বৈঠকের চার দিন পার, রাস্তা রয়েছে হকার-রিকশার দখলেই

এক দিকে হকারদের হরেক জিনিসের পসরা, আরেক দিকে সাইকেল, মোটরবাইক, তার উপর রাস্তা জুড়ে একের পর এক রিকশাএই তিনের রাজযোটকে ক্রমেই স্বাভাবিক গতি হারাচ্ছে কাটোয়া শহর। স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রয়েছে ঠিকই কিন্তু যানজটই যেন ভবিতব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এ শহরের। বছর খানেক আগে শহরকে যানজট মুক্ত করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন মাধবীতলার ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৩৮
Share:

কাটোয়ায় রাস্তা জুড়ে হকারদের পসরা।—নিজস্ব চিত্র।

এক দিকে হকারদের হরেক জিনিসের পসরা, আরেক দিকে সাইকেল, মোটরবাইক, তার উপর রাস্তা জুড়ে একের পর এক রিকশাএই তিনের রাজযোটকে ক্রমেই স্বাভাবিক গতি হারাচ্ছে কাটোয়া শহর। স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রয়েছে ঠিকই কিন্তু যানজটই যেন ভবিতব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এ শহরের।

Advertisement

বছর খানেক আগে শহরকে যানজট মুক্ত করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন মাধবীতলার ব্যবসায়ীরা। মহকুমা প্রশাসন আন্দোলনের ফলে বৈঠক ডেকে বেশ কিছু সিদ্ধান্তও নিয়েছিল। যেমন, ফাঁকা জায়গা দখল করে ব্যবসা করা যাবে না, বাসস্ট্যান্ড থেকে রবীন্দ্রভবন পর্যন্ত রাস্তা দখল করে কোনও রকমের হকার বসা নিষিদ্ধ করেছিল প্রশাসন। এর সঙ্গে যত্রতত্র পার্কিংয়ের ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল মহকুমা প্রশাসন। তবে কয়েক মাসের মধ্যেই সেই সব ‘নিষেধাজ্ঞা’কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বহাল তবিয়তে রাস্তা দখল করে ব্যবসা, অবৈধ পার্কিং সবই চলছে শহরে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পুরসভা, ব্যবসায়ী সংগঠন ও পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ে শহরকে যানজট মুক্ত করার উদ্দেশে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের পরেও শহরের রাস্তা কিন্তু ‘দখলদার’দের হাতেই রয়েছে। ওই বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলি শহরের যানজটের জন্য কার্যত ব্যবসায়ীদেরই কাঠগড়ায় দাঁড় করান। ফরওয়ার্ড ব্লকের নেত্রী মাধবী মণ্ডলের অভিযোগ, “ব্যবসায়ীরাই রীতিমতো টাকা নিয়ে দোকানের সামনের রাস্তায় হকারদের বসতে দেয়।” তবে ব্যবসায়ীদের এই প্রবণতা আগেও দেখেছে কাটোয়া শহর। সেই সময় ব্যবসায়ী সমিতির কর্তারা দোকানে দোকানে গিয়ে হকারদের তুলে দিয়েছিলেন। যদিও এ দিনের সভায় ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা এই অভিযোগ মানতে চাননি। বৈঠকে আরও অভিযোগ ওঠে, প্রথমে জায়গা দখল করে গুমটি বসানোর পরে লাখ লাখ টাকায় সেই গুমটি হাতবদল হয়ে যাচ্ছে। বড় ব্যবসাদারদের মতো গুমটি-ব্যবসায়ীরাও ফাঁকা জায়গার সঙ্গে পিচ রাস্তার দখল নিয়ে নিচ্ছে।

Advertisement

শহর ঘুরে দেখা যায়, বাসস্ট্যান্ড থেকে পুরসভা মোড়, গোয়েঙ্কা মোড় থেকে নজরুল মূর্তি হয়ে পালটিয়া রোড, টেলিফোন ময়দান-সহ শহরের বেশিরভাগ রাস্তাই হকারদের দখলে। শহরবাসীর অভিজ্ঞতাও বলে তিনটি ধাপে দখল হয়ে যাচ্ছে রাস্তা। প্রথম ধাপে ব্যবসায়ীরা ফাঁকা জায়গা দখল করছে। তারপর সাইকেল, মোটরবাইকের ভিড়। তার সঙ্গে রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে থাকছে রিকশা বা হকারেরা। এছাড়া বেআইনি ট্যাক্সি-স্ট্যান্ডও রাস্তা দখল করতে কম যায় না। একাধিক রাস্তার পাশে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির শ্রমিক ইউনিয়ন বা সংগঠনের শাখা অফিসও।

তৃণমূলের কাটোয়া শহর সভাপতি অমর রামের দাবি, “বেআইনি যানবাহনের দৌরাত্ম্যে শহরের বেশিরভাগ রাস্তায় যানজট দেখা দিচ্ছে। অভিভাবকহীনের মতো যানবাহনগুলি যেখানে ইচ্ছে দাঁড়িয়ে পড়ছে।” ব্যবসায়ীদের অবশ্য দাবি, “ভ্যানগুলি জোর করে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ছে। তাঁদের আটকানোর ক্ষমতা আমাদের নেই।” কংগ্রেস পরিচালিত কাটোয়া পুরসভার কাউন্সিলর রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বছরখানেক আগে কাটোয়ার মহকুমাশাসক আর অর্জুনের আমলে যানজট নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তগুলি কার্যকর করা হলে যানজটের সমস্যা মিটবে বলে মনে হয়।” এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাস বলেন, “পুলিশ-পুরসভার পাশাপাশি ব্যবসায়ী সংগঠনকেও এগিয়ে আসতে হবে শহরকে যানজট মুক্ত করার জন্য।”

ইতিমধ্যেই কাটোয়া মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতি ও কাটোয়া মহকুমা ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অবশ্য যৌথ ভাবে ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রচারপত্র বিলি করে রাস্তা দখল করে ব্যবসা করতে বারণ করেছে। ব্যবসায়ী সমিতির মুখপাত্র বিদ্যুৎ নন্দী বলেন, “এরপরেও যদি কোনও ব্যবসায়ী রাস্তা দখল করে তাহলে প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।”

তবে পরিস্থিতি বলছে, বৈঠকের চার দিন পরেও রাস্তা কার্যত অবরুদ্ধই রয়েছে। সকালের ব্যস্ত সময়ে এখনও যানজটে হাঁসফাঁস করছে শহর। এ ব্যাপারে এসডিও (কাটোয়া) বলেন, “ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি বুধবার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। তারপর আমরা অভিযানে নেমে সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করব।” এখন শহরবাসীর আগের অভিজ্ঞতার মতো এ বারেও বৈঠকের কিছুদিন পরে শহর আবার আগের হালে ফিরে যায় নাকি সত্যিই ‘দখল’ মুক্ত হয় সেই অপেক্ষাতেই রয়েছেন শহরবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন