তাঁর প্রথম সভাটি ছিল সমুদ্রগড়েই। কেন এখানে সভা করছেন তা-ও এ দিন জানিয়ে দেন তিনি। তাঁর কথায়, “প্রতি বার আমি সমুদ্রগড়কে ছুঁয়ে যাই। কারণ, এর এক প্রান্তে বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী, নাদনঘাট, কালনা রয়েছে। অন্য দিকে রয়েছে চৈতন্যধাম নবদ্বীপ। বর্ধমান ও নদিয়া জেলায় প্রাণকেন্দ্র এই স্থান।” তিনি বলেন, “আমি আজ যে কাপড় পরে রয়েছি, তা এখানকার তাঁতিদের বোনা।”

Advertisement

এ দিন সমুদ্রগড়ের সভা চলার সময়ে মমতার নজরে পড়ে, মহিলাদের ছাতা বন্ধ করতে বলছেন পিছনে থাকা কয়েক জন। তৃণমূল নেত্রী বলেন, “ভাই আমার, ওদের ছাতা খুলতে দিন।” কাটোয়ার সভায় খানিকটা বিশৃঙ্খলাও হয়। তৃণমূলের কয়েক জন কর্মী-সমর্থক নিজেদের মধ্যে ঠেলাঠেলি শুরু করেন। এক সমর্থক চেয়ার নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। তৃণমূল নেত্রী শান্ত হওয়ার অনুরোধ করলেও তাঁরা শুনছিলেন না। বিরক্ত মমতা মঞ্চের খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে পরেন। বলে ওঠেন, “এ রকম করলে সভা করব না।” গোলমাল পাকানোর জন্য দর্শকাসনের কয়েক জনের দিকে আঙুল দেখিয়ে ব্যবস্থাও নিতে বলেন। পুলিশকে বলেন, “কারা গোলমাল পাকাচ্ছে দেখিয়ে দিয়েছি। তার পরেও সামলাতে পারছেন না কেন?” পুলিশ এগিয়ে যেতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

কাটোয়ায় সভার ফাঁকে। —নিজস্ব চিত্র।

কাটোয়ার সভায় এখানকার প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে রাজ্য সরকারের ইতিবাচক ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, “এটি একটি বড় ব্যাপার। দশ হাজার কোটি টাকা সরাসরি বিনিয়োগ হবে। এ ছাড়াও অনুসারী শিল্প গড়ে উঠবে।” জমি জটে আটকে থাকা এই প্রকল্পের ব্যাপারে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়ে জমি ও কয়লার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে বলে জানান তিনি। প্রকল্প আটকে পড়া নিয়ে আগের বামফ্রন্ট সরকারকে দোষারোপও করেন।

কাটোয়া ও সমুদ্রগড়দু’জায়গাতেই সভায় ভিড় দেখে খুশি তৃণমূল নেতারা। কাটোয়ার সভায় কংগ্রেস-প্রসঙ্গ না আসায় স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, “সবংয়ে মানস ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে তোপ দাগলেও, এখানে নিশ্চয় কিছু ভেবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি দিদি।” সমুদ্রগড়ে তৃণমূল নেত্রীর মুখে তাদের সমালোচনা প্রসঙ্গে বিজেপি-র জেলা সভাপতি রাজীব ভৌমিকের বক্তব্য, “আগে থেকেই আমাদের ভাল ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে এই এলাকায়। এ বারও মানুষের বিপুল সাড়া পাচ্ছি। উনি যা-ই বলুন না কেন, এই কেন্দ্রে মানুষ আমাদের ভোট দেবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন