জল পেতে দীর্ঘ অপেক্ষা। নিজস্ব চিত্র।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জলের পাইপলাইন গিয়েছে এলাকার উপর দিয়ে। কিন্তু তাঁদের সেখান থেকে জল দেওয়ার ব্যবস্থা হয়নি। তাই পাইপ থেকে এ ভাবে জল নেন জামুড়িয়ার তপসি সেতুর আশপাশের বাসিন্দারা। ছবিটি তুলেছেন ওমপ্রকাশ সিংহ।
ভোট আসার আগে লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচে তড়িঘড়ি বসানো হয়েছিল জলের পাইপলাইন। কিন্তু ভোট মিটতেই তা খারাপ হয়ে গিয়েছে। গত দু’সপ্তাহ ধরে তাঁরা নির্জলা অবস্থায় কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ কুলটির দক্ষিণ রানিতলা এলাকার বাসিন্দাদের। ক্ষুব্ধ ওই পুরবাসীর অভিযোগ, পুরসভাকে বারবার সমস্যার কথা জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না। পুর কর্তৃপক্ষ যদিও আশ্বাস দেন, রবিবারের মধ্যে সমস্যা মেটানো হবে।
কুলটির দক্ষিণ রানিতলা এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা বহু বছরের। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই অঞ্চলে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জলের পাইপলাইন থাকলেও তা থেকে নামমাত্র জল মেলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবিতে কুলটির ইস্কো কারখানা কর্তৃপক্ষ এই এলাকায় একটি পাইপলাইন বিছিয়ে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিলেন। কারখানার তরফে পর্যাপ্ত জল সরবরাহের ফলে বাসিন্দাদের কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু কারখানার ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার পরে জল সরবরাহ অনেক কমে গিয়েছে। আবার, পুরসভার তরফেও বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়নি। অথচ, জলের চাহিদা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। ফলে, টান পড়েছে জলের। প্রয়োজন মেটাতে বাসিন্দারা বহু দূর থেকে সাইকেলে করে জ্যারিকেন ঝুলিয়ে জল বয়ে আনেন। কিন্তু তাতে প্রয়োজন মেটে না। ফলে, জলের দাবিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ এই এলাকায় লেগেই থাকে।
প্রতি বছরই জলের দাবিতে ওই এলাকায় দফায়-দফায় জিটি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ বারও লোকসভা ভোটের আগে এলাকার বাসিন্দারা বেশ কয়েক বার জি টি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। কুলটি পুরসভার তরফে প্রায় সাত লক্ষ টাকা খরচ করে ওই অঞ্চলে একটি জলের পাইপলাইন বিছিয়ে দেওয়া হয়। বরাকরে পুরসভার তরফে সদ্য নির্মিত একটি জলাধারের সঙ্গে এই পাইপলাইনটি জুড়ে দেওয়া হয়। প্রাক্তন পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় এলাকার বাসিন্দাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, জলাধার থেকে এই এলাকায় নিয়মিত পর্যাপ্ত জল সরবরাহ হবে। কিন্তু, এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভোট মিটে যেতেই আবার নির্জলা হয়ে গিয়েছে এলাকা।
শুক্রবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, দু’বালতি জল পেতে হিমসিম খাচ্ছেন মানুষজন। এ নিয়ে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ এলাকার কয়েক হাজির বাসিন্দা। স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত সিংহের বক্তব্য, “প্রথম কয়েক দিন ভালই জল পড়েছিল। হঠাৎ করে এই অবস্থা হওয়ায় আমাদের বিপদ বেড়েছে।” তিনি জানান, যাঁদের বাড়িতে জলের বিকল্প ব্যবস্থা নেই, তাঁদের অনেকটা পথ উজিয়ে জল বয়ে আনতে হচ্ছে। এলাকায় ইস্কোর জলের পাইপলাইন না থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হত বলে তাঁর দাবি। আর এক বাসিন্দা মিলন চট্টরাজ বলেন, “নতুন পাইপ বিছানোই সার হল। জল তো পাচ্ছি না। সেই দূর থেকে জল বয়ে আনতে হচ্ছে আমাদের।” এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিম্নমানের জিনিসপত্র দিয়ে কাজ করার জন্যই কয়েক মাস আগে পাতা পাইপলাইনের এই হাল।
কুলটি পুরসভায় জল বিষয়ক দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন বাস্তুকার পার্থ মণ্ডল। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি এই কাজটির দায়িত্বে ছিলাম না। কার দায়িত্বে কাজটি হয়েছে, তা-ও জানি না। তবে ওখানকার সমস্যাটি জানি। প্রশাসকের নির্দেশে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা হচ্ছে।” কার্যনির্বাহী আধিকারিক মহম্মদ জালালউদ্দিনের দাবি, কোন বাস্তুকারের তত্ত্বাবধানে কাজ হয়েছে, তা জানেন না। তবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।