বাবুলের উদ্যোগ দেখে তড়িঘড়ি ২৩ প্রকল্প ঘোষণা সরকারের

লোকসভা নির্বাচনে প্রচারে আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র স্লোগান ছিল, ‘জলসা নয়, জল চাই’। খনি এলাকার দীর্ঘ দিনের সমস্যা, জল-সঙ্কটকে নিছক নির্বাচনী প্রচারেই আটকে না রেখে মন্ত্রী হওয়ার পরে তা নিয়ে দৌড়দৌড়িও শুরু করেন তিনি। ইসিএল থেকে সিএলডব্লু--বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছেও এ নিয়ে তাঁর ঘন ঘন দরবার দেখে কপালে ভাঁজ পড়েছিল রাজ্য সরকারের।

Advertisement

সুব্রত সীট

পানাগড় শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫২
Share:

লোকসভা নির্বাচনে প্রচারে আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র স্লোগান ছিল, ‘জলসা নয়, জল চাই’।

Advertisement

খনি এলাকার দীর্ঘ দিনের সমস্যা, জল-সঙ্কটকে নিছক নির্বাচনী প্রচারেই আটকে না রেখে মন্ত্রী হওয়ার পরে তা নিয়ে দৌড়দৌড়িও শুরু করেন তিনি। ইসিএল থেকে সিএলডব্লু--বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছেও এ নিয়ে তাঁর ঘন ঘন দরবার দেখে কপালে ভাঁজ পড়েছিল রাজ্য সরকারের।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাঠে নেমেছেন দেখে এ বার চাপের ঠেলায় তাই গা ঝাড়া দিতে হচ্ছে রাজ্যকেও।

Advertisement

আজ, বুধবার বর্ধমানের পানাগড়ে মাটি উৎসবের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পানীয় জল সংক্রান্ত যে আটটি প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন, তার সব ক’টিই বাবুলের নির্বাচনী এলাকা আসানসোলের জন্য। শুধু জল নয়, আজ উৎসবের মঞ্চে বর্ধমান জেলার জন্য যে ৩৮টি প্রকল্পের শিলান্যাস হবে, তার মধ্যে ২৩টিই আসানসোস খনি এলাকার জন্য বরাদ্দ।

যা দেখে বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারের কটাক্ষ, “একেই বলে ঠেলার নাম বাবাজি!” তাঁর দাবি, নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল যে ভাবে এলাকার জল সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছেন, সাড়া পেয়েছেন মানুষের, তা সামলাতে এখন মানুষকে তোষণ শুরু করেছে রাজ্য সরকার। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের এখন এ ভাবে শিলা-পুজো করা ছাড়া আর কী-ই বা করার আছে!”

আসানসোল এলাকার জল সমস্যাটা বেশ পুরনো। কিন্তু তার সুরাহা নিয়ে এমন উঠেপড়ে লাগতে দেখা যায়নি কাউকে। বরং, ক্ষমতায় আসার পরে সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও গয়ংগচ্ছ মনোভাবই দেখিয়ে এসেছে রাজ্য। গত নভেম্বর মাসে দুর্গাপুরে কর্মিসভায় এসে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, আসানসোল, কুলটি, রানিগঞ্জ এলাকার জল-সমস্যার কথা তাঁর অজানা নয়। মঞ্চ থেকেই তিনি জনস্বাস্থ্য কারিগরি এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে সমস্যা মেটাতে ‘কাজ করার’ নির্দেশ জারি করেন। তবে ওই পর্যন্ত। এ নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট প্রকল্পের কথা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা যায়নি।

বিজেপি নেতাদের দাবি, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকেই আসানসোলকে এখন বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে শাসকদল। লোকসভা ভোটে আসানসোলে ভরাডুবির পরে এ বার রাজ্যের শাসক দলের পরীক্ষা আসানসোল পুর-ভোট। বিজেপি-র দাবি, এলাকার চেনা সমস্যা সুরাহায় এত দিনের উদাসীনতার পরে এ বার শিলান্যাসের ‘গাজর’ ঝুলিয়ে রাখতে চাইছে তৃণমূল। আর তাই মাটি উৎসবের মঞ্চ থেকে প্রতিশ্রুতির দীর্ঘ তালিকায় তুলে ধরা হয়েছে অন্তত ২৩টি প্রকল্প। যার মধ্যে রয়েছে, চিনাকুড়িতে পানীয় জলের পাইপ পাতার কাজ, মানিকেশ্বর জলপ্রকল্পের উন্নয়ন, বরাকরে জলপ্রকল্পের উন্নয়ন, আসানসোলে ভূগর্ভস্থ জলাধার গড়া এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাইপলাইন পাতার কাজ, পাণ্ডবেশ্বরে পানীয় জল সরবরাহের প্রকল্প প্রভৃতি।

অথচ, তৃণমূল পরিচালিত কুলটি পুরসভা ঠিক সময়ে কাজ না করায় বছরখানেক আগেই একশো কোটি টাকার জলপ্রকল্প ফিরিয়ে নিয়েছে কেন্দ্র। সে সময়ে অবশ্য শাসকদলের নেতাদের বিশেষ হেলদোল চোখে পড়েনি। আসানসোল পুরসভার প্রাক্তন মেয়র তথা স্থানীয় বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এই প্রকল্প ঘোষণার মধ্যে কোনও ‘বাবুল-ভীতি’ দেখছেন না। তাঁর পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, “যে খানে যা প্রয়োজন সেই মতো প্রকল্প ঘোষণা হবে, এটাই তো স্বাভাবিক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন