ভোট করালেন যুবনেতা, সরিয়ে দেওয়া হল বুথের ভোটকর্মীকে

যথাযথ ভাবে ভোট না হওয়ায় পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছিল কমিশন। কিন্তু ফের ভোট নিতে গিয়েও উৎপাত এড়ানো গেল না মঙ্গলকোটে। রাজ্যে তৃতীয় দফায় ভোট হওয়া যে ১১টি বুথে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তার অন্যতম মঙ্গলকোটের চাকদহ গ্রামের ৫৩ নম্বর বুথ। মঙ্গলবার সেখানেই এক মহিলার সঙ্গে ঢুকে ভোট দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল সোনা শেখ নামে এক যুব তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। টিভি চ্যানেলে এই ছবি প্রচারিত হতেই বুথের প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেয় কমিশন।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৪ ০৩:১৯
Share:

মঙ্গলকোটের চাকদহ গ্রামে মহিলাকে ভোট দেওয়াচ্ছেন তৃণমূল নেতা। নিজস্ব চিত্র

যথাযথ ভাবে ভোট না হওয়ায় পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছিল কমিশন। কিন্তু ফের ভোট নিতে গিয়েও উৎপাত এড়ানো গেল না মঙ্গলকোটে।

Advertisement

রাজ্যে তৃতীয় দফায় ভোট হওয়া যে ১১টি বুথে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তার অন্যতম মঙ্গলকোটের চাকদহ গ্রামের ৫৩ নম্বর বুথ। মঙ্গলবার সেখানেই এক মহিলার সঙ্গে ঢুকে ভোট দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল সোনা শেখ নামে এক যুব তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। টিভি চ্যানেলে এই ছবি প্রচারিত হতেই বুথের প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেয় কমিশন। বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “ওই বুথে এক দম্পতি এক সঙ্গে ভোট দেওয়ায় প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।” বাকি ১০টি বুথে অবশ্য শান্তিপূর্ণ ভাবেই ফের ভোট হয়েছে।

বোলপুর কেন্দ্রের অন্তর্গত মঙ্গলকোটে বহু বুথেই শাসকদলের কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে দেদার ছাপ্পা মেরেছে বলে অভিযোগ তুলেছিল বামেরা। তার মধ্যে লাখুরিয়া পঞ্চায়েতের এই বুথটিও ছিল। সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যেই সেখানে প্রায় ৮৫ শতাংশ ভোট পড়ে যায়, যা দিনের শেষে গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৯৫ শতাংশে। সিপিএম মঙ্গলকোটের অধিকাংশ বুথে পুনর্নির্বাচন দাবি করলেও কমিশন মাত্র দু’টি বুথের ক্ষেত্রে সেই নির্দেশ দেয়। যদিও কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়, বন্দুকধারী দুই বয়স্ক পুলিশকর্মীর হাতেই ছিল বুথের ভার।

Advertisement

বুথের সামনে দেখা যায়, একের পর এক মহিলাকে ভোট দিতে নিয়ে যাচ্ছেন তৃণমূল কর্মীরা। মহিলারা ভোটকর্মীদের বলছেন, “চোখে দেখিনা। এই ছেলেটি আমার হয়ে ভোট দেবে।” সেই ছেলেদের কেউ ভোটারের ‘নাতি’, কেউ ‘দেওর’ বলে পরিচয়ও দিচ্ছেন। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ এক মহিলাকে নিয়ে বুথে ঢোকেন যুব তৃণমূলের লাখুরিয়া অঞ্চল সভাপতি সোনা শেখ। এক সঙ্গে ভোট দিয়ে হাসতে-হাসতে বেরিয়েও যান।

ঘটনাটি নিয়ে হইচই শুরু হতেই টনক নড়ে নির্বাচন কমিশনের। এর পর থেকে কোনও ভোটারের সঙ্গে ‘সাহায্যকারী’ এলে জেরা করতে শুরু করেন মাইক্রো অবজার্ভার পার্থপ্রতিম দত্ত। এক ভোটকর্মীর কথায়, “জেরা করতেই সব ভোটার চোখে দেখতে শুরু করে!” তা দেখে তৃণমূলের এজেন্ট ডাবলু শেখ চেঁচামেচি জুড়ে দেন। তিনি বলেন, “এই গরমে বয়স্ক অসুস্থ মহিলাদের এ ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা ঠিক নয়। এ বার তো ওঁদের সব গুলিয়ে যাবে!”

কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার বলেন, “টিভিতে যাঁদের দেখানো হচ্ছে, তাঁরা দম্পতি। তবে অভিযোগ ওঠায় বুথের প্রিসাইডিং অফিসার শরবিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।” স্থানীয় সূত্রে অবশ্য জানা যায়, সোনা শেখের সঙ্গে যে মহিলাকে ভোট দিতে দেখা গিয়েছে, তিনি তাঁর বৌদি কচি বিবি। বুথ থেকে কিছু দূরে পুকুরপাড়ে গাছতলায় বসে সোনা অবশ্য দাবি করেন, “ও আমার বউ। আমি কোনও নিয়ম ভাঙিনি।” সিপিএমের মঙ্গলকোট পশ্চিম লোকাল সম্পাদক সৈয়দ বদরুদ্দোজার অভিযোগ, “সোনা শেখ তাঁর বৌদি ছাড়া অন্য এক মহিলারও ভোট দিয়েছেন।” তবে তৃণমূলের মঙ্গলকোট ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর মতে, “গুরুত্বহীন ঘটনা। অযথা হইচই হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন