বৃদ্ধার জায়গা দখল, আদালতের নির্দেশে তৎপর হল প্রশাসন

সম্বল বলতে বসতবাড়িটুকু। তবে সেটাও পড়শিরা দখল করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ তুললেন এক আদিবাসী বৃদ্ধা। তাঁর দাবি, বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও ব্যবস্থা হয়নি। শেষে আদালতের নির্দেশে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিল কালনা মহকুমা প্রশাসন। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের সমুদ্রগড় পঞ্চায়েতের কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা, বছর পঁচাত্তরের শ্রীমতি মান্ডির অভিযোগ, বছর দুয়েক ধরেই একটু একটু তাঁর বাড়ির দখল নিচ্ছে পড়শি বৃদ্ধা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১৯
Share:

সম্বল বলতে বসতবাড়িটুকু। তবে সেটাও পড়শিরা দখল করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ তুললেন এক আদিবাসী বৃদ্ধা। তাঁর দাবি, বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও ব্যবস্থা হয়নি। শেষে আদালতের নির্দেশে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিল কালনা মহকুমা প্রশাসন।

Advertisement

পূর্বস্থলী ১ ব্লকের সমুদ্রগড় পঞ্চায়েতের কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা, বছর পঁচাত্তরের শ্রীমতি মান্ডির অভিযোগ, বছর দুয়েক ধরেই একটু একটু তাঁর বাড়ির দখল নিচ্ছে পড়শি বৃদ্ধা। জমি উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে একাধিকবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে তাঁর দাবি। শেষে বৃহস্পতিবার আদালতের বাইরে ওই বৃদ্ধাকে ঘোরাফেরা করতে দেখে বিনা পারিশ্রমিকে কালনা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা দায়ের করেন এক আইনজীবী। আদালতের নির্দেশে তদন্তও শুরু হয়েছে বিষয়টির।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সমুদ্রগড় মৌজায় (২৭০৮ দাগ, খতিয়ান ২১০২, জেএল ১৮০) আট শতক জমির উপরে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছে এক আদিবাসী পরিবার। বছর কুড়ি আগে স্বামী বৈদ্যনাথ মালিকের মৃত্যুর পরে শ্রীমতি মান্ডি একাই থাকেন ওই বাড়িতে। আগে খেতমজুরির কাজ করলেও বছর দশেক ধরে ভিক্ষা করেই দিন গুজরান করেন তিনি। স্থানীয় পঞ্চায়েত ওই জমিতে ইন্দিরা আবাস যোজনায় একটি বাড়িও করে দেয় ওই বৃদ্ধাকে। শ্রীমতিদেবী জানান, স্বামী বেঁচে থাকাকালীন এলাকারই শ্যামা ভট্টাচার্যের জমি চাষাবাদ করতেন। তিনিই ওই আট শতক জমি তাঁদের দিয়েছিলেন। বৃদ্ধার দাবি, দীর্ঘদিন বসবাস করলেও টাকার অভাবে কোনওদিনই জমি ঘিরতে পারেননি তাঁরা। তাঁর অভিযোগ, এরই সুযোগ নেন পড়শি কমল মণ্ডল। বছর দুয়েক ধরে ছেলে মিঠুন মণ্ডলকে নিয়ে একটু একটু করে জমি দখল করতে শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তাঁর জমিতে গোয়াল ঘর, রান্নাঘর, তাঁতঘর-সহ ৬টি ঘর তৈরি করা হয়েছে বলে শ্রীমতিদেবীর অভিযোগ। সম্প্রতি পাকা ধর তৈরির জন্য ইট ফেলা হচ্ছে বলেও তাঁর দাবি। শ্রীমতিদেবী জানান, বারবার বলার পরেও জায়গা থেকে সরেনি ওই পড়শিরা। উল্টে মারধরের হুমকি দেয় তাঁকে। এ বছরের ২১ জুলাই শ্রীমতীদেবী জমির প্রমাণপত্র দিয়ে জেলা ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস ওয়েলফেয়ার দফতরে একটি অভিযোগ জমা দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে ১২ অগস্ট ওই দফতর থেকে একটি চিঠি (মেমো নম্বর-১২০৬) পাঠিয়ে কালনার মহকুমাশাসককে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয় শ্রীমতিদেবীকেও। বৃদ্ধার দাবি, এরপরে মাস তিনেক কেটে গেলেও তাঁর বাড়িতে প্রশাসনের কেউ তদন্ত করতে যায় নি। বুধবার সমুদ্রগড় পঞ্চায়েত প্রধানকে চিঠি দিয়ে তিনি জানান, অসুস্থ হয়ে পড়ায় কিছুদিন নান্দাইয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যান তিনি। সেই সুযোগে কমল আরও একটি ঘর তৈরি করেছে তাঁর জমিতে।

Advertisement

ওই দিনই লাঠি হাতে বৃদ্ধাকে আদালত চত্বরে ঘুরে দেখে সমস্যার কথা জিজ্ঞেস করেন শুভ্র রায় নামে এক আইনজীবী। পরে নথিপত্র দেখে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে একটি মামলাও দায়ের করেন। বৃদ্ধার জমিতে ১৪৪ ধারা প্রয়োগের দাবি জানান ওই আইনজীবী। তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট তারাশঙ্কর ঘোষ বিএলআরও এবং নাদনঘাট থানাকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে একটি রিপোর্ট দিতে বলেন। সেই সঙ্গে ওই বৃদ্ধার যাতে কোনও ক্ষতি না হয় সেদিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে।

কিন্তু এতদিন প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন? সমুদ্রগড় পঞ্চায়েতের প্রধান অপর্ণা মুন্সি বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত বিষয়টি দেখা হবে।” তাঁর দাবি, বছর দেড়েক আগেও আর এক বার ওই বৃদ্ধা একই অভিযোগ জানিয়েছিলেন। সে বার পঞ্চায়েত দু’পক্ষকে নিয়ে বসেও ছিল। কিন্তু সভায় বৃদ্ধা অভিযুক্তকে ‘ছেলের মতো’ এবং তাঁর ‘কোনও অভিযোগ নেই’ বলায় বিষয়টি মিটে যায়। মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ বলেন, “বিষয়টি পুলিশকে দেখতে বলা হয়েছে।” মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, কেন নাদনঘাট থানা এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি তা দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন