ভিড় একই, পুলিশের হিসেব শুধু অন্য

বিজেপির সভায় মেরেকেটে ২২ হাজার লোক হয়েছিল বলে দাবি করেছিল জেলা পুলিশ। বড়নীলপুরের চৌরঙ্গি মাঠে ওর থেকে বেশি লোক ধরে না বলে দাবি ছিল তাদের। অথচ তৃণমূলের সভাতে পুলিশের হিসেবেই ওই মাঠে লোক ধরল প্রায় এক লাখ। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার দাবি, “বুধবারের সভায় অন্তত এক লক্ষ মানুষ এসেছিলেন। ভিড়ের চোটে জিটি রোড বাইপাসকে ওয়ান ওয়ে করে দিতে হয়েছিল।”

Advertisement

রানা সেনগুপ্ত

বধর্মান শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৬
Share:

বড়নীলপুরের চৌরঙ্গি মাঠে চলছে সভা।—নিজস্ব চিত্র।

বিজেপির সভায় মেরেকেটে ২২ হাজার লোক হয়েছিল বলে দাবি করেছিল জেলা পুলিশ। বড়নীলপুরের চৌরঙ্গি মাঠে ওর থেকে বেশি লোক ধরে না বলে দাবি ছিল তাদের। অথচ তৃণমূলের সভাতে পুলিশের হিসেবেই ওই মাঠে লোক ধরল প্রায় এক লাখ। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার দাবি, “বুধবারের সভায় অন্তত এক লক্ষ মানুষ এসেছিলেন। ভিড়ের চোটে জিটি রোড বাইপাসকে ওয়ান ওয়ে করে দিতে হয়েছিল।”

Advertisement

বিজেপির তরফে বর্ধমানে জনসভা করার ঘোষণার পর থেকেই বাধা দেওয়া, মাঠ না দেওয়ার অভিযোগ উঠছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জেলার নানা জায়গায় বিজেপি কর্মীদের মারধর, সভায় আসার পথে বাস আটকানোরও অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু সে সব অভিযোগ অস্বীকার করে ওই মাঠেই পাল্টা জনসভার ডাক দেয় তৃণমূল। শুধু বর্ধমানের লোক দিয়েই সভা ভরানোর দাবিও করেন তৃণমূলের নেতারা।

মঙ্গলবার বিজেপির সভায় উপচে পড়া ভিড়ের পরে স্বভাবতই তৃণমূলের সভার ভিড় নিয়ে কৌতুহল ছিল। মঙ্গলবার রাত থেকেই প্রায় যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে চৌরঙ্গি মাঠের অন্য প্রান্তে মঞ্চ বেঁধে সভার প্রস্তুতি নিয়ে নেয় তৃণমূল। বুধবার যে সময় সভা শুরুর কথা ছিল, সে সময় মাঠের বেশিরভাগ ফাঁকা থাকলেও পরে মাঠ ভরে যায়। তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের দাবি, “বিজেপির সভায় যত লোক হয়েছিল তার দ্বিগুনেরও বেশি মানুষ এ দিনের সভায় এসেছিলেন। লক্ষাধিক লোক হয়েছিল।” তবে বিজেপির জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) দেবীপ্রসাদ মল্লিকের অবশ্য দাবি, “আমরা রেষারেষি করে সভা করিনি। আগেই বলে দিয়েছিলাম তিন জেলা থেকে লোক আসবেন। ফলে তৃণমূলের সভায় কত লোক হল, তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। যখন ভিড়ের প্রতিযোগিতা করব, তখন এ দিকে নজর রাখব।”

Advertisement

এ দিন সভায় তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সর্বভারতীয় যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টচার্য, রচপাল সিংহ, মলয় ঘটকপ্রায় সব নেতা, মন্ত্রীই হাজির ছিলেন। শুরু থেকেই বিজেপিকে চড়া সুরে আক্রমণ করেন তাঁরা। রাজনৈতিক কুত্‌সার মোকাবিলা করতে কর্মীদের মানুষের কাছে গিয়ে রাজ্যের উন্নয়ন তুলে ধরারও পরামর্শ দেন। অভিষেক বলেন, “আগামী পুরভোটে আমরা ৯১টি পুরসভাতেই জিতে দেখিয়ে দেব মানুষ এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই আছেন। ওরা যতই ভাগ ভাগ বলুক না কেন আমরা বাংলা থেকে পালাব না। উল্টে বিজেপিই পালাবে। ২০১৬ সালে আমরা ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২৯৪টিই পাব।”

দলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অমিত শাহের ফোন নম্বর বলে সদস্য বাড়ানোর পন্থাকেও কটাক্ষ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি বাংলার উন্নয়নকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে। জবরদস্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিচু দেখাতে চাইছে, যাতে কৃষকের জমি অবাধে বিক্রি করানো যায়।” এর বিরুদ্ধে কর্মীদের রুখে দাঁড়ানোরও পরামর্শ দেন তিনি। মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “কুত্‌সার জবাব আমরা কুত্‌সা দিয়ে নয়, উন্নয়ন দিয়ে দেব।” রাজনৈতিক স্বার্থে সিবিআইকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, “কেউ গ্রেফতার হলে তাঁকে আটকে রেখে দিয়ে কালি মাখানো হচ্ছে। সঠিক বিচার হচ্ছে না।” পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির যে সুব্রত প্রার্থী হয়েছে, তার নামে ইতিমধ্যেই মানুষ বলতে শুরু করেছেন, ভাগ, সুব্রত ভাগ। পুর নির্বাচনের পরে মানুষ বলবে, ভাগ বিজেপি ভাগ।”

বিজেপির তিন জেলা থেকে লোক আনার সমালোচনা করে মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “বিজেপিকে মাঠ ভরাতে ঝাড়খণ্ডের লোক আনতে হয়েছিল। আমরা চাইলে মানুষের ঢল নামাতে পারতাম। কিন্তু শহরের কাছাকাছি ব্লকগুলো থেকে মানুষ এনেছি। গোটা জেলা থেকেও কাউকে আসতে বলিনি। তাতেই মাঠ উপচে পড়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন