ক্ষীরগ্রামের সভায় স্বপন দেবনাথ ও অনুব্রত মণ্ডল।—নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভা ভোট আসতে এখনও ঢের দেরি। তবে সে নিয়ে তাঁদের ভাবনা যে শুরু হয়ে গিয়েছে, তা স্পষ্ট হল তৃণমূলের দুই নেতার কথায়।
রবিবার মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রামে দলের ব্লক সম্মেলনে তৃণমূলের দুই জেলার সভাপতি, বর্ধমানের স্বপন দেবনাথ ও বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডল কার্যত জানিয়ে দিলেন, আগামী বিধানসভা ভোটে মঙ্গলকোটে প্রার্থী হতে চলেছেন দলের ব্লক সভাপতি অপূূর্ব চৌধুরী। এমনকী, কর্মীদের উদ্দেশে তাঁকে ৫০ হাজার ভোটে জেতানোর আর্জিও জানালেন তাঁরা।
যদিও তৃণমূলের বর্ধমান জেলার পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের দলে প্রার্থীর নাম এক জনই ঘোষণা করতে পারেন। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” প্রার্থীর নাম বলায় বিতর্ক তৈরি হচ্ছে, এই আভাস পেয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সুর বদলেছেন দুই জেলা সভাপতিও। সন্ধ্যায় অনুব্রতবাবু বলেন, “আমি ঠিক ও ভাবে বলতে চাইনি।” আর স্বপনবাবুর ব্যাখ্যা, “অচলকে (অপূর্ব চৌধুরীর ডাক নাম) জেতাতে হবে বলতে দলকে জেতানোর কথাই বলা হয়েছে।”
এ দিনের সভায় অবশ্য অপূর্ববাবুকে পাশে নিয়েই অনুব্রতবাবু বলেন, “বিধানসভা ভোট আর এক বছর বাকি। আপনাদের সমানেই দাঁড়িয়ে আছে অপূর্ব। তাঁকে জেতানোর জন্য এখন থেকে বড় গ্রামে ৫০ থেকে ১০০ জনের মিছিল করুন। সরকারের উন্নয়ন নিয়ে প্রচার করুন।” স্বপনবাবুও বলেন, “গত বিধানসভায় অচল মাত্র ১২৬ ভোটে হেরে গিয়েছিলেন। গণতন্ত্রে হারের কোনও দাম নেই। এ বার অচলকে ৫০ হাজার ভোটে জেতাতে হবে। তার জন্য বুথভিত্তিক সংগঠন তৈরি করতে হবে।” ‘ভোট-যুদ্ধে’ জিততে যে কোনও রকম ‘বল প্রয়োগ’ করলে তাঁর আপত্তি থাকবে না বলে জানান মন্ত্রী। ‘বল প্রয়োগ’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন? স্বপনবাবুর দাবি, “যেখানে যে রকম বল দরকার তা প্রয়োগ করতে হবে। তা শক্তি, অর্থ বা ভালবাসাও হতে পারে।” তবে তাঁদের ঘোষণার পরেই প্রতিনিধিদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। দলে অপূর্ব-বিরোধী হিসেবে পরিচিত বর্ধমান জেলা পরিষদ সদস্য বিকাশনারায়ণ চৌধুরীর দাবি, “বিধানসভা ভোট এখনও দেড় বছর দেরি। এ ভাবে প্রার্থী ঘোষণা করে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়িয়ে দিয়ে গেলেন নেতারা। এতে তো বিজেপি-র সুবিধা হবে।”
এ দিন সম্মেলন উপলক্ষে ক্ষীরগ্রামের ধামাচি মাঠ ঘিরে রীতিমত হইচই শুরু হয়ে যায়। তিন ঘণ্টার সম্মেলনে প্রায় হাজার দু’য়েক প্রতিনিধি যোগ দেন। মাঠের একপাশে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় হাজার খানেক মোটরবাইক, শ’দুয়েক গাড়ি। ভাত, ডাল, ছ্যাঁচড়া, আলু পোস্ত ও মাছের ঝোল খেতে লাইন দিয়ে ভিড় করতে দেখা যায় কর্মীদের। কয়েক জন নেতা খাওয়ার ফাঁকে বলেও ফেলেন, ব্লক সম্মেলনে এমন আয়োজন তাঁরা আগে দেখেননি।
মঞ্চে বহু তৃণমূল নেতাকে দেখা গেলেও বর্ধমান জেলা পরিষদের সদস্য বিকাশবাবু ও আরতি দাস-সহ বেশ কয়েক জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যকে দেখা যায়নি। জেলা পরিষদে তৃণমূলের কর্মাধ্যক্ষ গোলাম জার্জিস মঞ্চেই স্বপনবাবুর কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জানান। অপূর্ব চৌধুরী অবশ্য বলেন, “সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু, তাঁরা বোধহয় অন্য কোনও কারণে আসেননি।” বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে লড়াইয়ে নামার ডাক দিয়ে স্বপনবাবু কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “পঞ্চায়েত দফতর ছেড়ে গ্রামের বারোয়ারিতে গিয়ে আড্ডা দিন। সরকারের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করুন।” তিনি আরও বলেন, “কিছু মানুষ এই মুহূর্তে এ ধার-ও ধার করছেন।” অর্থাৎ বিজেপির দিকে যে কিছু মানুষ যাচ্ছেন তা কার্যত স্বীকার করে নেন মন্ত্রী। বীরভূমের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী আবার স্পষ্টই বলেন, “বিজেপি-র বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। রাস্তায় নেমে লড়াই করতে হবে।”